নিউজ ডেস্ক ॥ উপজেলার নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের বাড়িভাঙ্গা খালের মাছ ধরার অবৈধ বাঁধ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এম এম আরাফাত হোসেনের নেতৃত্বে বুধবার (১১অক্টোবর) দুপুর ১২ টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ৩টি আড়াআড়ি বাঁধ উচ্ছেদ করা হয়েছে । এ সময় বাড়ি ভাঙ্গা খালের ওপর অবস্থিত স্লুইচ গেইটের ৪টি স্লিপার খুলে দেন ভ্রাম্মমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট।
ভ্রাম্মমান আদালত ও স্থানীয় লোকজন সুত্রে জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলার সর্ববৃহত ইছামতি বিলের সাথে নবগঙ্গা নদীর সংযোগ তিন কিলোমিটার বাড়িভাঙ্গা খাল। দেশীয় মাছের উৎস্য ও প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে খ্যাত খালটি স্থানীয় কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে ডিমওয়ালা ও ছোট আকৃতির দেশীয় মাছ বছরকে বছর নিধন করে আসছিলেন। যার কারনে দেশীয় পুটি, স্বরপুটি, শোল, গজাল, টাকি, কৈ, শিং, পাবদা, ফলই, গুইতে, বাইন, টেংরা, কাকলে, রয়না, বেলে, শাইল বাইন, টেপা, কড়াবাইনসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে।
এলাকার শতাধীক মৎস্যজীবী বাড়িভাঙ্গা খালটি সারা বছর উন্মুক্ত রাখার দাবিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)র নেতৃত্বে বুধবার ১১অক্টোবর বাঁধগুলি অপসারণ করা হয়।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন’র নেতৃত্বে ওই খালের বিভিন্ন অংশে অবৈধ ভাবে মাছ ধরার আড়াআড়ি বাঁধ উচ্ছেদ করা হলেও কতিপয় স্বার্থান্বেষী লোকজন আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফের বাঁধ দিয়ে অবৈধ ভাবে মৎস নিধঁন করে আসছিলেন।
স্থানীয় কলাগাছি ও কাঞ্চনপুর গ্রামের মৎসজীবী নিখিল, শ্যামল, সমার, সুব্রত, গোবিন্দ,রাধাকান্ত ও প্রল্লাত কুমার দাসসহ প্রায় ৫০-৬০ জন জেলে অভিযোগ করে বলেন, প্রভাশালী স্থানীয় নোয়াগ্রাম ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান নূরুজ্জামান নূরনবী, বর্তমান চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম কালু, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জিয়াউর রহমান,লাবলু মোল্যা ও নাজির মোল্যা গং খালটি নিয়ন্ত্রন করে বছরে প্রায় অর্ধকোটি টাকা বিক্রি করে থাকেন। খালটি নোয়াগ্রাম ইউনিয়নে অবস্থিত হলেও গত বছরের ন্যায় এবছরও নলদী ইউনিয়নের সুভাষ, ত্রিনাথ ও মিন্টু সরকার অ-ঘোষিত নিলামে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে কিনেছেন। বিলের মাছ গুলি নবগঙ্গা নদীতে নেমে আসলে উপজেলার সকল জেলেরা বছর জুড়ে উপকৃত হবে। এই বাঁধের ফলে জেলার সমগ্র জেলে পরিবার চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে আসছে। তারা আরও অভিযোগ করে বলেন,উপজেলা মৎস বিভাগের উদাসীনতায় মাছ ধরার এহেন অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে আসলেও অদৃশ্য কারনে পদক্ষেপ নেয় না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। খালের অবৈধ বাঁধ উচ্ছেদ করায় স্থানীয় জেলে পরিবার স্বস্থি প্রকাশ করেছেন। দেশীয় মাছের প্রধান প্রজনন ক্ষেত্র বলে পরিচিত ইছামতি বিল। প্রবাহমান বাড়িভাঙ্গা খালটি সারা বছর উন্মুক্ত থাকলে ডিমওয়ালা মাছ নদী থেকে বিলে গিয়ে ডিম ছেড়ে আশ্বিন কার্ত্তিক মাসে মাছগুলি নদীতে নেমে আসেন। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা বছর জুড়ে নদী থেকে মাছ আহরন করে জীবীকা নির্বাহ করে থাকেন।
সাবেক চেয়ারম্যান নূরনবী ও বর্তমান চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম কালুসহ অভিযুক্তরা তাদের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কোন মহল তাদের নাম ব্যাবহার করে স্বার্থ সিদ্ধির চেষ্টা করে থাকতে পারে ! তাদের কেহ এই অবৈধ কর্মকান্ডের সহিত জড়িত নয়। ইছামতি বিল ও খালের মৎস সম্পদ স্থানীয় মৎসজীবীরাই দেখভাল ও আহরন করে জীবীকা নির্বাহ করে থাকেন।
লোহাগড়ায় বাড়ীভাঙ্গা খালের অবৈধ বাঁধ ফের উচ্ছেদ !

Be the first to comment on "লোহাগড়ায় বাড়ীভাঙ্গা খালের অবৈধ বাঁধ ফের উচ্ছেদ !"