শিরোনাম

লোহাগড়া থানার বহুল আলোচিত ওসি আলমগীর তাৎক্ষনিক বদলী, আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ

লোহাগড়া থানার বহুল আলোচিত ওসি আলমগীর তাৎক্ষনিক বদলী, আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ

নিউজ ডেস্ক ॥ নড়াইলের লোহাগড়া থানার বহুল আলোচিত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর হোসেনকে অবশেষে প্রশাসনিক কারনে লোহাগড়া থানা থেকে তাৎক্ষনিক বদলী করা হয়েছে। নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ জসিমউদ্দিন পিপিএম (বার) শনিবার (২১মার্চ) দুপুরে গণমাধ্যম কর্মীদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, লোহাগড়া থানার বহুল আলোচিত ওসি আলমগীর হোসেন গত বছরের ২৩ নভেম্বর লোহাগড়া থানায় যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি থানায় আগত সেবা প্রত্যাশীদের জিম্মি করে অর্থ আদায় ও তাদের সাথে দুর্ব্যবহার, অর্থের বিনিময়ে মিথ্যা মামলা রেকর্ড, অবৈধ যানবাহন থেকে চাঁদাবাজি ও ঘুষ বাণিজ্য, মাদক ব্যবসায়িদের সাথে সখ্যতা, মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে চাঞ্চল্যকর বদর খন্দকার হত্যা মামলার আসামিদের পালাতে সহায়তা করা, অধীনস্থদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণসহ গালমন্দ করা, স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও অংগ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে খারাপ আচরণ, বিরোধপূর্ণ জমির শালিস বাণিজ্যসহ নানাবিধ অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। এ সব অপকর্মের ভিত্তিতে শনিবার (২১মার্চ) পুলিশের উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষ তাকে তাৎক্ষনিক নড়াইল পুলিশ লাইন্সে ক্লোজ করেন।
খোঁজ-খবর নিয়ে আরও জানা গেছে, আলোচিত ওসি আলমগীর হোসেনের বাড়ি বরিশাল জেলায়, তিনিসহ তার পরিবারের সদস্যরা বিএনপি-জামায়াত রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট। বিগত ১৯৯১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে ওসি আলমগীর পুলিশ বিভাগে এসআই পদে যোগদান করেন। এরপর থেকে তিনি ঘুষ বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। মাদকসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ায় পুলিশের উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষ তাকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বদলী করেন। তার সিমাহীন দুর্নীতি ও অপকর্মের কারনে কোন একটি থানায় মাত্র ১৯ দিনও তিনি চাকুরি করে ফের ষ্টান্ড রিলিজ হন। ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা থানায় কর্মরত থাকাকালীন সময়ে ওসি আলমগীরের অন্যায়-অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ট হয়ে পড়েন। এরপর ২০১৫ সালে তিনি রেঞ্জ বদলী হয়ে চট্রগ্রামের পাহাড়তলী থানায় যোগদান করেন। পাহাড়তলী থানায় কর্মরত অবস্থায় তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়িদের পৃষ্টপোষকতার মাধ্যমে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে সিএমপির উদ্বর্তন কর্মকর্তারা বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। শেষ পর্যন্ত ওসি আলমগীর মাদক ব্যবসায়িদের পৃষ্টপোষকতার অভিযোগে খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের তালিকাভুক্ত হন। চট্রগ্রামের পাহাড়তলী থানা থেকে ২০১৮ সালে রাজশাহী জেলার পবা থানায় বদলী করা হয়। পবা থানায় থাকাকালীন তিনি মাদক ও গ্রেফতার বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। পবা থেকে আলমগীরকে একই জেলার বোয়ালিয়া থানায় বদলী করা হয়। এখানেও তিনি ঘুষ বাণিজ্যসহ নানাবিধ অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় তার অপকর্মের খবরাখবর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলে তিনি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিরাগভাজন হয়ে রাজশাহীর সিনিয়র সাংবাদিক ও দৈনিক যুগান্তরের ব্যুরো প্রধান আনু মোস্তফা, প্রথম আলোর আলোকচিত্রী শহীদুল ইসলাম দুখু, চ্যানেল ২৪ এর ক্যামেরা পারর্সন রায়হানুল ইসলাম ও দৈনিক মানবজমিনের জেলা প্রতিনিধির নামে দু’টি করে নাশকতার মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে সাংবাদিক সংগঠনের হস্তক্ষেপ ও প্রতিবাদে দায়েরকৃত মামলা থেকে ওই সাংবাদিকরা অব্যহতি পান। রাজশাহী থেকে ওসি আলমগীরকে ২০১৯ সালে যশোর জেলার অভয়নগর থানায় বদলী করা হলেও তার স্বভাব এতটুকুও পরিবর্তন হয় নাই। অভয়নগরে চাকুরী কালীন সময়ে ওসি আলমগীর আবারও ঘুষ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন নৈতিকতা বিরোধী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়লে তাকে ফের পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়। সেখানেও তার বদলীর খবরে ওই এলাকার লোকজন মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিল করেন। খুলনা পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে বদলীর পর কর্তৃপক্ষের সাথে দেনদরবার করে গত ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর নড়াইলের লোহাগড়া থানায় বদলী হন। এ থানায় যোগদান করে ওসি আলমগীর ঘুষ বাণিজ্যসহ হাজারো অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। মাত্র ৪ মাসের মধ্যে তিনি আবারও বদলীর গ্যাড়াকলে পড়েন।
শনিবার বিকালে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানা থেকে ইন্সপেক্টর সৈয়দ আশিকুর রহমান লোহাগড়া থানায় নতুন ওসি হিসেবে যোগদান করেছেন।
এ দিকে, ওসি’র বদলীর খবর এলাকায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। শুধু তাই নয়, ওসির বদলীর খবরে লোহাগড়া উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীসহ স্থানীয় ব্যবসায়িরা পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়কে আনন্দ মিছিল শেষে মিষ্টি বিতরণ করেন।

Print Friendly, PDF & Email
basic-bank

Be the first to comment on "লোহাগড়া থানার বহুল আলোচিত ওসি আলমগীর তাৎক্ষনিক বদলী, আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*