নিউজ ডেস্ক : সকালে কুয়াশা আর বৃষ্টি দেখে বদলানো হয়েছিল রুট। ঠিক হল, হেলিকপ্টারে নয়, রাষ্ট্রপতি বাগডোগরা যাবেন সড়ক পথে। আর তাতেই বিপত্তি। দার্জিলিং থেকে ১৭ কিলোমিটার যাওয়ার পরে সোনাদার কাছে খাদে পড়ে গেল তাঁর কনভয়ের এসকর্ট-১ গাড়িটি। জখম পাঁচ জন।
কনভয়ে এর একটা গাড়ি পরেই ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি দাঁড়িয়ে পড়েন। উদ্ধার কাজ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে নেন নিজের হাতে। রাষ্ট্রপতির কাছে যখন খবর যায়, তিনি এগিয়ে গিয়েছেন অনেকখানি। পরে কার্শিয়াঙে গিয়ে অপেক্ষা করেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। জখম চার জনকে শিলিগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। নিজের চিফ সিকিউরিটি লিঁয়াজ অফিসারকে বিমানে নিয়ে দিল্লি ফেরেন রাষ্ট্রপতি। তাঁকে এইমসে ভর্তি করানো হয়।
এ দিন আবহাওয়া ছিল খুবই খারাপ। ভোর থেকেই ঘন কুয়াশা এবং ঝিরঝিরে বৃষ্টি। সকাল সাড়ে দশটায় রাষ্ট্রপতির কনভয় যখন দার্জিলিং থেকে রওনা দেয়, তখন কয়েক হাত দূরের জিনিস দেখা যাচ্ছিল না ভাল করে। তার উপরে পিছল পাহাড়ি রাস্তা। ফলে বিপদের আশঙ্কা থাকেই। তবু দুর্ঘটনার পরে কাঁটাছেড়ায় বসেছে প্রশাসন। দেখা যাচ্ছে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি চালাচ্ছিলেন রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল সিকিউরিটি ইউনিটের এক চালক। এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, যিনি সাধারণত পাহাড়ি পথে গাড়ি চালান না, এমন ঘন কুয়াশার পাহাড়ি পথে বাঁক নিতে গিয়েই কি বিপদে পড়লেন?
কনভয়ের নিরাপত্তায় থাকা অফিসারদের অনেকেরই বক্তব্য, এ জেলার সরকারি গাড়িচালকেরা, জেলাশাসকের পুলের গাড়িচালকেরা পাহাড়ে গাড়ি চালিয়ে অভ্যস্ত। কুয়াশা এবং কম দৃশ্যমানতার মধ্যেও কী ভাবে গতি কমিয়ে-বাড়িয়ে গাড়ি চালাতে হয়, তা তাঁরা ভালমতোই জানেন। রাজ্য পুলিশের ওই চালক সচরাচর পাহাড়ি পথে গাড়ি চালান না। সে জন্যই সম্ভবত কুয়াশার মধ্যে তিনি বাঁকের মুখে দিক ঠিক রাখতে পারেননি। বাঁ দিকের বদলে তিনি ডান দিকে চলে যান। কেউ কেউ বলছেন, গাড়ির যন্ত্রাংশেও ত্রুটি থাকা অসম্ভব নয়। গাড়িটি সবে দু’মাস আগে কেনা। সেটিও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
ভিআইপি-দের গাড়ি একই গতিতে একই দূরত্ব রেখে চলে। সোনাদার কাছে বাঁক পার হতে গিয়ে গাড়িটি রাস্তার ধারের ছোট গার্ড ওয়াল ভেঙে দেড়শো ফুট নীচে পড়ে যায়। ঝোপ-জঙ্গল ও গাছ বেশি থাকায় আটকে যায় গাড়িটি। পুলিশের বক্তব্য, একই গতিতে এবং একই দিকে ছুটে আসা গাড়িগুলি সঙ্গে সঙ্গে ব্রেক কষে। না হলে আরও বড় বিপত্তি ঘটতে পারত। চোখের সামনে গাড়িটি খাদে পড়ে যেতে দেখে মুখ্যমন্ত্রী নেমে এসে তদারকিতে নজর দেন।
পাঁচ আহতকে উদ্ধার করে প্রথমে কার্শিয়াঙের হাসপাতালে পাঠানো হয়। মুখ্যমন্ত্রীও সেখানে পৌঁছন। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে ফোন করে ঘটনাটি সম্পর্কে খোঁজখবর করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পরে কার্শিয়াং থেকে রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে মমতা আড়াইটে নাগাদ শিলিগুড়ি ঢোকেন। জখম লিঁয়াজ অফিসারকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেয় কার্শিয়াং হাসপাতাল। তিনি নেমে এলে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে প্রণব দিল্লি রওনা হন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
Be the first to comment on "রাষ্ট্রপতির কনভয় থেকে খাদে পড়ে গেল গাড়ি"