শিরোনাম

লোহাগড়ায় এসি ল্যান্ডের অনিয়ম-দুর্নীতি ॥ অর্থের বিনিময়ে হাজার একর সরকারি সম্পত্তি ভূয়া দলিলে নামজারী

নিউজ ডেস্ক :  ২৪শের নতুন বাংলাদেশ, সরকার যখন দেশ সংস্কার নিয়ে ব্যস্ত, পুলিশ ও সিভিল প্রশাসন অনেকটা টালমাটাল অবস্থা। ঠিক তখন ভূমি জালিয়াত চক্রের কাছে সরকারি জমি ভূয়া দলিলের মাধ্যমে হস্তান্তর ও লুটপাটে মহাব্যস্ত লোহাগড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও তার অফিস সহকারী এবং জালিয়াত চক্র। ২৪শের ঝড় যেন তাদের জন্য আর্শিবাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। ঝড়ে তারা কুড়িয়েছেন শুধুই কাড়ি কাড়ি নয়, বস্তা ভরা টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর নড়াইল মহাকুমার জমিদার কালি শংকর রায় ভারতবর্ষে চলে যাবার পরবর্তি ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্থানের হাজার হাজার হিন্দু পরিবার বাড়িঘর ও জায়গা-জমি ফেলে রাতের অন্ধকারে ভারতে পালিয়ে যায়। তাদের ফেলে যাওয়া সম্পত্তি (ভূমি) বাংলাদেশ সরকার অর্পিত সম্পত্তি ১/১ খাস খতিয়ানভূক্ত করে সরকারের অনুকুলে রেখে হাল জরিপ (আরএস) চুড়ান্ত করেন। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হলেও কোন এসিল্যান্ড সরকারি জমি ব্যাক্তি মালিকের নামে ভূয়া দলিলের মাধ্যমে নামজারী করে হস্তান্তর করেন নাই। ২৪ শের ২য় স্বাধীনতা পরবর্তি সময়ে অর্ন্তবর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে অনেকটা মরিয়া হয়ে উঠেছেন এসিল্যান্ড ও তার দুইজন অফিস সহকারী। এসিল্যান্ড মিঠুন মৈত্র ও কানুনগো মো: সিরাজুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। অপরজন নড়াইল সদরের সহকারী সজিব হাওলাদার। দুইজন হিন্দু সম্প্রদায় এবং একই সাথে দুইজন গোপালগঞ্জ জেলার বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে অত্যান্ত গোপনীয়তা ও বিশ্বস্থতার সাথে কাজগুলো সম্পন্ন করে আসছেন। এসিল্যান্ডসহ এই তিনজনের সমন্ময়ে উপজেলায় ভূমি জালিয়াত চক্রের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। স্বাভাবিক নামজারী ও যে কোন কাজে টাকা না দিলে ফাইল ফেলে রাখা হয় মাসের পর মাস। ভূক্তভোগীদের অভিযোগ নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সিন্ডিকেটের হাতে পড়লেই তবে সচল হয় ফাইল।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, উপজেলার লক্ষীপাশা ইউনিয়নের ১০৭ নং ঝিকড়া মৌজায় স্থিত আর এস ১৬৩৩ নং দাগের ১৯ শতক জমি খাস ১/১ খতিয়ানভূক্ত। ঝিকড়া গ্রামের মৃত ছাদেমান শেখ’র ছেলে সোহেল রানা গং লক্ষীপাশা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে বিগত ৯ নভেম্বর ১৯৮৪ সালের রেজিস্ট্রিকৃত ৩৯১২ নং সাব কবলা দলিল মুলে গত বছরের ৯ জুলাই নামজারীর আবেদন করেন। যার কেস নং ২৭৮, আবেদন নং ৬০৫৯০৩১। আবেদনে সংযুক্ত দলিলটি যাচাইয়ের নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হয়নি। কোন প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়া একই বছরের ৩০ অক্টোবর আবেদনটি মঞ্জুর করে ১২৬৭ নং নামজারী খতিয়ানভূক্ত করেন। নড়াইল জেলা রেজিস্টারের রেকর্ড অফিসে খোজ নিয়ে জানা যায়, নালিশী ৩৯১২ নং দলিলটি