নিউজ ডেস্ক : ভোটের প্রচারে তিনি বলেছিলেন, মেক্সিকোর সঙ্গে আমেরিকার সীমান্তে প্রাচীর তুলবেন৷ আর তার খরচ জোগাতে হবে মেক্সিকোর মানুষকেই৷ ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেই ভাবনার পরিণতি জানা যাবে ভবিষ্যতে৷ তবে এখনই একটি মস্ত পাঁচিল তুলে দিয়েছেন তিনি৷ সেটা তাঁর দেশ থেকে অনেক দূরে, ইউরোপের একটি গ্রামে৷ জায়গাটির নাম ব্যালমেডি৷ দেশটির নাম স্কটল্যান্ড৷ সে দেশের উত্তর-পূর্বে এই গ্রামের কোল ঘেঁষে রয়েছে সমুদ্র৷ আদিগন্ত বালুরাশি, মাঝেমধ্যে বালির ঢিবি, এলোমেলো ঝোপঝাড়৷ চমত্কার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য৷ ধনকুবের ট্রাম্পের সাধ হয় ওখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গল্ফ ময়দান তৈরি করবেন৷ যেমন ভাবা, তেমনই কাজ৷ প্রস্তুতি শুরু করে দেন তিনি৷ কথা বলেন স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে৷ ২০০৮-এ ট্রাম্পকে তাঁর প্রকল্পের জন্য সবুজ সঙ্কেত দেয় প্রশাসন৷ সমুদ্রের ধারে অনেকটা এলাকা ফাঁকা, ইতিউতি বসতি৷ ছোটখাট বাড়ি, খামার, অন্যান্য নির্মাণ৷ এ সব থাকলে তো বিশ্বের সবচেয়ে বড় গল্ফ ময়দান তৈরি করা যায় না! তাই ট্রাম্প সেখানকার বাসিন্দাদের কার্যত উচ্ছেদ করতে চেয়েছিলেন, এমনই অভিযোগ৷ তাঁদের ওই এলাকা থেকে সরে যেতে বলেছিলেন৷ কেউ কেউ অন্যত্র গেলেও সেখানেই ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকেন কিছু বাসিন্দা৷ তাদের শায়েস্তা করতেই পাঁচিল তৈরি করিয়েছেন ট্রাম্প, গত কয়েক বছর ধরে৷ ১৫ ফুট উঁচু পাঁচিল তোলা হয়েছে কোনও কোনও অংশে৷ ট্রাম্পের নিজের এলাকায় পাঁচিল, তাই কারও কিছু বলার নেই৷ অভিযোগ, এ জন্য ট্রাম্পের সাঙ্গপাঙ্গরা যথেষ্ট উত্পাত করেছেন বাসিন্দাদের উপর।
শোনা যাক ব্যালমেডির বাসিন্দা ডেভিড ও মইরা মিল্নের অভিজ্ঞতার কথা৷ একদিন তাঁরা বাড়িতে ছিলেন না৷ ফিরে দেখেন বাড়ি ঘিরে পাঁচিল তোলার তোড়জোড় চলছে৷ পানি ও বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেয়া হয়েছে৷ তার পর ইমেলে সাড়ে তিন হাজার ডলারের বিলও পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে মিল্নে দম্পতির কাছে৷ একেবারে মেক্সিকোর ধাঁচে পাঁচিল তোলার খরচ দাবি! এর সঙ্গে আইনি ঝামেলা, ট্রাম্পের আইনজীবীর দাবি মিল্নেদের গ্যারাজের একাংশ নাকি আদতে তাঁদের জমিতে৷
আদতে স্কটল্যান্ডের সঙ্গে ট্রাম্পের নাড়ির যোগ৷ ১৯৩০ -এ তাঁর মা স্কটল্যান্ড থেকে নিউইয়র্ক চলে যান৷ পশ্চিম স্কটল্যান্ডে বেড়ে উঠেছেন ট্রাম্প৷ ২০০৮ -এ সেখানে গিয়েছিলেন তিনি৷ সে বছরই প্রশাসন তাঁকে গল্ফ কোর্স তৈরির অনুমতি দেয়৷ তারা ভেবেছিল ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে অনেক চাকরি হবে, উপকৃত হবেন স্থানীয় বাসিন্দারা৷ ১২৫ কোটি ডলারের বিনিয়োগ বলে কথা! সমালোচকদের বক্তব্য, ৫০ লক্ষ ডলারও খরচ করেননি ট্রাম্প৷
গল্ফ কোর্স ঘিরে বিপুল পরিকল্পনা ছিল ট্রাম্পের , অন্তত তিনি গোড়ায় যেমনটা বলেছিলেন৷ কী তৈরির পরিকল্পনা ছিল? একটি নয়, দু’টি গল্ফ ময়দান তৈরি হবে৷ আটতলা হোটেল গড়ে উঠবে, তাতে থাকবে ৪৫০টি ঘর৷ দু’টির জায়গায় একটি গল্ফ কোর্স হয়েছে৷ নমো নমো করে একটা হোটেল হয়েছে৷ ৬ হাজার চাকরি হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ৯৫ জন চাকরি পেয়েছেন৷ এত কিছুর পরও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ অবশ্য ট্রাম্পের পাশে রয়েছেন৷ তাঁদের আশা, দেরিতে হলেও এখানে ট্রাম্পের প্রকল্পে আরও নির্মাণ হবে৷ তাতে লাভ হবে স্থানীয়দেরই৷
তবে ট্রাম্পের পাঁচিল নিয়ে অসন্তোষটাও তীব্র৷ স্থানীয় বাসিন্দা মাইকেল ফোর্বস নিজের বাড়ির উপর এখনও সেই পতাকাটা উড়িয়ে রেখেছেন যাতে লেখা ‘হিলারি ফর প্রেসিডেন্ট’৷ তাঁরা এতটাই ট্রাম্প-বিদ্বেষী! সুজান ও জন মানরোও নিজেদের ভিটেমাটি ছাড়তে চাননি৷ তাঁদের রান্নাঘর থেকে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত ফাঁকা জমি ছিল৷ দূরে দেখা যেত লাইটহাউজ৷ এই অসামান্য দৃষ্টিসুখ থেকে এখন বঞ্চিত মানরো দম্পতি৷ তাদের দৃষ্টি রুখে দেয় পাঁচিল৷ মানরোর বক্তব্য, ‘ট্রাম্পকে নিয়ে ব্যালমেডির যা অভিজ্ঞতা, তার থেকে আমেরিকাবাসীর অভিজ্ঞতা অন্তত ভালো হোক, এমনটাই আশা করি।’
সূত্র: এই সময়
Be the first to comment on "সমুদ্রতীরে ট্রাম্পের পাঁচিল"