লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধিঃ
নড়াইলের লোহাগড়ার নদী খাল-বিলসহ বিভিন্ন জলাশয়ে যত্রতত্রে সনাতন পদ্ধতিতে পাট জাগ দেওয়ায় পানি পচে তা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে পরছে। এক দিকে পানি পচে পরিবেশ হচ্ছে দূর্গন্ধময় অন্যদিকে নিধন হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। নদীর দু’তীরের হাজার হাজার মানুষ পচা দূর্গন্ধময় পানি ব্যবহার করে আক্রান্ত হচ্ছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে। কৃষকদের অসচেতনতার কারণে এমন টা ঘটলেও পাট পচানোর রিবন রেটিং পদ্ধতি ব্যবহারের ব্যাপারে উপজেলার কৃষি বিভাগের তেমন কোন প্রচার প্রচারনা নেই। বিষেশ করে ইউনিয়ন পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের ( ব্লক সুপারভাইজার) এ ব্যপারে কোন ভুমিকা নিতে দেখা যায়নি। ফলে শত বছরের সেই সনাতন পদ্ধতিতে পাট জাগ দিয়ে আসছেন কৃষকেরা। আর প্রতিটি পাট মৌসুমে পরিবেশ পড়ছে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে। অথচ কোন মাথাব্যাথা নেই কৃষি বিভাগের।
সরেজমিন লোহাগড়ার লক্ষীপাশা, রাজপুর, মল্লিকপুর, দিঘলিয়া, কোটাকোল, জয়পুর, চোরখালি, কাশিপুর, নলদীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে নবগঙ্গা নদীর দু’তীরে যত্রতত্র ভাবে ব্যাপক পাট জাগ দেওয়া হয়েছে। ক্রমাগত ভরাট ও দখলের কারণে উন্মুক্ত জলাশয়ের অভাবে বছরের পর বছর ধরে পাট পচানোর উদ্দেশ্যে নদীতে পাট জাগ দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১০ হাজার ৯৮৯ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও মোট ১৩ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার থেকে ২ হাজার ১৯১ হেক্টর বেশি।
অধিক জমিতে পাটের আবাদ হলেও যথাযথ ভাবে আশ ছাড়াতে এ বছর উপজেলার কৃষকদের মাঝে রিবনার (রিবন রেটিং মেশিন) বিতরন করা হয়নি। বিগত বছরগুলোতে রিবনার বিতরন করা হলেও কৃষকদের সচেতনতার অভাব ও অনাগ্রহের কারনে এর মধ্যে এ বছর শুধু মাত্র কাশিপুর ইউনিয়নের কয়েক জন কৃষক যতসামান্য রিবন রেটিং পদ্ধ্যতিতে পাটের আশ ছাড়াতে দেখা গেছে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ক্ষেত থেকে পাট গাছ কেটে তা পানিতে জাগ দেওয়ার পরিবর্তে রিবনার নামক মেশিনের মাধ্যমে কাঁচা পাট গাছ থেকে আশ ছাড়িয়ে গাট বেধেঁ মাটি গর্ত করে সেগুলো রেখে কিছুটা পানি ও ইউরিয়া প্রয়োগ করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হয়।এ ভাবে প্রক্রিয়ার মধ্যে পাটের আঁশ পচে যাওয়ার পর তা পানিতে ধুয়ে শুকাতে হয়।
তবে এ এলাকার একাধিক কৃষক মানবজমিনকে অভিযোগ করে বলেন এ পদ্ধতি সম্পার্কে তারা কিছুই জানেনা বা ইউনিয়ন পর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা রিবনার রেটিং পদ্ধতি সম্পর্কে কখনো কিছুই জানাননি। উপজেলার মঙ্গলহাটা গ্রামের কৃষক আলীম শেখ, জনি ও মশিয়ার রহমান জানান, পাট পচানোর কোন বিকল্প ব্যবস্থা না পেয়ে তারা বাধ্য হয়ে নদীতে পাট জাগ দিয়েছেন । লোহাগড়ার নদী বাঁচাও আন্দলন কমিটির সদস্য রূপক মুখার্জি বলেন, নদী-খালে পাট জাগের কারণে দেশীয় মাছের অভাব দেখাদেবে এবং এ পানি ব্যবহারের কারনে খোস পাচড়া, চুলকানিসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষজন। লোহাগড়ার মৎসজীবি বিমল বিশ্বাস বলেন, পাট জাগের কারণে রুই, কাতলা, মৃগের, শিং, মাগুর, পুঁটি, বোয়ালসহ সকল প্রকার মাছ মরে পানিতে ভেসে ওঠছে। খোঁজনিয়ে জানাগেছে, উপজেলার ওপরদিয়ে প্রবাহিত নবগঙ্গা নদীর প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার তীর জুড়ে পাট জাগ দেওয়া হয়েছে। ফলে নদীটি মৎস্যশুন্য হয়ে পড়েছে। এলাকার মৎস্যজীবি পরিবার গুলো তাদের জীবন জীবিকা নিয়ে চিন্তিত। এ ব্যপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্বাস অনলাইন পত্রিকা দেশের সংবাদকে বলেন, নদী খাল-বিলসহ বিভিন্ন জলাশয়ে পাট জাগ দেওয়া কৃষকদের দীর্ঘ দিনের একটি অভ্যাস। কিন্তু এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় কৃষি বিভাগ থেকে রিবন রেটিং পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। তবে কৃষকদের অনাগ্রহের কারনে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সমস্যা হচ্ছে।
শাহজাহান সাজু
লোহাগড়া নড়াইল
লোহাগড়ায় সনাতন পদ্ধতিতে চলছে পাট জাগ পানি পচেঁ দুর্গন্ধে দূষণ হচ্ছে পরিবেশ

Be the first to comment on "লোহাগড়ায় সনাতন পদ্ধতিতে চলছে পাট জাগ পানি পচেঁ দুর্গন্ধে দূষণ হচ্ছে পরিবেশ"