নিউজ ডেস্ক: চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচন তুলনামূলক ভালো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ। তিনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম, অনিয়মের কোনো অভিযোগ যাতে না উঠে, একটি কেন্দ্রও যাতে ভোট বন্ধ করতে না হয়। অথচ তা ঘটছে কিছু এলাকায়। তবে তুলনামূলকভাবে ভালো নির্বাচন হচ্ছে, দেখি, শেষ পর্যন্ত কেমন হয়। অন্যদিকে ভোটগ্রহণ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের সঙ্গে স্বাক্ষাত শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেছেন, নির্বাচনের নামে এখন যা ঘটছে তাতে নির্বাচনের পদবঞ্চনা হয়। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ নির্বাচনের কথা এরপর আর শুনতে চাইবে না।
এদিকে শনিবার সকাল ৮টা থেকে ৭০৩ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকেই অনিয়মের অভিযোগ ও বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। সহিংসতার কারণে ৩০টির বেশি কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, জামালপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ অনেক এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি কুমিল্লা ও ঠাকুরগাঁওয়ে মারা গেছে তিন জন। ফেনী সদরে একজন এসআই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, মুন্সীগঞ্জে মাথা ফেটেছে এক এএসআইয়ের। তবে আগের নির্বাচনগুলোর তুলনায় এবার তুলনামূলক ভালো নির্বাচন হচ্ছে। প্রথম পাঁচ ঘণ্টার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে নির্বাচন কমিশন এমন দাবি করেছে।
শনিবার প্রথম ৫ ঘণ্টার ভোট শেষে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন নিয়ে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন।
বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বলেন, আরও কয়েক ঘণ্টা ভোটের সময় রয়েছে। চেয়েছিলাম অনিয়মের কোনো অভিযোগ যাতে না ওঠে, একটি কেন্দ্রও যাতে ভোট বন্ধ করতে না হয়। অথচ তা ঘটছে কিছু এলাকায়। তিন আরও বলেন, মাঠ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে একীভূত তথ্য নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকায় ইতোমধ্যে সাতটি কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হয়েছে। আরো অভিযোগ আসছে। খুব খারাপ অবস্থা। দখল করে নেয়ার অভিযোগ কোনোভাবে মেনে নেয়া হবে না। ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান বলেন, বরাবরই ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী-সমর্থকদের মধ্যে কিছুটা গোলযোগ হয়ে থাকে। এ ধাপে অপেক্ষাকৃত কম হচ্ছে। যেখানে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ আসছে সেখানেই ভোট বন্ধ করা হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে গোলযোগপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর বিষয়ে ইসি সিদ্ধান্ত দেবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ফরহাদ আহাম্মদ খান জানান, অনিয়ম ও নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের কারণে ৩০টির বেশি কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করা হয়েছে। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
মাঠ পর্যায়ের পর্যবেক্ষণে পরিস্থিতি সন্তোষজনক!: বিভিন্নস্থানে অনিয়ম ও সহিংসতার ঘটনা অব্যাহত থাকলেও মাঠ পর্যায়ে পরিস্থিতি সন্তোষজনক। মাঠ পর্যায় থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তারা শনিবার ভোটের এমন প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। তবে নির্বাচন কমিশনাররা বলছেন, কোথাও কোথাও বেশ অনিয়ম হচ্ছে। সেসব স্থানে শক্তহাতে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ইসির নির্বাচন মনিটরিং এর দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, মাঠ পর্যায় থেকে পরিস্থিতি সন্তোষজনক। দু-এক জায়গা ছাড়া কোথাও কোন সহিংসতার তথ্য নেই। এ নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে বলে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দাবি করলেও বিএনপি বলছে, ভোটের নামে প্রহসন হচ্ছে।
মানুষ আর নির্বাচনের কথা শুনতে চাইবে না: ইসির কাছে কেন্দ্র দখল ও জালভোটের বিভিন্ন অভিযোগ জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, নির্বাচনের নামে যা ঘটছে তাতে মানুষ নির্বাচন শব্দটা আর বেশি সম্মানের সঙ্গে নেবে না। নির্বাচন যদি গ্রহণযোগ্য না হয়, তার যথাযোগ্য পরিচিতি হারিয়ে ফেলে, নির্বাচনে এখন যা ঘটছে তাতে নির্বাচনের পদবঞ্চনা হয়। তাহলে মানুষ নির্বাচনের কথা এরপর আর শুনতে চাইবে না। শনিবার ভোট শেষে সিইসির সঙ্গে বিকেলে আধা ঘন্টাব্যাপী বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
ইউপি নির্বাচনে অনিয়ম, দখলের চিত্র তুলে ধরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কাছে নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে বিএনপি প্রতিনিধি দলটি নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্রথম দফা থেকে চার ধাপের ভোট পর্যন্ত নানা অভিযোগ দেওয়ার পরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয় নি। বরং অবনতি হয়েছে। সেই কেন্দ্রদখল, ভয়ভীতি প্রদর্শন, জোরজবরদস্তি করে ফল নিজেদের পক্ষে আনা-সবাই অব্যাহত রয়েছে। সিইসিকে আমরা বরাবরের মতো একই কথা বলে এসেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়-সিইসির আশ্বাসের পর পরিস্থিতির উন্নতি হয় নি। ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে। নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে অনিয়ম প্রতিরোধে বিএনপি কাজ করে যাবে বলে জানান নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে গ্রহণযোগ্য রাখতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যাতে মানুষ গণতন্ত্র ও নির্বাচনের বিষয়ে আস্থা স্থাপন করতে পারে। চার ধাপের ভোটের পরও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত দলীয়ভাবে হবে বলে তিনি জানান।
ইতিমধ্যে তিন ধাপের ভোট শেষ হয়েছে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত ৭৪ জনেরও বেশি লোকের প্রাণহানি ঘটেছে। দেশের প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউপিতে এবার ছয় ধাপে ভোটগ্রহণ করছে সংস্থাটি। আগামী ২৮ মে পঞ্চম ধাপে এবং ৪ জুন ষষ্ঠ ধাপের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
মানুষ আর নির্বাচনের কথা শুনতে চাইবে না: বিএনপি

Be the first to comment on "মানুষ আর নির্বাচনের কথা শুনতে চাইবে না: বিএনপি"