শিরোনাম

কেন ইতিহাস মনে রাখবে ফিদেল কাস্ত্রোকে

নিউজ ডেস্ক : তার বিখ্যাত দাড়ি, মুখের চুরুট, আর কালচে-সবুজ সামরিক পোশাকের জন্য সারা দুনিয়ায় ফিদেল কাস্ত্রো ছিলেন সবার পরিচিত মুখ।
অনেক অর্থেই ফিদেল কাস্ত্রো বিশ্ব-ইতিহাসের একটা সময়ের এক প্রতীকী চরিত্র।
বিপ্লবী আন্দোলন, স্নায়ুযুদ্ধ, পূর্ব-পশ্চিম দ্বন্দ্ব, পুঁজিবাদ আর কমিউনিজমের সংঘাত – এসব মিলে গড়ে ওঠা সেই কালপর্ব ফিদেল কাস্ত্রোর জীবনেরও গল্প।
মাত্র ৩৩ বছর বয়েসে ১৯৫৯ সালে কিউবার তখনকার শাসক বাস্তিতাকে উৎখাত করে কাস্ত্রো পাঁচ দশক ধরে ক্ষমতায় ছিলেন, পার করেছেন ১০ জন আমেরিকান প্রেসিডেন্টের শাসনকাল।
মোকাবিলা করেছেন ৬শ ৩৮টি হত্যাপ্রচেষ্টা।
কিন্তু কিসের জন্যে ইতিহাস তাকে মনে রাখবে?
বিশ্লেষকরা বলেন, তার শাসনের সময় কিউবাকে তিনি দিয়েছেন প্রথম বিশ্বের সমতুল্য শিক্ষার হার , আর এক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা – যা অনেক দেশের কাছে ঈর্ষার বস্তু। কিউবানদের গড় আয়ু এবং শিশুমৃত্যুর অতি নিম্ন হারও পশ্চিম ইউরোপের সাথে তুলনীয় – যদিও তাদের মাথাপিছু আয় উন্নত দেশগুলোর তুলনায় নগণ্য।
একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি লাতিন আমেরিকায় মার্কিন প্রভাব-আাধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন আজীবন, অনুপ্রাণিত করেছেন ভেনেজুয়েলার উগো চাভেজ, বা বলিভিয়ার ইভো মোরালেসের মতো নেতাদের ।
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব কিউবান স্টাডিজের সম্পাদক ড. স্টিফেন উইলকিনসন বলেন, এটা ঠিক যে কাস্ত্রো কঠোর হাতে তার শত্রুদের দমন করেছেন। কিন্তু এটাও ঠিক যে অন্য অনেক দেশে বিপ্লবের পর যেমন হয়েছে কিউবায় কিন্তু তেমন কোন রক্তগঙ্গা বয়ে যায় নি, স্তালিনের গুলাগের মতো কিউবায় কোন শ্রমশিবিরও ছিল না।
১৯৬১ সালে মার্কিন সমর্থিত বে অব পিগস অভিযানকে পরাজিত করতে পারাটা ছিল কাস্ত্রোর আরেকটি বিরাট অর্জন।
তেমনি আফ্রিকায় এ্যাংগোলার যুদ্ধে কিউবার ভূমিকা ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছিল। ১৯৮৮ সালে কাস্ত্রো নিজে এমনভাবে সামরিক পরিকল্পনা করেছিলেন – যাতে দক্ষিণ আফ্রিকা পরাজিত হয়, তারা এ্যাংগোলা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে এবং নামিবিয়া স্বাধীন হয়।
পরে এমনকি নেলসন মান্দেলাও বলেছিলেন, তার কারামুক্তি এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদী শাসনের অবসানের পেছনে প্রভাব ফেলেছে ওই যুদ্ধ।
শেষ জীবনে ফিদেল যখন তার ভাই রাউলের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিলেন তার পরেও বিশ্বের বহু দেশের রাজনীতিকরা তার সাথে দেখা করতে যেতেন।
চিলির কবি পাবলো নেরুদা বলেছিলেন, লাতিন আমেরিকার রাজনৈতিক নেতারা অনেক প্রতিশ্রুতি দেন কিন্তু পূরণ করতে পারেন খুবই সামান্য। কিন্তু কাস্ত্রো ছিলেন এর ব্যতিক্রম। তিনি আমেরিকার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, কখনো তাদের চাপে পিছু হটেন নি – এবং এই অদম্য চেতনা তার একটা বৈশিষ্ট্য ছিল।
কাস্ত্রোও তার স্বপ্নের অনেক কিই পূরণ করতে পারেন নি , অনেক ক্ষেত্রেই তাকে পেছনে ফেলে সময় এগিয়ে গেছে।
তার নীতির সাথে সবাই একমত হবেন না, কিন্তু এটা ঠিক যে তিনি তার অঙ্গীকারের প্রতি আজীবন অনড় ছিলেন।
ড. স্টিফেন উইলকিনসনের মতে এটা রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে খুবই দুর্লভ এক গুণ – এবং এটাই হয়তো তার সবচেয়ে বড় উত্তরাধিকার।

– বিবিসি বাংলা

Print Friendly, PDF & Email
basic-bank

Be the first to comment on "কেন ইতিহাস মনে রাখবে ফিদেল কাস্ত্রোকে"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*