নিউজ ডেস্ক: উপজেলার লোহাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রতন শেখ’র বিরুদ্ধে ভিজিডি কার্ড তৈরি করে চাল উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগের ভিত্তিত্বে অনুসন্ধানে জানা গেছে, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রানালয়ের ২০২১-২২ অর্থ বছরে ‘ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট’ (ভিজিডি) কার্ডের তালিকায় লোহাগড়া ইউনিয়নের কামঠানা গ্রামের দিপ্তি বিশ্বাস, যার ভিজিডি কার্ড নম্বর ০০০০৫৩, জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর ১৫০৩৬৯০৫৬০। ভিজিডি কার্ডে স্বামী হিসেবে একই গ্রামের অবিবাহিত নারায়ন শিকদার (ছদ্মনাম) দেখানো হয়েছে। দিপ্তি বিশ্বাসের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায় নাই। পাশের বাড়ির পলাশ শিকদারের স্ত্রী স্বরসতী ও গৌতম শিকদারের স্ত্রী শেফালী শিকদার বলেন, ‘দিপ্তি বিশ্বাস প্রায় তিন বছর আগে ভারতে চলে গেছেন। ভারতে যাওয়ার পর সেখানে তার বিয়ে হয়েছে। দিপ্তি এখন ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। বাংলাদেশে আর ফিরে আসে নাই। নারায়ন শিকদার বলেন, দিপ্তি দিদি আমার বয়সে অনেক বড়। তিনি বিয়ে করেছেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, এখনো তার বিয়ের বয়স হয় নাই, বয়স হলে বিয়েতো করতেই হবে। ভিজিডি কার্ডে দিপ্তির স্বামীর স্থলে তার নাম দেখে হতবাক হয়ে তিনি বলেন, এই প্রথম তিনি বিষয়টি জানলেন।
অপরদিকে একই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মফিজ শেখ’র স্ত্রী আইরিন বেগম যার কার্ড নম্বর ০০০০৩৯, জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর ৫০৮৬৮১৪২৬৫ ও আজাদ শেখ’র স্ত্রী শিফালী বেগম যার কার্ড নম্বর ০০০০৪২, জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর ৯১৩৬৭৪২৪৮৪। আইরিন বেগম বলেন, লোহাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার রতন শেখ তার মামা। অনেক দিন আগে রতন মামা ছবি ও ভোটার কার্ড নিয়েছিলেন, শুনেছেন রতন মামা তার নামে চাউলের কার্ড করেছেন। কিন্তু কোনদিন তিনি চাল ওঠান নাই, কার্ডের চাল রতন মামা ওঠায় খায় না কারে দেয়-তা তিনি জানেন না।
শিফালী বেগম বলেন, চালের কার্ড পাওয়ার পর দুই মাস তিনি চাল তুলেছেন। এরপর তার স্বামী অসুস্থ্য হলে চিকিৎসার জন্য রতন মেম্বারের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছিলেন। সেই ধারের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় রতন মেম্বার তার চালের কার্ড নিয়ে গেছেন। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে আরও বলেন, তার স্বামী অসুস্থ্য, বয়স হয়েছে, কোন কাজ করতে পারে না। এখন শেষ বয়সে খুব অসহায় হয়ে পড়েছি। এই কার্ডের চালটা যদি ফের পেতাম তাহলে একটু বাচঁতে পারতাম-আকুতি শিফালী বেগমের।
একজন জনপ্রতিনিধি নাম না বলার শর্তে বলেন, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের অধিকাংশ মেম্বররা ১ থেকে ২টি করে ভিজিডি কার্ড ভূয়া নামে তৈরি করে নিজেদের তত্বাবধানে রেখে প্রতি মাসে চাল উত্তোলন করে তা বিক্রির মাধ্যমে সমুদয় টাকা আত্মসাত করে থাকে।
উল্লেখ্য: লোহাগড়া ইউনিয়নে ২০২১-২২ অর্থ বছরে ১০৭টি ভিজিডি কার্ড বিতরন করা হয়েছে। এই অর্থ বছরের চাল গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারী বিতরন শুরু হয় । চলতি বছরের আগষ্ট মাস পর্যন্ত সর্বমোট ২০ মাস চাল বিতরন করা হয়েছে। স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘মাথা কার্ড’। প্রতি মাথা কার্ডে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল বিতরন করা হয়। তিনটি কার্ডের বিপরিতে ২০ মাসে ১৭’শ ৪০ কেজি চাল তুলে আত্মসাত করা হয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
লোহাগড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমিন বেগম বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আজগর আলী বলেন, বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ঠ চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Be the first to comment on "লোহাগড়ায় ভিজিডি কার্ডের ১৭৪০ কেজি চাল আত্মসাত"