নিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অটিস্টিক শিশুদের পিতা-মাতার অবর্তমানে তাদেরকে লালন-পালনের জন্য রাষ্ট্রই উদ্যোগ গ্রহণ করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস-২০১৬ উপলক্ষে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অটিজমসহ সব ধরনের প্রতিবন্ধী শিশুদেরও বেঁচে থাকার অধিকার আছে। তাদের মেধা ও যোগ্যতা প্রকাশেরও অধিকার আছে। তাদেরকে সে সুযোগ দিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় উপলব্ধি করি যে, অটিজম শিশুদের জন্য সব চেয়ে বেশী কষ্ট হচ্ছে মায়ের। তাই তাদের মা-বাবা যখন থাকবে না, তখন এদের কি হবে। এরা কোথায় যাবে। আমরা এ ব্যাপারে একটা উদ্যোগ নিচ্ছি। বাবা-মা যখন থাকবে না, তখন সরকারের পক্ষ থেকে তাদের লালন-পালনের ব্যবস্থা আমরা করবো।’
‘৯৬ পরবর্তি সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগে চালু করা কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বিএনপি-জামায়াত বন্ধ করে দেয়ার ফলে জনসাধারণের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ফাউন্ডেশন ও ট্রাষ্ট করে এমনভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করবো যাতে ভবিষ্যতে সরকার পরিবর্তন হলেও কেউ তা বন্ধ করতে না পারে।’
তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও যেন প্রযুক্তির উৎকর্ষের সকল সুবিধা গ্রহণ করতে পারে সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার হার্ডওয়্যার ও ওয়েবসাইট তৈরীতে এগিয়ে আসার জন্যও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক জেলা-উপজেলাতে একটি করে অটিজম চিহ্নিতকরণ ও চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনে সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন,‘ শুধু ঢাকায় নয় ঢাকার বাইরেও আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। ৬৪ জেলায় এবং ৩৯টি উপজেলায় ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে অটিজম কর্ণার চালু করা হয়েছে। যা থেকে প্রায় ২০ লাখ প্রতিবন্ধী সেবা গ্রহণ করছে। ঢাকায় শিশু হাসপাতাল সহ ১৫টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র স্থাপন করে অটিজম সমস্যা জনিত শিশুদের চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকটি জেলা এবং উপজেলাতেও একটি অটিজম সনাক্তকর এবং তাদের কাউন্সেলিং করা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।’ তিনি বলেন, যারা সেবা প্রদান করবেন তাদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বিভিন্ন স্থানে যেমন সেনানিবাসে ‘প্রয়াস’ নামে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও কুমিল্লাসহ প্রতিটি সেনানিবাসে আমি ইতোমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছি আমাদের প্রতিটি সেনানিবাসে এই প্রয়াসের শাখা তৈরী করা হবে।’
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. চৌধুরী মো. বাবুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন এমপি। জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসরিন আরা সুরাত আমিন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
অটিজম ও স্নায়বিক সমস্যাজনিত জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন এ উপলক্ষে জাতিসংঘে অটিজম বিষয়ক মূল অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার দরুন অনুষ্ঠানে তাঁর ধারণকৃত বক্তৃতা পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানে শুনানো বক্তৃতায় সায়মা ওয়াজেদ সমাজে না জেনেই কাউকে যেন অটিস্টিক হিসেবে চিন্থিত না করা হয় সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করেছেন। প্রতিবন্ধীদেরকে সমাজেরই একজন বিবেচনা করে তাদের মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখার জন্যও তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী নীল আলো জালিয়ে প্রতিবন্ধী দিবসের কার্যক্রম উদ্বোধনের পাশাপাশি প্রতিবন্ধিদের পরিবেশনায় ‘আলোর ভূবন’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় প্রতিবন্ধি শিশুদের মাঝে গিয়ে তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
পিতা-মাতার অবর্তমানে রাষ্ট্রই দায়িত্ব নেবে প্রতিবন্ধীদের : প্রধানমন্ত্রী

Be the first to comment on "পিতা-মাতার অবর্তমানে রাষ্ট্রই দায়িত্ব নেবে প্রতিবন্ধীদের : প্রধানমন্ত্রী"