নিউজ ডেস্ক॥ নড়াইলের লোহাগড়ায় ঝর্ণা বেগম (৪০) তার তিন সহযোগী ও একজন খদ্দেরসহ চার দেহ ব্যবসায়ীকে সোমবার (৬জানুয়ারী) দুপুরে হাতেনাতে আটক করেছে লোহাগড়া থানা পুলিশ।
পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে লোহাগড়া থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আমানুল্লাহ আল বারী সংগীয় এসআই আতিকুজ্জামান, এসআই মিল্টন কুমার দেবদাস, এসআই মাহফুজুর রহমান, এএসআই শিকদার হাসিবুর রহমান ও মহিলা পুলিশ কনস্টেবল শিউলি রাণী বিশ্বাস, পৌর শহরের লক্ষীপাশা গ্রামের আদর্শ পাড়ার ওসিউর রহমানের স্ত্রী কণিকা বেগমের বাড়িতে অভিযান চালায়। অভিযানে মল্লিকপুর ইউনিয়নের চর মল্লিকপুর গ্রামের মৃত শেখ আলাউদ্দিনের মেয়ে প্রধান দেহ ব্যবসায়ী ঝর্ণা @ রিনা (৩৬) ও তার তিন নারী সহযোগী ও এক পুরুষ খদ্দেরকে আটক করেছেন। পুরুষ খদ্দেরের বাড়ি ইতনা ইউনিয়নের চর-দৌলতপুর। ঝর্ণার তিনজন নারী সহযোগী এই প্রতিবেদককে জানান, ঝর্না বেগম তাদের সরদারণী। তিনি স্থানীয় কয়েকজন মস্তানকে অর্থের বিনিময়ে হাত করে পৌর শহরের দু’টি স্থানের আবাসিক এলাকায় বাসা ভাড়া করে দীর্ঘদিন ধরে নীতি হীন এ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। ভাড়াটিয়া মস্তানরা মোটা অংকের মাসোয়ারাসহ তাদের লোকজন সেখান থেকে ফ্রি সেবা নেয়। সরদারণী পাঁচ’শ, থেকে পাঁচ হাজার টাকায় খদ্দের ঠিক করে তাদের মোবাইলে সংবাদ দেয়। খদ্দের প্রতি তারা দু’শ টাকা করে পায়। অপরটি রামপুর দরগাহ শরীফের অদুরে কচুবাড়িয়া গ্রামের পাকা সড়কের পাশে। তবে বাড়ির মালিকের নাম তারা জানেন না। সরদারের নির্দেশে ওইসব নারীরা পর্যায়ক্রমে একস্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয়। নারীরা সকলেই স্বামী পরিত্যাক্তা। কারও পিতা দিন মজুর, কেউ বা, কৃষি কাজ করেন। সকলেরই অভাব-অনটনে চলে সংসার। কোলে তাদের দুধের শিশু বাচ্চা। বাচ্চার দুগ্ধ ও অন্যের সন্ধানে বিপথে তারা। তাদের প্রধান অন্তরায় দারীদ্রতা। সংসারের অভাব যেন সর্বত্র তাড়া করে ফিরে তাদের। অবয়বে রয়েছে নীপিড়ন-নির্যাতনের দুর্বিসহ যন্ত্রনার ছাপ। লোহাগড়া ইউনিয়নের কালনা গ্রামের হাসি খানম ২৭(ছদ্মনাম) প্রেমজ সম্পর্কের মাধ্যমে ২০১৬ সালে বিয়ে হয় খুলনার খালিশপুর এলাকার জনৈক সাদ্দাম হোসেনের সাথে। বিয়ের পর দু’বছর ভালোই চলছিল তাদের বৈবাহিক জীবন। হাসি যখন সন্তান সম্ভাবা, তখন হাসিকে ফেলে তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে চম্পট দেয়। সে জানায় সাদ্দামের পৈতৃক বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ধানকোড়া গ্রামে। হাসি সেখানে গিয়ে স্বামীর অধিকার আদায়ে অনেক চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছেন। তার কোলে ৯ মাস বয়সের একটি মেয়ে রয়েছে। সে মায়ের বুকের দুধ খায়। মেয়েটি তার নানীর কাছে রেখে এসেছেন। বিকাল অথবা সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরবেন এমনটাই জানে তার অবুঝ শিশু ও বৃদ্ধ মা।
নড়াইল সদর উপজেলার মহিষখোলা গ্রামের বীথি বেগম ২৮ (ছদ্মনাম)। বাবা বেঁচে নেই, মা বৃদ্ধ, পরের বাড়িতে ঝি’এর কাজ করেন। প্রেমজ সম্পর্কের মাধ্যমে ২০০৯ সালে বীথির বিয়ে হয় লোহাগড়া উপজেলার শালনগর গ্রামের নয়নের সাথে। সেখানে প্রায় ৭বছর সে সুখেই ছিলো । এ সময়ে দু’টি মেয়ে ও একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। ২০১৫ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ করে নয়ন ২য় বিয়ে করেন। তিনটি সন্তান নিয়ে বীথি পিত্রালয়ে বৃদ্ধ মায়ের কাছে আশ্রয় নেয়। তার বড় মেয়ে তৃতীয় অপরজন দ্বিতীয় এবং ছেলে প্রথম শ্রেণীতে পড়ে। বীথিই ওই সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম। বৃদ্ধ মায়ের সংসার ও সন্তানদের লেখাপড়ার জোগান দিতে বীথির এ পথে গমন।
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার হাঁড়িডাঙ্গা গ্রামের যুথি আক্তার (২৫) (ছদ্মনাম)। ২০০৮ সালে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় পাবিবারিক ভাবে পার্শ্ববর্তী গ্রামে বিয়ে হয়। বছর না ঘুরতেই বিচ্ছেদ। যুথির মাকে রেখে ২য় বিরে করে অন্যত্র পাড়ি জমায় তার পিতা। যুথির ১৪ বছর বয়সের একটি ছোট ভাই রয়েছে। তার পিতা কোন খোজ খবর নেয় না। মা অসুস্থ, মাসে অনেক টাকার ওষুধ লাগে। তবে এহেন ঘটনায় তারা অনুতপ্ত। তবে কর্মসংস্থান হলে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে আগ্রহী।
এলাকাবাসী জানান, তারা অনেকবার বাধা দিলেও সে ক্ষমতার দাপট ও ভাড়াটে মস্তানের ভয় দেখিয়ে অনেকটা প্রকাশ্যেই দেহ ব্যবসা করে আসছিল। প্রতিদিন ওই বাড়িতে এলাকার বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষের যাতায়াত। তাদের দাবী পরিবেশ বিনষ্ঠকারীরা যেন আর আস্তনা গাড়তে না পারে। অভিযান পরিচালনার জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
লোহাগড়া থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আমানুল্লাহ আল বারী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ধৃত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে সোমবার বিকালে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে।
Be the first to comment on "লোহাগড়ায় পুলিশের জালে খদ্দেরসহ চার যৌনকর্মী"