শিরোনাম

তদবির ছাড়াই নড়াইলে পুলিশে চাকরি

তদবির ছাড়াই নড়াইলে পুলিশে চাকরি

নিউজ ডেস্ক : চাকরি নয়, “সেবা” স্বপ্ন হলো সত্যি, এই প্রতিপাদ্য নিয়ে নড়াইল জেলায় পুলিশের কনস্টেবল পদে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম রোধে কঠোর ছিলেন পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়,পিপিএম (বার)। তিনি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ নিয়োগ সম্পন্ন করেছেন। গত ২৬ নভেম্বর পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হয়।
এবার পুলিশে নিয়োগ পেয়েছেন সাধারণ পরিবারের সন্তানরা। ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশের উপযোগী করে বাংলাদেশ পুলিশকে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে নতুন নিয়মে পুলিশের কনস্টেবল পদে কোন প্রকার তদবির ছাড়া স্বচ্ছতার ভিত্তিতে জেলায় মেধাবী ও শারীরিকভাবে যোগ্য দু’জন নারী ও ১৩ জন পুরুষসহ ১৫জনের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন।
নিয়োগ পেতে পার করতে হয়েছে সাতটি ধাপ। এগুলো হলো প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং, শারীরিক মাপ ও ফিজিক্যাল এন্ডিউরেন্স টেস্ট, লিখিত পরীক্ষা, মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা, প্রাথমিক নির্বাচন, পুলিশ ভেরিফিকেশন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চুড়ান্তভাবে প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্তকরণ। এই সাতটি ধাপের কোনো একটিতে অযোগ্য বিবেচিত হলে তিনি আর পুলিশে নিয়োগ পাবেন না। সাতটি ধাপের প্রতিটিতে আলাদা টিম দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্ব পালনের ১০ মিনিট আগেও জানতেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ও তদবির প্রথা থেকে বের হতে এমন যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন আইজিপি ড.বেনজীর আহমেদ। পুলিশ প্রধানের বরাত দিয়ে নড়াইলের পুলিশ সুপার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছেন। উন্নত দেশের উপযোগী পুলিশ তৈরি করার প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ স্বচ্ছভাবে নিয়োগের জন্য নিয়োগ বিধি সংশোধন করা হয়েছে। মেধাবী ও শারীরিকভাবে যোগ্যরাই এবার নিয়োগ পেয়েছেন। ভবিষ্যতে সাব-ইন্সপেক্টর ও সার্জেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রয়োগ করা হবে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধ হবে।
কোনো ধরনের তদবির বা অর্থছাড়া শুধুমাত্র মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কনস্টেবল পদে চাকরি পাওয়া সাধারণ পরিবারের সদস্য ও তাদের পিতা-মাতার জন্য ছিল স্বপ্ন। আয়েশা খানম, সদর উপজেলার ছাগলছিড়া গ্রামের কৃষক নূরনবী মোল্যার মেয়ে। নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়তেন। নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতেন টিউশনি করে। বাবার ৪ সদস্যের সংসারে বড় মেয়ে আয়েশা। স্বপ্ন ছিল পুলিশে চাকরি করার। কীভাবে চাকরি হবে এই নিয়ে দুঃচিন্তার কমতি ছিলনা। একদিন জানতে পারেন পুলিশের চাকরি পেতে টাকা পয়সা ও তদবির লাগে না। আবেদনপত্র পূরণ করে লাইনে দাঁড়ালেন, যাচাই বাছাইয়ে মেধা ও যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হলেন। বিনা টাকায় চাকরি হওয়ায় তিনি অনেক খুশি। চূড়ান্তফল ঘোষণায় নিজের নামটি শোনার পর আনন্দে কেঁদে ফেলেন আয়েশা খানম। মেয়ের আনন্দে আপ্লুতও তার বাবা-মা। বিনা পয়সায় মেয়ের চাকরি হওয়ায় তাদের জীবনের সবচেয়ে বেশি খুশির দিন ছিল।
নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজে রসায়ন বিজ্ঞানে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়তেন জান্নাতী খানম। লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া গ্রামের ত্রৈলক্ষপাড়ায় তার বাড়ি। ছয় ভাই বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। তার বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রাইমারী স্কুল শিক্ষক। বিনা টাকায় চাকরি হওয়ায় তিনি মাহাখুশি। জান্নাতী বলেন, চাকরি করার স্বপ্ন ছিল ছোট বেলা থেকে। কিন্তু হবে কিনা এ নিয়ে সন্দেহ ছিল। পরে পুলিশ সুপারের বক্তব্য শুনে আশ্বস্ত হন। পাচুড়িয়া গ্রামের সৈয়দ আজিবার রহমানের ছেলে সৈয়দ রবিউল ইসলাম, দেবী গ্রামের কাজী মনিরুজ্জামানের ছেলে কাজী নাদিমুজ্জামান, কালিয়া উপজেলার দেওয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত গোলাম শেখ’র ছেলে আলী আকবার ও বড়নাল গ্রামের লোকমান হোসাইন মল্লিকের ছেলে এস এম সুহাগ’সহ ১৫ জন কনস্টেবল পদে উত্তীর্ণ ভাগ্যবানের নাম ঘোষণা করা হয় নড়াইল পুলিশ লাইন্সের ড্রিল শেড থেকে। তারা সকলেই মেধা ও যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হয়ে এখন পুলিশের একজন গর্বিত সদস্য।
এ সময় নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়,পিপিএম (বার)। সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক, বাগেরহাট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো: আসাদুজ্জামান, কুষ্টিয়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো: আতিকুল ইসলাম এবং মেডিকেল অফিসার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নড়াইলের ডাক্তার সৈয়দ শফিক তমাল ও ডাক্তার তনিমা রহমান। অনুষ্ঠানের শুরুতে উত্তীর্ণদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। পরে উত্তীর্ণরা এবং তাদের অভিভাবকরা অভিমত ব্যক্ত করে পুলিশ প্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

Print Friendly, PDF & Email
basic-bank

Be the first to comment on "তদবির ছাড়াই নড়াইলে পুলিশে চাকরি"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*