নিউজ ডেস্ক : ষোলো বছরের আস্তানা, জওহরলাল নেহরু হাসপাতাল ছেড়ে শেষ পর্যন্ত পাকাপাকি ভাবে মুক্ত আকাশের নীচে ইরম শর্মিলা চানু। ৯ অগস্ট অনশন ভাঙার পরে জামিনে মুক্তি মিললেও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদে তিনটি স্থানে রাত কাটাতে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছিল মণিপুরের লৌহমানবীকে। ১৮ দিনের ব্যবধানে উল্টে গিয়েছে ছবি। শর্মিলা ফের মানুষের সমর্থন পেতে শুরু করেছেন। এক সময় মুখ ফিরিয়ে নেওয়া মহিলাদের ডাকে প্রথম জনসভাটিও সেরে ফেললেন শর্মিলা। জানালেন, আজ থেকে তাঁর আফস্পা-বিরোধী আন্দোলনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হল। আপাতত তিনি লাঙ্গোল এলাকার ইস্কনের আশ্রমে থাকবেন।
মালোমে আধাসেনার গণহত্যার প্রতিবাদে ২০০০ সালের ৪ নভেম্বর থেকে অনশন শুরু করেন চানু। আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। তখন থেকেই ইম্ফলের জওহরলাল নেহরু হাসপাতালে একতলার সিকিওরিটি ওয়ার্ড ছিল চানুর দ্বিতীয় ঘর। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন, আফস্পা না উঠলে আর নিজের ঘরে ফিরবেন না। তাই অনশন ভাঙার পরেও ঘরে ফেরেননি। এ দিকে, ভোটে দাঁড়াবেন বলে এবং প্রেমের টানে শর্মিলা অনশন ভাঙায় তাঁর এক সময়ের অনুগামী শর্মিলা কানবা লুপের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হন। ক্ষিপ্ত হয় মণিপুরের আম জনতাও। একা হয়ে
গিয়েছিলেন শর্মিলা।
শর্মিলার আফস্পা-বিরোধী লড়াইয়ের সহযোদ্ধা বাবলু লোইতংবাম ও তাঁর সঙ্গিনীরা অবশ্য চানুর সঙ্গ ছাড়েননি। তাঁরাই হাসপাতালে চানুকে আগলে রাখেন। তাঁদের মতে, অনশন ভাঙলেও এত দ্রুত ভোটে দাঁড়ানো ও মুখ্যমন্ত্রী হতে চাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করাই চানুর ভুল পদক্ষেপ ছিল। এ দিকে চানুর প্রেমিক ডেসমন্ডের তরফেও কোনও বার্তা আসেনি। হতাশ চানু বলেছিলেন, মানুষ হয়তো তাঁর মৃত্যুতেই শান্তি পাবে। রাজ্যত্যাগীও হতে চেয়েছিলেন অভিমানী নেত্রী।
গত ২৩ অগস্ট শর্মিলা আদালতে এলে ফের তাঁর সমর্থনে পোস্টার-প্ল্যাকার্ড-সহ আসেন মানুষ। তা দেখে ভরসা ফেরে শর্মিলার। অনশন ভাঙলেও রাজ্য সরকার তাঁর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করেনি এখনও। পরের শুনানি হবে ৫ সেপ্টেম্বর।
রাজ্য সরকার ও হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছিল, এত দিনের অনাহারের পরে শরীর বাইরের ধকল নেওয়ার উপযুক্ত হলে তবেই চানুকে ছাড়া হবে। আজ ডাক্তারি পরীক্ষায় ‘সুস্থ ও সবল’ চানু হাসপাতাল থেকে বেরোনোর ছাড়পত্র পান। এত দিনের ‘এ-৪ ওয়ার্ড’ থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘‘১৬ বছর আমার অনেক সুখ-দুঃখের সঙ্গী এই ঘর। এখানে কাটানো সময়ের জন্য আমার কোনও আফশোস নেই। আজ থেকে আমার নতুন লড়াই শুরু।’’ এত দিনের বাসিন্দাকে বিদায় জানাতে নার্স ও চিকিৎসকদের ভিড় জমে। ঘরে থাকা সহস্রাধিক বই, গাছ, উপহার, মানপত্রে বোঝাই হয় গাড়ি।
হাসপাতাল থেকে সোজা মেইতেইদের ক্ষমতার প্রতীক কাংলা দুর্গে যান লৌহমানবী। সেখানে শক্তির দেবতা ইবুধৌ পাখংগার আশীর্বাদ নেন। জানান, ২১ বছর পরে কাংলায় এলেন তিনি। মুক্ত আকাশের নীচে কাংলার সবুজ ঘাসজমিতে বকেদের ঘুরে বেড়ানো দেখে শর্মিলা উচ্ছাস চাপতে পারেননি।
পরের গন্তব্য ছিল কেইশামথংয়ের সানাজন্মস্থান ক্লাবে মহিলা সংগঠনের সংবর্ধনা সভা। জামিনে মুক্তির দিন ওই এলাকায়, এই মহিলারাই শর্মিলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মুখর ছিলেন। কিন্তু আজ অন্য ছবি। ছিল তাঁর সঙ্গে হাত মেলানোর হুড়োহুড়ি। সেখানেই ভাত, ডাল, সব্জিতে মধ্যাহ্নভোজও সেরে নেন শর্মিলা। পরে সংবর্ধনা সভায় ভাষণে তিনি জানান, আজ থেকে সরকার পরিবর্তন ও আফস্পা প্রত্যাহারের লক্ষ্যে মানুষকে একজোট করার লড়াই শুরু হল। শীঘ্রই তিনি নিজের দফতর খুলবেন। বলতে গেলে, এটাই ছিল শর্মিলার প্রথম জনসভা।
আপাতত কয়েক দিন লাঙ্গোলে ইসকনের নেচার কিওর আশ্রমে কাটানোর পরে শর্মিলা উখরুল যাবেন। সেখানেও দীর্ঘ দিনের ব্যবধানে ফের শুরু হয়েছে আফস্পা-বিরোধী আন্দোলন। তিনি জানান, এর পর চণ্ডীগড়ে হওয়া যুব সমাবেশে অংশ নেবেন তিনি। যাবেন দিল্লি-সহ দেশের অন্যান্য অংশেও।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
Be the first to comment on "হাসপাতাল ছেড়েই ফের লড়াইয়ে চানু"