স্টাফ রিপোর্টার ॥
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ছাগলছেড়া,তেতুলিয়া, ও কামঠানা গ্রামে মধুমতি নদীর ভাঙ্গন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত দুই-তিন সপ্তাহে মধুমতি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে অর্ধ শতাধিক বসতবাড়ি। ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় ঝুঁকিতে রয়েছে আরো প্রায় শতাধিক বাড়িসহ ফসলি জমি ও গাছপালা ।
সহায়-সম্বল হারিয়ে ভাঙনকবলিত পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সথে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহে মধুমতিতে বিলীন হয়েছে লোহাগড়া ইউনিয়নের ছাগলছেড়া,তেতুলিয়া ও কামঠানা গ্রামের ৪৮টি বসতবাড়ি। এর মধ্যে,লুৎফর,আলতাফ,খায়ের, আনোয়ার,তোরাফ, হামিদ, সাইফুল, কুদ্দুস, মনি, আলী, আজগর, ইউনুছ ফকির, পারভীন, আলেক ও ইলিয়াছ ফকিরের বাড়ি রয়েছে।
এছাড়া ফসলি জমি ও গাছপালা নদীতে বিলীন হয়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে অন্তত শতাধিক বসতবাড়ি। তেতুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন গতবছর বর্ষা মৌসুমে নদীতে বিলীন হয়েছে। নদীর তীরে ছাপড়াঘর তুলে কোনোমতে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। গত দুই যুগ ধরে এ দুই গ্রামের বসতবাড়ি, ফসলিজমি ও গাছপালা নদীতে বিলীন হয়ে অন্তত ১৫০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৩-৪ বারও ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে গ্রামের অনেক পরিবার।
শনিবার (২৩ আগষ্ট) ওই এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মানুষজন ভাঙ্গনের মুখে পড়ে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন তাদের ঘরবাড়ি। ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এসব গ্রামের বাসিন্দারা। বাড়িঘর বিলীন হয়ে অনেকে প্রতিবেশি বা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে, আবার কেউবা রাস্তা ও বেড়িবাধেঁর ওপর টিনের ছাপড়া তুলে কোন রকম আশ্রয় নিয়েছেন। নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেক পরিবার। তাঁরা মানবেতর জিবনযাপন করছেন।
তেতুলিয়া গ্রামের জয়তুন বেগমের বাড়ি ভাঙ্গনের মুখে। তিনি বলেন, ১৬ বছর বয়সে বউ হয়ে ইহানে আইছি। জাগাজমিসহ শ্বশুর বাড়িতে সুহির সংসার ছেল। স্বর্বনাশা নদীভাঙ্গনে সব হারাইছি। দুইবার বসতবাড়ি সরাতি হইছে। এহন এই ঘরডা নদীতি চলে গিলি কোহানে যে যাব জানিনা ? এ গ্রামের হামিদ মোল্লা জানান, তাঁদের প্রায় ৩০ একর ফসলি জমি ছিল। সব এখন নদীর মধ্যে। এ বছরসহ তিনবার বাড়ি নদীতে ভাংছে। এখন নিঃস্ব,পথের ফকির হয়ে গেছি প্রায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য চাঁন মিয়া জানান, এখনো সরকারি কোনো সাহায্য ক্ষতিগ্রস্তরা পাননি। গত সপ্তাহে ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের কাছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। লোহাগড়া ইউপির নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান নজরুল শিকদার বলেন, ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে দিনে দিনে এসব জনপদ বিলীন হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে আর্থিক সহযোগিতার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সেলিম রেজা অনলাইন পত্রিকা নিউজ এ্যালাইনকে জানান, ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্যের জন্য আবেদন করতে বলেছি। আর ভাঙ্গন প্রতিরোধে জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।
বিপ্লব রহমান
Be the first to comment on "লোহাগড়ায় নদী ভাঙ্গনে মধুমতি গর্ভে অর্ধ শতাধিক বাড়ি"