লাহুড়িয়া ইউনিয়নের কল্যাণপুর মৌজায় স্থিত ভিন্ন দাতা-গ্রহীতার নামে লিপিবদ্ধ। অনুরুপ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরিকৃত দলিলমূলে কাশিপুর ইউনিয়নের সারুলিয়া গ্রামের আব্দুল মান্নান মোল্যার স্ত্রী হাসিনা বেগম গং গত বছরের ৬ অক্টোবর ৬৩৬৭১৬২ নং আবেদনের কেস নং ২৪৯৬/২৪-২৫ অর্থ বছর। আবেদনে সংযুক্ত দলিল নং ৪৯৬, তারিখ ১৯/১২/১৯৬২। ১০২ নং সারুলিয়া মৌজায় স্থিত ১/১ সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত অন্তত ২০টি দাগের ৬৪১ শতক এবং একই মৌজা ও খতিয়ানে একই আবেদনকারী গং আবেদন নং ৬৪৩২৩৬৯, কেস নং ৩১৪৯/২৪-২৫, আবেদনে সংযুক্ত দলিল নং ৪৮,তারিখ ১৮/০২/১৯৬৫ ইং, ৫টি দাগের ২৮৩ শতক, মঞ্জুরকৃত নামজারী খতিয়ান নং ২৫-৮৪৪ এবং আবেদন নং ৬৪২৯২৪৯, কেস নং ৩০৬৮/২৪-২৫, আবেদনে সংযুক্ত দলিল নং ৪৮, তারিখ ১৮/০২/১৯৬৫ইং, ৫টি দাগে ১১৮ শতক জমির নামজারী খতিয়ান নং ২৫-৮৪৬ গত ইং ০৫/০২/২০২৫ ইং তারিখে মঞ্জুর করেছেন। দলিল দুইটি যাচাইয়ের জন্য নড়াইল জেলা রেজিস্টারের রেকর্ড অফিসে খোজ নিয়ে জানা যায়, নালিশী দলিলের দাতা-গ্রহীতা ভিন্ন। যেটা উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের পাচাইল মৌজায় স্থিত ২২ শতক জমি। খোজ নিয়ে আরও জানা যায়, উপজেলার কচুবাড়িয়া, কাশিপুর, রামপুর ও লক্ষীপাশাসহ বিভিন্ন মৌজায় স্থিত ১/১ সরকারি খতিয়ানভূক্ত শত শত একর খাসজমি মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে অন্তত ৩০-৪০টি নামজারী মঞ্জুর করেছেন যার বাজার মূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকা। নিরোপেক্ষ তদন্ত করলে এসিল্যান্ড ও তার সহযোগী এবং জালিয়াত চক্রের থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন সচেতন মহল। ১/১ খতিয়ান থেকে প্রদানকৃত জমির নামজারী বাতিল করে অসহায়-ভূমিহীনদের মাঝে বন্দেবস্ত দিয়ে তাদের মাথা গোজার ঠাই এবং অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের আশু হস্থক্ষেপ চেয়ে ক্ষোভে ফুসে ওঠেন স্থানীয়রা।
উল্লেখ্য: আবেদনে সংযুক্ত ৪৮ নং দলিলটি ১৯৬৫ সালে গ্রহীতা গংদের নামে রেজিষ্ট্রি হলেও তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এন আই ডি) কার্ড পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অধিকাংশ জমি গ্রহীতার জন্ম ১৯৬৫ সালের অনেক পরে।
ভূয়া দলিলে নামজারীর বিষয়ে কাশিপুর ইউনিয়ন ভূমি সহাকারী কর্মকর্তা মো: আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, তিনি উক্ত নামজারী আবেদনে নেগেটিভ প্রতিবেদন প্রদান করেছেন, এসিল্যান্ড স্যার নামজারী মঞ্জুর করলে আমি কি করবো। লক্ষীপাশা ইউনিয়ন ভূমি সহাকারী কর্মকর্তা শেখ মো: আব্দুল মোতালেব বলেন, ভূল হয়েছে, মিসকেস করে সরকারের অনুকুলে ফিরিয়ে আনা হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিঠুন মৈত্র’র সাক্ষাতের জন্য একাধিকবার অফিসে গেলেও তাকে অফিসে পাওয়া যায় নাই।

Print Friendly, PDF & Email
basic-bank

Be the first to comment on "লোহাগড়ায় এসি ল্যান্ডের অনিয়ম-দুর্নীতি ॥ অর্থের বিনিময়ে হাজার একর সরকারি সম্পত্তি ভূয়া দলিলে নামজারী"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*