সৌদির সঙ্গে মিল রেখে কয়েক জেলায় ঈদ উদযাপন

নিউজ ডেস্ক: সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার, চাঁদপুর, মা্দারীপুর, শরীয়তপুর, লক্ষ্মীপুরসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। এসব জায়গায় হাজার হাজার মুসল্লি স্থানীয় মসজিদ বা ঈদগাহে বুধবার (০৬ জুলাই) পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন। তাদের পরিবারে বইছে ঈদ আনন্দ।

বাংলাদেশের আকাশে মঙ্গলবার শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা না যাওয়ায় বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হবে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এ ঘোষণা দেন।

বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

আমাদের মৌলভীবাজারপ্রতিনিধিজানান, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে বুধবার মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্নস্থানে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব জামাতে সহস্রাধিক মুসল্লী অংশ নেন।

মৌলভীবাজার শহরের সার্কিট হাউস এলাকার আহমেদ শাবিস্তা নামক বাসার ছাদে বুধবার সকাল ৭টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাযে বিভিন্ন এলাকা আগত নারী ও পুরুষ অংশ নেন। নামাজে ইমামতি করেন আলহাজ্ব আব্দুল মাওফিক চৌধুরী (পীর সাহেব উজাণ্ডি)।

এছাড়া জেলার কুলাউড়া, বড়লেখা ও শ্রীমঙ্গলেও ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উজাণ্ডি পীর আলহাজ্ব আব্দুল মাওফিক চৌধুরীর অনুসারীরা ২০০৭ সাল থেকে তারা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখেই রোজা শুরু ও ঈদ পালন করে আসছে।

আমাদের মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে সুরেশ্বরী দরবারের অনুসারীরা মাদারীপুরের চারটি উপজেলার ১০ গ্রামের ১৫ হাজার মানুষ বুধবার ঈদ-উল ফিতর উদযাপন করেছেন।

জেলার বেশ কয়েকটি স্থানে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হলেও প্রধান ও বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে সদর উপজেলার তাল্লুক গ্রামের চরকালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। সকাল ৮টায় জামাত অনুষ্ঠিত হবার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে ১১টার দিকে এ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বৃষ্টির কারণে জামাতে অংশগ্রহণ করতে না পারলেও মসজিদে অনেকে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।

সৌদি আরবসহ মধ্য প্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে সুরেশ্বর দায়রা শরীফের প্রতিষ্ঠাতা হযরত জান শরীফ শাহ্ সুরেশ্বরীর অনুসারীরা ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করে আসেছেন।

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ৭টি গ্রাম ও রায়পুর উপজেলার বামনী ইউনিয়নের কয়েকশ’ পরিবার বুধবার (০৬ জুলাই) ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। এ সব গ্রামের পাঁচ শতাধিক মুসল্লি বিভিন্ন ঈদগাঁ মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করেন।

স্থানীয়রা জানান, নোয়াগাঁও ইউনিয়নের পূর্ব বিঘা, নোয়াগাঁও, জয়পুরা ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের বিঘা, বিশুয়া ও দক্ষিণ পূর্ব নোয়াগাঁও গ্রামের প্রায় ৪ শতাধিক পরিবার ওই এলাকার মাওলানা নেছার আহমদের নেতৃত্বে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগে রোযা ও ঈদ উদযাপন করছেন।

এ ব্যাপারে নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আকবর হোসেন মাহাবুব বলেন, ‘এই ইউনিয়নের ৪টি ইউনিয়নের ৩ শতাধিক পরিবার সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে বুধবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। সকাল ৯টায় বিভিন্ন স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই জামাত পরিচালনা করেন, মাওলানা নেছার আহমদ।

রায়পুর উপজেলার কলাকোপা বাজারের তালিমুল কোরান নূরানী মাদ্রাসা মাঠে ঈদুল ফিতরের বড় জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা আনোয়ার আহমদ। তিনি বলেন, ‘ইসহাক (র:) অনুসারী হিসেবে এসব এলাকার মানুষ পবিত্র ভূমি মক্কা ও মদিনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ঈদসহ সব ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছেন।’

