নিউজ ডেস্ক ॥ নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার বোরো আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ছেড়ে গেছে। মাঠের পর মাঠ জুড়ে বোরো ধানের হিল্লোল। ইতোমধ্যে আগাম জাতের ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে উপজেলায় পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। এখন একমাত্র ভয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এ থেকে রক্ষা পাওয়া গেলে কৃষকরা কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে পারবে। তবে ‘ফণীর’ কারনে ধান মাটিতে শুয়ে পড়লেও বড় বিপদ কেটে যাওয়ায় কৃষকরা মনের সুখে ধান কাটতে শুরু করেছেন।
ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে তবে দাম নিয়ে শঙ্কিত কৃষকরা। ধানের উপযুক্ত দাম না পেলে আগামীতে ধান চাষ ব্যাহত হবে বলে জানান কৃষক। সরকার ২৬ টাকা কেজিতে ধানের বিক্রয় মুল্য বেঁধে দিলেও এ ধান প্রকৃত কৃষকরা খাদ্য গুদামে দিতে পারবে কি না এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ১টি পৌরসভাসহ ১২ টি ইউনিয়নে ৮ হাজার ৩’শ ৯১ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ হাজার ৮’শ ৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ বেশি হয়েছে। গত মৌসুমে বোরো ও আউশ ধানের ফলন বিপর্যয়ে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবারে এলাকায় অনেক বেশী জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। আর ফলন দেখেও মনে হচ্ছে, বাম্পার ফলন হবে। কৃষকদের আশংকা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়। তা থেকে রক্ষা পেলে কৃষকরা সোনালী ধান ঘরে তুলতে পারবে।
উপজেলার মশাঘুনী, মল্লিকপুর ইউনিয়নের নালিয়ার বিল, ইতনার বিল, লক্ষীপাশার আমাদা, লাহুড়িয়া, শালনগর, নলদী, মিঠাপুর, জয়পুর, আমডাঙ্গা, আড়িয়ারা, চাচই, কুমড়ি, দিঘলিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর বীজ সংকট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে ধানের চাষ এবারের চেয়ে প্রায় অর্ধেক উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ জমিতে ধান চাষ করেছে।
পৌর এলাকার লক্ষীপাশা গ্রামের আশরাফুল আলম পিকুল ও নুর ইসলাম, রাজুপুর গ্রামের সাইদুল ইসলাম, মশাঘুনী গ্রামের আলাউদ্দিন বিশ্বাস লিখন,গোলাম মোরশেদ, চরমল্লিকপুর গ্রামের ইকরাম, ইনামুল ও লিফাজ, খলিশাখালি গ্রামের শামীমসহ অনেক কৃষকের সাথে আলাপকালে তারা জানান, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এ বছর বোরো ধানের আবাদ ভালো হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ধানের বাম্পার ফলন হবে। লক্ষীপাশা গ্রামের আশরাফুল আলম পিকুল ৭ একর জমিতে বাঁশমতি এবং মশাঘুনী গ্রামের আলাউদ্দিন বিশ্বাস লিখন ৩ একর জমিতে উন্নত জাতের ২৮ ধানের আবাদ করেছেন।
কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, সরকারী ভাবে ধান সংগ্রহ করা হলেও এ ধান কৃষকরা খাদ্য গুদামে দিতে পারে না। সরকারী দলের ছত্রছায়ায় একটি মহল কাগজ কলমে কৃষক সেজে খাদ্য গুদামে ধান সরবরাহ করে থাকে। কৃষকরা ধান দিতে চাইলে তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করা হয় বলে তাদের অভিযোগ।
লোহাগড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্বাস বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর উপজেলায় লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ধান চাষ হয়েছে। ফলনও হয়েছে আশাতীত। দুর্যোগ এড়াতে তিনি ধানের ৮০ ভাগ পেকে গেলেই কৃষকদের ধান কেটে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
Be the first to comment on "লোহাগড়ায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন’ ন্যায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কিত কৃষক’"