নিউজ ডেস্ক : উইসকনসিন, মিশিগান এবং পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের ভোট পুনরায় গণনার উদ্যোগকে ‘ফাজলামী’ (স্ক্যাম) বলে অভিহিত করলেন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ‘যে ফলাফলকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী (হিলারি ক্লিনটন) মেনে নিয়েছেন, সেই অনুযায়ী নির্বাচনের ফলাফলকে অবজ্ঞা এবং চ্যালেঞ্জ করার পরিবর্তে সকলেরই স্বাগত জানানো উচিত। কিন্তু গ্রনি পার্টির প্রার্থী জিল স্টাইন ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন’-পুনরায় ভোট গণনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প বলেন, ‘আর এই পুনঃগণনার ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে জিল স্টাইনের ইচ্ছা অনুযায়ী, যিনি গৃহীত ভোটের ১% এরও কম পেয়েছেন। এমনকি অনেক রাজ্যের ব্যালটে প্রার্থী হিসেবে তার নামও ছিল না। নগদ অর্থ কামানোর অভিপ্রায়ে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করছেন, যার কিয়দংশও ব্যয় করবেন না এই উদ্ভট প্রক্রিয়ায়’।
ট্রাম্পের এহেন অভিযোগ প্রসঙ্গে গ্রিন পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ড. জিল স্টাইন শনিবার বিকালে সিএনএনকে বলেছেন, ‘তার (ট্রাম্প) জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, সংগৃহিত তহবিল কেবলমাত্র ভোট পুনরায় গণনার জন্যেই ব্যয় করা হবে এবং তহবিল গঠনের প্রাক্কালে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে’।
স্টাইন উল্লেখ করেছেন, ‘অতীতে তিনি (ট্রাম্প) যে খেলা খেলেছেন, তারই পুনরাবৃত্তি ভাবছেন এই পুনঃগণনাকে। কারণ তিনি নিজেই বলেছিলেন যে, জয়ী হতে না পারলে ফলাফল মেনে নেবেন না’।
এক ট্যুইট বার্তায় স্টাইন বলেছেন, এই ৩ রাজ্য ছাড়া আরও কয়েকটি রাজ্যের ভোটও পুনরায় গণনার পদক্ষেপ নিতে পারেন।
এদিকে, শনিবার সকালে হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী প্রচারণা টিমের আইন বিষয়ক পরামর্শক মার্ক ইলিয়াস বলেছেন যে, উইসকনসিনের সাথে মিশিগান ও পেনসিলভেনিয়ার মত ব্যাটেল গ্রাউন্ড রাজ্যসমূহের ভোট পুনরায় গণনার পক্ষে তারা অবস্থান নিতে পারেন।
অন্যদিকে, উইসকনসিন ইলেকশন বোর্ডের কর্মকর্তারা জিল স্টাইনের পুনরায় ভোট গণনার আবেদনে সাড়া দিয়েছেন ২৫ নভেম্বর শুক্রবার। কারণ, জিল স্টাইন নিশ্চিত হতে চেয়েছেন যে, ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোট গ্রহণকালে কম্প্যুটারগুলো হ্যাকিংয়ের শিকার হয়নি।
হিলারি ক্লিনটনের কাউন্সেল ইলিয়াস ‘মিডিয়াম’ ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ভোটিং সিস্টেম কোন ধরনের হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়নি নিজেরা পরিচালিত তদন্তে। এজন্যে আমরা পুণগননার পথে যাইনি’। তিনি বলেন, ‘কিন্তু এখন উইসকনসিনে পুনরায় গণনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, আমরা এখন সেই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চাই এ জন্যে যে, পুণগণনার কার্যক্রম সঠিকভাবে এগোচ্ছে’। তিনি আরও বলেন, আইনগতভাবেই ক্লিনটন ক্যাম্পেইন টিমের সম্পৃক্ত হওয়া উচিত উইসকনসিনে ভোট পুণরায় গণনা কার্যক্রম তদারকির জন্যে।
ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে ট্রাম্প জয়ী হলেও পপুলার ভোট ট্রাম্পের চেয়ে ২০ লাখ বেশি পেয়েছেন হিলারি ক্লিনটন। এখনও কয়েকটি এলাকার রেজাল্ট চূড়ান্ত হয়নি। এদিকে, জিল স্টাইন ইতোমধ্যেই ৫.৮ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছেন পুনরায় ভোট গণনার জন্যে। ওই ৩ রাজ্যের ভোট পুনরায় গণনার জন্যে প্রয়োজন ৭ মিলিয়ন ডলার। এ অর্থ লাগবে পুনরায় গণনা ছাড়াও আইনগত প্রক্রিয়া অবলম্বনের জন্যে। আগামীকাল সোমবার শেষ সময় পেনসিলভেনিয়া রাজ্যে পুনরায় গণনার আবেদন করার। ৩০ নভেম্বর বুধবারের মধ্যে মিশিগানে আবেদন করতে হবে। পেনসিলভেনিয়ায় হিলারির চেয়ে ৭০ হাজার ১০ ভোট বেশি পেয়েছেন ট্রাম্প। অপরদিকে মিশিগানে হিলারির চেয়ে ১০ হাজার ৭০৪ ভোট বেশি পেয়েছেন ট্রাম্প। উইসকনসিনে হিলারির চেয়ে ট্রাম্পের ভোট বেশী ২৭ হাজার ২৫৭। এ ৩টি রাজ্যেই যদি হিলারি জয়ী হতে পারেন, তাহলেই নির্বাচনী ফলাফল পাল্টে যাবে এবং সে প্রত্যাশা নিয়েই জিল স্টাইনের আহ্বানে ব্যাপক সাড়া পড়েছে সমগ্র আমেরিকায়।
প্রসঙ্গত, ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি বিলুপ্তির দাবিতে ইতোমধ্যেই ইউএস সিনেটে গত ১৫ নভেম্বর একটি বিল উঠিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার ইউএস সিনেটর বারবারা বক্সার। এ দাবিতে সারা আমেরিকায় লাগাতার বিক্ষোভ-সমাবেশ এবং স্বাক্ষর সংগ্রহের অভিযানও পরিলক্ষিত হয় ৮ নভেম্বরের নির্বাচনের পর।
সূত্র: এনআরবি নিউজ
Be the first to comment on "পুনরায় ভোট গণনাকে ‘ফাজলামী’ বললেন ট্রাম্প"