কলাকোপা গ্রামের ৬৫ বছর বয়সের এক বৃদ্ধ আলাউদ্দিন মুন্সি বলেন, ‘বুধবার সৌদি আরবে রমজানের ঈদ। তাই আমরাও একইসঙ্গে রোজা ভেঙে ঈদ করি। কেননা কোরআনের আইনসব মুসলমানদের জন্য সমান। তাই আমরা কোরআনের নিয়ম অনুযায়ী ধর্মীয় উৎসব পালন করছি।’

শরীয়তপুরপ্রতিনিধি জানান, সুরেশ্বর পীরের অনুসারীরা শরীয়তপুর জেলার ৪টি উপজেলার ৩০টি গ্রামে বুধবার (৬ জুলাই) ঈদুল ফিতর পালন করছেন। অন্তত ১০ হাজার ভক্ত ও পীরের মুরিদানগন ঈদের জামাতে অংশ নিয়েছেন।

বুধবার নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর, চণ্ডিপুর, ইছাপাশা, থিরাপাড়া, ঘড়িষার, কদমতলী, নিথিরা, মানাখানা, নশাসন, ভুমখারা, ভোজেশ্বর গ্রামে; জাজিরা উপজেলার কালাইখার কান্দি, মাদবর কান্দি গ্রামে; সদর উপজেলার বাঘিয়া, কোটাপাড়া, বালাখানা, প্রেমতলা, ডোমসার, শৌলপাড়া গ্রামে এবং ভেদরগঞ্জ উপজেলার লাকার্তা, পাপরাইল ও চরাঞ্চলের ১০টি গ্রামসহ প্রায় ৩০টি গ্রামের অন্তত এক হাজার পরিবারে ১০ হাজারের ও বেশি নারী পুরুষ ঈদ উদযাপন করছেন।

সকাল সাড়ে ৯টায় ঈদুল ফিতরের প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সুরেশ্বর দরবার শরীফে। সেখানে ঈদ জামাতে ঈমামতি করেন সুরেশ্বর দরবার শরীফের গদিনীশীন মুত্তাওয়ালী মাওলানা সৈয়দ মো. বেলাল নূরী।

সুরেশ্বর দরবার শরীফের গদিনীশীন মুত্তাওয়ালী মাওলানা সৈয়দ মো. কামাল নূরী বলেন, ‘সৌদি আরবসহ আরব দেশ সমুহের সঙ্গে মিল রেখে প্রায় শত বছরের ও বেশী দিন ধরে সুরেশ্বর দরবার শরীফের মুরিদান ও ভক্তরা রোজা রাখে ও ঈদ উৎসব পালন করে আসছে। সে ধারাবাহিকতায় আজ (বুধবার) ঈদুল ফিতরের উৎসব পালন করছি।’

ঝিনাইদহপ্রতিনিধি জানান, জেলার হরিনাকুণ্ডু পৌর এলাকায় সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। পৌর এলাকার ঋষি পাড়ায় বুধবার (৬ জুলাই) সকাল ৮টায় এ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

এছাড়া উপজেলার সিথলী, ভালকী, পায়রাডাঙ্গা, বৈঠাপাড়া, ঋষি পাড়া ও সিংড়ে গ্রামসহ ৭টি গ্রামের কয়েকশ’ মুসল্লী প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ঈদের নামাজ আদায় করেন। এ নামাজে ইমামতি করেন আসাদুজ্জামান।

মুসল্লীরা জানান, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে প্রতি বছরই ঈদুল ফিতরের ঈদের নামাজ আদায় ও উৎসব পালন করে আসছেন তারা।

Print Friendly, PDF & Email
basic-bank

Be the first to comment on "সৌদির সঙ্গে মিল রেখে কয়েক জেলায় ঈদ উদযাপন"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*