নিউজ ডেস্ক : গৃহযুদ্ধের কারণে লেবাননে পালিয়ে যাওয়া সিরিয় শরণার্থীদের বেশিরভাগই উপার্জনক্ষম নয়। শরণার্থীদের জন্য চাকরিবাকরি কিংবা চাষাবাদের ক্ষেত্রেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এখন তাদের জন্য এক অভিনব বাগান তৈরির ব্যবস্থা করেছে কয়েকটি দাতব্য সংস্থা। আর এটি কোন সাধারণ জমিতে নয়, বরং কৃত্রিমভাবে প্রস্তুত একখন্ড জমিতে হচ্ছে সেই চাষবাস, যাকে বলা হচ্ছে মাইক্রো গার্ডেন বা বনসাই বাগান। সিরিয়ার আলেপ্পো থেকে গত বছরের শেষদিকে লেবাননের কেটেরমায়া গ্রামে এসেছিলেন আয়মান আলিশ। তিনটি ছোট বাচ্চাসহ পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ছয়জন। জাতিসংঘ ও আরো কয়েকটি দাতব্য সংস্থা থেকে যে পরিমাণ খাদ্য ও অর্থসাহায্য পান, তা দিয়ে খুব কায়ক্লেশে জীবন চলে আয়মান আলিশের। কিন্তু এখন দাতব্য সংস্থার উদ্যোগে নতুন ধরনের বাগানে সীমিত আকারে চাষাবাদ করছেন তিনিও। মিস আলিশ বলছেন বাড়ির ছোট্ট এই বাগানে আমি মরিচ, তুলসী,বেগুন, টমেটো, বুনো শসা আর ছোট জাতের কিছু ঝিঙ্গা লাগিয়েছি। অনেক কিছুর বীজ বুনেছি। ফলন উঠলে সংসারের বেশ উপকার হবে, অন্তত কিছু সবজির খরচতো বাঁচবে।
কেটেরমায়া গ্রামে প্রতি চারজনে একজন শরণার্থী, ফলে এমনিতেই বেশ জনবহুল গ্রামটি। এই শরণার্থীরা যেহেতু কোন চাকরি-বাকরি, কিংবা নিজেদের জমি না থাকায় চাষাবাদের অনুমতি পান না, ফলে তারা খুবই দরিদ্র জীবনযাপন করেন। এখন তাদের জীবনমান একটু বাড়াতে, পরীক্ষামূলকভাবে মাইক্রো গার্ডেন বা বনসাই বাগান নামে এক অভিনব বাগান চালু করেছে কয়েকটি দাতব্য সংস্থা। যেখানে চাষাবাদের জন্য শরণার্থীদের দেয়া হচ্ছে বিশেষ প্রশিক্ষণ।
ইন্টারসোস নামে দাতব্য সংস্থার সমন্বয়কারী ফিরাজ আবি ঘানেম বলছেন “লেবাননে পালিয়ে আসা সিরিয়রা সরাসরি কোন জমিতে কিছু চাষ করতে পারে না। অনেক কাজ করতেই তাদের অনুমতি দেয়া হয় না। সেজন্য আমাদের এমন কিছু খুঁজে বের করতে হয়েছে, যাতে লেবানন সরকারের বেঁধে দেয়া নিয়মকানুন বজায় থাকে, আবার শরণার্থীদেরও উপকারে আসবে তা, সেটি যত ছোট আকারেই হোক না কেন। এই বাগানগুলো বিভিন্ন আকারের কাঠের বা প্লাস্টিক টবে, কিংবা আলাদাভাবে প্রস্তুত জমির খন্ড বানিয়ে তাতে চাষাবাদ করা হচ্ছে। প্রতি পরিবারের জন্য সর্বোচ্চ এক মিটার জমি বরাদ্দ করা হচ্ছে, আর তাতে চাষে হচ্ছে কেবল সংসারে রোজকার প্রয়োজনের ফসল।
আবি ঘানেম বলছেন, যুদ্ধের ভয়াবহতা বুকে নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষগুলো এই মাইক্রো গার্ডেন বা বনসাই বাগান করার মাধ্যমে নিজেদের ক্ষত কিছুটা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে। এই বাগানের আসল মূল্য মোটেই অর্থনৈতিক নয়, কারণ খুব সামান্য অর্থই সাশ্রয় হবে এতে। এর আসল মূল্যটি মানসিক, যা শরণার্থীদের আত্মমর্যাদা বাড়াতে সাহায্য করবে। বাগান করা এক ধরনের থেরাপির মত কাজ করে। যেসব নারী ও শিশু এসব বাগানে কাজ করছেন, তারা মানসিকভাবে কিছুটা সন্তুষ্টি পাবেন। ফলে একদিকে থেরাপি, আরেকদিকে সবজি ফলানো, দুটোই হচ্ছে এর মাধ্যমে-বলেন ঘানেম।
ঘানেম আরও জানিয়েছেন, গৃহযুদ্ধের কারণে যে কয়েক লক্ষ সিরিয় লেবাননে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের ইতিবাচক একটি জীবনমান দেবার জন্য নানারকম উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ কর্মসূচির লক্ষ্য হচ্ছে শরণার্থীদের বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করা। আর এই বনসাই বাগানের কর্মসূচি সফল হলে এরকম আরো কয়েক হাজার বাগান তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাগুলোর।
Be the first to comment on "লেবাননে সিরিয় শরণার্থীদের জন্য চাষাবাদের সুযোগ"