নিউজ ডেস্ক : সিটি করপোরেশনের জায়গা ইউনিয়ন পরিষদের দেখিয়ে ১৭ বছর কর ফাঁকি দিয়েছে রাগীব আলী প্রতিষ্ঠিত জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। বিষয়টি ধরা পড়ার পর চার কিস্তিতে ৫২ লাখ টাকা বকেয়া কর পরিশোধ করেছে প্রতিষ্ঠান দুটি।
তারাপুর চা-বাগানে অবৈধভাবে স্থাপন করা এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অবস্থান সিলেট সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। তারাপুর মৌজার বড় একটি অংশ সদর উপজেলার টুকেরবাজার ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় প্রতিষ্ঠান দুটি তাদের ঠিকানা ইউনিয়ন দেখিয়ে পৌর ও সিটি কর ফাঁকি দিয়ে চলছিল প্রায় ১৭ বছর। এই ফাঁকিবাজি ধরা পড়ার পর নোটিশ জারির এক মাসের মধ্যে বকেয়া সব কর শোধ করে দেয় প্রতিষ্ঠান দুটি।
৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গায় দেবোত্তর সম্পত্তির তারাপুর চা-বাগান ১৯৯০ সালে ভুয়া সেবায়েত সাজিয়ে দখল করেছিলেন রাগীব আলী। গত ১৯ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের রায়ে চা-বাগান পুনরুদ্ধার, দখল করে গড়ে ওঠা কলেজ ও হাসপাতাল এবং অন্যান্য স্থাপনা ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে নিতে সিলেটের জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
উচ্চ আদালতের এই রায় বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন গণবিজ্ঞপ্তি দেয়। এরপরও অবৈধ স্থাপনা না সরানোয় জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। এ জন্য সিলেট সিটি করপোরেশন, বিদ্যুৎ বিভাগ ও জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয় জেলা প্রশাসন। তখন এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে তাদের কর ফাঁকির বিষয়টি বেরিয়ে আসে।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বলেন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বকেয়া কর আদায়ে নোটিশ জারির ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে একসঙ্গে ৫২ লাখ টাকা পরিশোধ করে দেয় ওই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। এর মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করে ৩৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭৯৮ টাকা। আর কলেজ কর্তৃপক্ষ দেয় ১৮ লাখ ২৫ হাজার ২০২ টাকা।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বুধবার কলেজে গিয়ে অধ্যক্ষ এ টি এম এ জলিলকে তাঁর দপ্তরে পাওয়া যায়নি। আর হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তরে গেলে সহকারী মহাপরিচালক ফজলুর রহমান কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে কলেজ ও হাসপাতালের প্রশাসন বিভাগের একজন কর্মকর্তা দাবি করেন, ‘এটা আসলে ফাঁকি নয়। কর আদায়ে বিগত দিনে কোনো নোটিশই আমাদের দেওয়া হয়নি বলে এত দিন অনাদায়ি ছিল।’
টানা ১৭ বছর কর অনাদায়ি থাকার বিষয়ে সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, করপোরেশন এলাকায় এ দুটি প্রতিষ্ঠানের অবস্থান হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দুটিরই ঠিকানা টুকেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদ হিসেবে প্রায় ১৭ বছর ধরে উল্লেখ করে আসছিল। ২০১৩ সালের ১৫ জুন নির্বাচনের পর নতুন মেয়র হিসেবে আরিফুল হক চৌধুরী দায়িত্ব গ্রহণ করে এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালান। পরে ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি সিটি কর আদায়ে নোটিশ জারির পর চারটি কিস্তিতে ৫২ লাখ টাকা আদায় হয়।
চলতি অর্থবছরে সিটি কর আদায়ে রাগীব আলীর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজকে এখন পর্যন্ত কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বলেন, নোটিশ জারির আর প্রয়োজন নেই। অর্থবছর শেষ হওয়ার মধ্যেই উচ্চ আদালতের রায় হওয়ায় নোটিশ দেওয়া হয়নি।
জালিয়াতির মাধ্যমে তারাপুর চা-বাগান দখল ও প্রতারণার মামলায় রাগীব আলীর বিরুদ্ধে আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে ১০ আগস্ট তিনি একমাত্র ছেলে আবদুল হাই ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান।
Be the first to comment on "১৭ বছর ধরে কর ফাঁকি দিচ্ছে রাগীব আলীর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল"