রবি-এয়ারটেল একীভূত হতে আদালতের অনুমোদন

নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশের দুই মোবাইল ফোন অপারেটর রবি ও এয়ারটেলের একীভূত হওয়ার প্রস্তাব হাইকোর্টের অনুমোদন পেয়েছে।
একীভূত হওয়ার পর এই কোম্পানি পরিণত হবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে; বাজারে তারা ব্যবসা করবে রবি নামে।
২০১৮ সাল পর্যন্ত এয়ারটেলের থ্রিজি লাইসেন্সের মেয়াদ থাকায় বিটিআরসির সুপারিশ অনুসারে নতুন কোম্পানির ২৫ শতাংশ মালিকানা তাদের হাতেই থাকবে। বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমদের একক বেঞ্চ বুধবার এই অনুমোদন দেয়।
দুই অপারেটরের দেনা-পাওনার হিসাবে আদালতের সম্মতি পাওয়ায় এখন কারও কোনো আপত্তি না থাকলে বিটিআরসি এ বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে। আদালতে রবি ও এয়ারটেলের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম, বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই রাকিব।
পরে খন্দকার রেজা-ই রাকিব একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের সামনে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘এয়ারটেলের কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের পাওনা রয়েছে। সেই পাওনা পরিশোধের সাপেক্ষে হাইকোর্ট মার্জার অনুমোদন করেছে। মার্জার স্কিম অনুসারে এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে।’
দুই কোম্পানিতে এখন যারা কাজ করছেন, সরকারের শর্ত অনুসারে তাদের প্রত্যেককে নতুন কোম্পানিতে নিতে হবে। কেউ নতুন কোম্পানিতে যেতে না চাইলে ‘ভলান্টারি রিকোয়ারমেন্ট স্কিমের’ মাধ্যমে কোম্পানি থেকে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। আদালত আদেশের অনুলিপি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে প্রক্রিয়াগত বিষয়গুলো শেষ করতে হবে।
রবি ও এয়ারটেলের ব্যবসা এক হলে একীভূত কোম্পানির গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়াবে চার কোটির বেশি, যা বাংলাদেশের মোট মোবাইল ফোন গ্রাহকের এক-চতুর্থাংশ। পাঁচ কোটির বেশি গ্রাহক নিয়ে গ্রামীণফোন আছে সবার উপরে।
দুই অপারেটরের ব্যবসা একীভূত করতে ২৮ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক চুক্তির পর তা বিটিআরসিকে জানানো হয়। এ নিয়ে শুনানি করে বিটিআরসি কয়েকটি সুপারিশসহ মূল্যায়ন পাঠায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে। সুপারিশে বলা হয়, এয়ারটেল তাদের থ্রিজি লাইসেন্সের মেয়াদ, অর্থাৎ ২০১৮ সাল পর্যন্ত তাদের ২৫ শতাংশ মালিকানা বিক্রি করতে পারবে না। এরপর গত ১৩ জুলাই অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দুই কোম্পানির তরঙ্গ একীভূত করার ফি এবং মার্জার ফি বা মাশুল নির্ধারণ করা হয় ১০০ কোটি টাকা।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম ১ অগাস্ট জানান, ওই মাশুলেই রবি ও এয়ারটেলের একীভূত হওয়ার প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অনুমোদন দিয়েছে ।

বিটিআরসির কর্মকর্তারা এর আগে জানিয়েছিলেন, দুই কোম্পানির তরঙ্গ একীভূত করতে ৫০৭ কোটি টাকা গুণতে হতে পারে। বিষয়টি চূড়ান্ত হবে এয়ারটেলের কী পরিমাণ টুজি তরঙ্গ রবি একীভূত করবে তার ওপর। ২০১১ সালে টুজি লাইসেন্স নবায়নে প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের যে মূল্য ছিল তা হিসাব করেই একীভূত তরঙ্গ মূল্যে ৫০৭ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৫ মেগাহার্টজ থ্রিজি তরঙ্গ একীভূত করতে কোনো ফি দিতে হচ্ছে না। বর্তমানে রবির হাতে ১৯ দশমিক ৮০ মেগাহার্টজ এবং এয়ারটেলের ২০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ রয়েছে। এয়ারটেলের টুজি লাইসেন্সের মেয়াদ আছে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। একীভূত হওয়ার পর যা হবে ৩৯ দশমিক ৮০ মেগাহার্টজ। বর্তমানে গ্রামীণফোনের হাতে ৩২ মেগাহার্টজ তরঙ্গ রয়েছে, যা এককভাবে অন্য সব অপারেটরের চেয়ে বেশি।
রবির মালিকানা মালয়েশিয়াভিত্তিক আজিয়াটা গ্রুপের। অন্যদিকে এয়ারটেলের মালিক ভারতের ভারতি এয়ারটেল; তারা ওয়ারিদের ব্যবসা বাংলাদেশে কিনে নিয়েছিল। এশিয়ার বড় টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানিগুলোর মধ্যে আজিয়াটা অন্যতম। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশের পাশাপাশি কম্বোডিয়া, ভারত ও সিঙ্গাপুরেও তাদের ব্যবসা রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
basic-bank

Be the first to comment on "রবি-এয়ারটেল একীভূত হতে আদালতের অনুমোদন"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*