নিউজ ডেস্ক ॥ নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারের বিরুদ্ধে ভিজিডির চাল আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের তালিকাভূক্ত ক্রমিকের ১৫৩, ১৭০, ১৭৩, ১৭৪ ও ৮৪ নংসহ ৫৭টি কার্ডের বিপরীতে প্রতি মাসে বরাদ্দকৃত ১৭১০ কেজি করে ১৪ মাসে প্রায় ২৪ মেট্রিকটন চাল বিভিন্ন ভুয়া নামে তুলে আত্মসাত করেছেন। বিগত ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এ ভিজিডি চাল বিতরণের কার্যক্রম শুরু হয়।
অভিযোগে জানা গেছে, কাশিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান ও ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বর রবিউল ইসলাম পরস্পর যোগসাজসে ভূয়া নাম ঠিকানা ও একই নাম একাধিকবার ব্যবহার করে ওই ইউনিয়নের ৫৭টি কার্ডের বিপরীতে প্রতি মাসে ১৭১০ কেজি করে ১৪ মাসে প্রায় ২৪ মেট্রিকটন ভিজিডি চাল আত্মসাত করেছেন। তালিকায় নাম আছে অথচ চাল থেকে বঞ্চিত ঈশানগাতী গ্রামের খিজার শেখের মেয়ে জলি বেগমের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৩ বছর আগে উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের চাঁচই গ্রামের হাবিবুর রহমানের সাথে বিয়ে হয়েছে। তার ৮ ও ১০ বছরের দুটি সন্তান রয়েছে। জলি স্বামী-সন্তান নিয়ে লোহাগড়ার পোদ্দার পাড়ায় থাকেন। তার নামে কাশিপুর ইউনিয়নে ভিজিডির তালিকায় নাম দিয়ে চাল আত্মসাত করা হয়েছে। জলি বেগম আরও বলেন, তার ওয়ার্ডের মেম্বর রবিউল ইসলামের কাছ থেকে কয়েক দফায় ভিজিডির চালের প্রতি ৩০ কেজি বস্তার ৯ বস্তা চাল ৫৪’শ টাকায় কিনেছেন। করোনা শুরুর আগে তিনি প্রতি বস্তা চাল ৬’শ টাকা করে ১৮’শ টাকায় তিন বস্তা চাল কিনেছিলেন। ঈশানগাতী গ্রামের মিজানুর রহমানের মেয়ে আদরী খানম জানান, ৪ বছর আগে মল্লিকপুর ইউনিয়নের আলমগীর হোসেনের সাথে তার বিয়ে হয়েছে। তার নামে ভিজিডির চালের কার্ড আছে তা তিনি জানেননা এবং কোন চালও তিনি উত্তোলন করেন নাই। বসুপটি গ্রামের মুকুল হোসেনের স্ত্রী আন্না বেগম বলেন, আমার নামে ভিজিডি চালের কার্ড হইছে, এই প্রথম আপনার কাছ থেকে শুনলাম। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: মতিয়ার রহমান ও মেম্বর রবিউল ইসলাম পরস্পর যোগসাজসে ভূয়া ও একই নাম একাধিকবার ব্যবহার করে মোট ৫৭ জনের নামে কার্ডের বিপরীতে প্রায় ২৪ মেট্রিকটন চাল আত্মসাত করেছেন। এ বিষয়ে অভিযোগ ওঠার পর সরেজমিনে খবর নিলে এলাকার মানুষজনদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। চাল আত্মসাতের ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান সংশ্লিষ্ট গ্রাম পুলিশ দিয়ে ওই উপকার ভোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের ডেকে কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদে এনে কার্ড হারিয়েছে মর্মে থানায় জিডি করিয়ে উল্লেখিত চারজনকে গত রোববার (৩ মে) কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিগত ১৪ মাসের ৫৬ বস্তা চাল দিয়েছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বর রবিউল ইসলামের মুঠোফোন (০১৭০৫৩৩৭৫৯৬) একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ না করে কেটে দেন।
কাশিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ভিজিডি তালিকা প্রণয়ন করে উক্ত কার্ড সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়ে থাকে। কেউ কার্ড না পেলে আমার কাছে জানালে তার কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়। ইতোমধ্যে চারজনের কার্ড হারিয়ে ফেলার সংবাদ পাওয়ার পর তাদের দিয়ে থানায় ভিজিডি কার্ড হারিয়েছে মর্মে জিডি করে তাদের পাওনা ১৪ মাসে ৪ জনের ৫৬ বস্তা চাল প্রদান করা হয়েছে। এখানে কোন অনিয়ম হয়নি।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মৌসুমী রাণী মজুমদার বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দোষিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুকুল কৃমার মৈত্র বলেন, করোনাকালে এহেন ঘটনাটি দুঃখজনক। এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এলাকাবাসির দাবী, ভিজিডি কার্ড নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের লুকোচুরির নিরোপেক্ষ তদন্ত করা হলে ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে ভিজিডি কার্ডে চাল আত্মসাতের ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে আসবে। তারা একই সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি করেছেন।
Be the first to comment on "লোহাগড়ায় ২৪ মেট্রিকটন ভিজিডির চাল আত্মসাত"