নিউজ ডেস্ক : মোটাসোটা গালের ছোট্ট এক বালক যার গম্ভীর অভিব্যক্তির কারণে লোকজনের কাছে সে একটি প্রতীকী চরিত্রে পরিণত হয়েছে, সেই শিশুটিই পুরো একটি গ্রামের অধিবাসীদের লেখাপড়ার করার বড় রকমের উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই শিশুটির নাম জেইক যে কীনা দক্ষিণ আফ্রিকায় হয়ে উঠেছে খুবই জনপ্রিয় এক স্কুল-শিশু।
লোকজন অনলাইনে তার ছবি শেয়ার করছেন, যেখানে তারা নানা রকমের মন্তব্যও করছেন।
লোকজন কৌতুক করে বলছেন, শিশুটির এই গম্ভীর মুখ দেখে মনে হতে পারে সে একজন বেরসিক ড্রাইভিং ইন্সট্রাক্টর থেকে শুরু করে একজন নিরাপত্তা রক্ষীও।
জেইক বসবাস করে কয়েক হাজার মাইল উত্তরে, ঘানার পূর্বাঞ্চলের ছোট্ট একটি গ্রামে।
কিন্তু তার নিজের এই খ্যাতি সম্পর্কে সে কিছুই জানতে পারেনি।
গত বুধবার পর্যন্তও এই ছবিটি যিনি তুলেছেন সেই ক্যামেরাম্যান জানতেন না যে ছবিটি এতোবার শেয়ার করা হয়েছে।
ক্যামেরাম্যান কার্লোস কর্টেস ২০১৫ সালে ঘানায় গিয়েছিলেন সেখানকার স্থানীয় একজন শিল্পীর ওপর একটি তথ্যচিত্র নির্মাণের লক্ষ্যে।
ওই শিল্পীর নাম সোলোমান আদুফা যিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঘানায় নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছিলেন।
আদুফা যখন শিশুদেরকে ছবির মতো শিল্প সম্পর্কে পড়াচ্ছিলেন তখন ক্যামেরাম্যান কর্টেস শত শত ছবি তুলেছিলেন।
তখন এই জ্যাকেরও একটি ছবি তুলেছিলেন তিনি। তার বয়স ছিলো মাত্র চার বছর।
“সেসময় আমি জেইকের একটি ছবি তুলি। তার মুখটা তখন খুব চিন্তামগ্ন দেখাছিলো,” বিবিসিকে বলেন ওই ফটোগ্রাফার।
তারপর তারা দু’জনেই যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান। তখনও তারা জানতেন না যে ভবিষ্যতের এক জনপ্রিয় তারকার মুখ তারা ক্যামেরায় বন্দী করে এনেছেন।
শিল্পী আদুফা যখন ইন্সটাগ্রামে ওই শিশুটির একটি ছবি শেয়ার করেন তারপর থেকে সেটি সোশাল মিডিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করে।
ক্যামেরাম্যান যখন জানতে পারেন শিশুটির ছবি ভাইরাল হয়ে গেছে, তিনি বুঝতে পারছিলেন না যে তাতে কিভাবে তিনি সাড়া দেবেন। সবাই তাকে নিয়ে মজা করার ঘটনায় তিনি নিজেও কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন।
“আমি ভেবেছিলাম যে আমি হয়তো কোন সাড়া দেবো না। কিন্তু তখনই আমার একটি আইডিয়া আসে। মনে হলো এক একটি লাইক যদি সাহায্য তহবিলের অর্থে পরিণত হয় তাহলে ক্যামন হয়,” বলেন তিনি।
জেইক যে গ্রামে বসবাস করেন সেখানে বহু পরিবারেরই সামর্থ্য নেই তাদের শিশুদের স্কুলে পাঠানোর।
ওখানকার প্রাইমারি স্কুলেও অনেক কিছুরই অভাব।
“একদিনের কথা আমার মনে আছে। সব শিশুর জন্যে একটি করে পেন্সিল কেনা যায় এরকম কিছু অর্থ সংগ্রহের জন্যে আমরা অনলাইনে কুড়ি মিনিটের মতো ছিলাম।”
তিনি আশা করছেন, জ্যাকের ছবিতে পড়া একেকটি লাইক যাতে অর্থে পরিণত হয় সে ব্যাপারে শিশুটি হয়তো লোকজনকে অনুপ্রাণিত করতে পারবে।
ওই অর্থ দিয়ে গ্রামের শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।
একদিনের মধ্যেই ওই তহবিলে জমা পড়ে দুই হাজার ডলার যা তাদের টার্গেটের ১০ শতাংশ।
সূত্র- বিবিসি বাংলা
Be the first to comment on "গম্ভীর মুখের এই শিশুটি যেভাবে শিক্ষার তহবিল হয়ে উঠলো"