নিউজ ডেস্ক॥ নড়াইলের লোহাগড়ায় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠা টিআরের সেই ২৬ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর গত শুক্রবার (২৮ জুলাই) থেকে প্রকল্পগুলোতে কাজ হচ্ছে। তবে নামমাত্র কাজ হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে।
ইতনা গ্রামের এস এম মামুনুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি এসব প্রকল্পের কাজ আনেন। কিন্তু অধিকাংশ প্রকল্পের কোনো কাজ না করে তিনি এই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় (পিআইও) সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা সাংসদ রোকসানা ইয়াসমিন ছুটির অনুকূলে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের দ্বিতীয় পর্যায়ে টিআরের ২৬টি প্রকল্পে ১৪ লাখ ৪৯ হাজার ৭৪১ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই ২৬ প্রকল্পের মধ্যে ইতনা গ্রাম এলাকায় ২০টি প্রকল্প দেওয়া হয়। কাজ শেষের মেয়াদ ছিল গত ৩০ জুন। ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে দেখিয়ে সব প্রকল্পের টাকা উত্তলোন করা হয়েছে।
গত ২৫-২৬ জুলাই মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, অধিকাংশ প্রকল্পে কোনো কাজ হয়নি। একই জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন নামে প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। প্রকল্পে যাঁদের নাম-পরিচয় ব্যবহার করা হয়েছে, তাঁরা এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। এসব প্রকল্পের খবর জানার পর প্রকল্প এলাকার লোকজন বিস্ময় প্রকাশ করেন। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় কাজ না করেই অর্থ আত্মসাৎ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে প্রশাসনের টনক নড়ে।
সোমবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইতনা চরপাড়া সৈয়দ আলীর বাড়ি হতে মহিদের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পে শ্রমিকেরা কাজ করছেন।
ইতনা ডাকঘরের পাশে রাস্তা সংস্কারের চারটি প্রকল্প ছিল। তার একটিতে কিছু কাজ আগেই হয়েছিল। পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা গৃহবধূ নাসরিন ও হেনা বেগম জানান, গত শুক্রবার তিনটি রাস্তায় শ্রমিকেরা কিছু মাটি কেটেছেন। এর আগে সরকারি টাকায় কখনো এখানে কাজ হয়নি।
স্থানীয় লোকজন জানান, পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর যেসব প্রকল্পে কোনো কাজ হয়নি, সেইসব প্রকল্পে কাজ শুরু হয়েছে। তবে কাজ হচ্ছে নামমাত্র। প্রতিটি প্রকল্পে বরাদ্দের ৫৬ হাজার টাকার মধ্যে ১০-২০ হাজার টাকার কাজ হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন প্রশ্ন তোলেন, এ ব্যাপারে প্রশাসন নিরব কেন ?
কাজের মান নিয়ে মন্তব্য করতে বললে ইতনা ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান টগর, প্রকল্প এলাকায় দাঁড়িয়ে বলেন, বর্তমানে যে কাজ হয়েছে তাতে পাকা রাস্তা হতে ইতনা ডাকঘর পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে ৮-১০ হাজার টাকা এবং ইতনা রুস্তম মোল্লার বাড়ি হতে পাকা রাস্তা পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। অথচ প্রকল্প দুটিতে বরাদ্দ ৫৬ হাজার ৫’শ ও ৫৭ হাজার ২’শ ৪১ টাকা।
কথিত আছে, প্রতিটি প্রকল্পের জন্য পিআইও কার্যালয়ে শতকরা ১১ ভাগ টাকা উৎকোচ দিতে হয়। এর থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সহ আরো অনেক জায়গায় ভাগ হয়। সে জন্যই কাজ নিম্মমানের হয়।
এ বিষয়ে পিআইও সৈয়দ আজিমউদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে পরে কথা বলব বলে ফোনটি কেটে দেন।
এসব প্রসঙ্গে ইউএনও মনিরা পারভীন বলেন, আমার একার পক্ষে এত গুলো প্রকল্প একসঙ্গে দেখা সম্ভব হয় না। এখন দেখব, পুরো কাজ আদায় করব। পিআইও অফিস টাকা নেয় এটা আমার জানা নেই। অভিযোগ উঠেছে, দেখব। আর আমি টাকা না নিলে কে কি বলে গেল তা কোনো বিষয় না।
লোহাগড়ায় টিআরের সেই ২৬ প্রকল্পের কাজ নামমাত্র শুরু! পিআইও ইউএনওর বিরুদ্ধে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ

Be the first to comment on "লোহাগড়ায় টিআরের সেই ২৬ প্রকল্পের কাজ নামমাত্র শুরু! পিআইও ইউএনওর বিরুদ্ধে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ"