নিউজ ডেস্ক ॥ দৈত্ব নাগরিক দিলীপ বিশ্বাস’র বিরুদ্ধে তথ্যবহুল ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করায় গাত্রদাহ হয়েছে। তিনি নিজের অপকর্ম ঢাকতে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন। তাই তো দৈনিক নড়াইল প্রতিদিন” পত্রিকার নামে দিলীপ বিশ্বাস মানহানি মামলা করেছেন। গত মঙ্গলবার নড়াইল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদুল আজাদ’র আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন। আদালতের হাকিম অভিযোগটি গ্রহন করে তদন্তের জন্য জেলা তথ্য অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার আসামীরা হলেন, পত্রিকার প্রকাশক ইমরান হোসেন, সম্পাদক শরিফুল ইসলাম বাবলু ও বার্তা সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ। মামলার পরবর্তি তারিখ নির্ধারন করা হয়েছে আগামী ২৬ এপ্রিল । দৈত্ব নাগরীক দিলীপ বিশ^াসের দায়েরকৃত অভিযোগে দুর্গাপুর এলাকার মৃত বাদল বিশ^াসের ছেলে অজিত বিশ্বাস এবং একই গ্রামের নির্মল বিশ্বাসের ছেলে রিপন বিশ্বাসকে স্বাক্ষী করা হয়েছে।
মামলার বাদী দিলীপ বিশ্বাস মামলায় উল্লেখ্য করেছেন,বাদীর পিতা একজন শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক ছিলেন। বাদী এবং তাদের পরিবার দির্ঘকাল যাবৎ পূর্ব এবং বর্তমানে সর্বসাধারনের জ্ঞাতসারে বসবাস করছেন বলে উল্লেখ্য করেন। মামলার বাদী নিজেকে এ দেশের নাগরীক দাবি করে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ্য করেছেন।
এদিকে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে দিলীপ বিশ্বাসের ভারত এবং বাংলাদেশের দৈত্ব নাগরীক হওয়ার সুদিষ্ট তথ্য এবং সেদেশে জমি ক্রয়-বিক্রয়ের প্রমানসহ তথ্যাদি প্রতিবেদন উল্লেখ্যসহ পত্রিকার দপ্তরে সংরক্ষিত রয়েছে।
উল্লেখ্য, দৈনিক নড়াইল প্রতিদিন পত্রিকায় গত ১মার্চ “ দৈত্ব নাগরিক দিলীপ বিশ্বাস, দেশের অর্থ ভারতে পাচারের অভিযোগ” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
নড়াইলে দিলীপ বিশ্বাস’র নামে এক জনের বিরুদ্ধে একইসাথে ভারত ও বাংলাদেশের নাগরীক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ সুযোগে তিনি দির্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে অর্থ পাচার করে আসছেন। ভারতের নাগরীক ভারতে রয়েছে নামে বেনামে দিলীপ বিশ্বাস’র অঢ়েল সম্পত্তি রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সে নড়াইল পৌর এলাকার দুর্গাপুর এলাকার মৃত নির্মল কান্তি বিশ্বাসের ছেলে।
জানা গেছে, দিলীপ বিশ্বাস নড়াইল সদর সাবরেজিষ্ট্রি অফিসের নামমাত্র দলিল লেখক (৭৯ নং সনদ)। নড়াইলে অনেকের কাছে তিনি দূর্গাপূর গ্রামের বাসিন্দা হিসাবে পরিচিত হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি ভারতের নাগরিক। মূলত তিনি ভারতে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হাবড়া থানার ফুলতলা এলাকার মৃত নির্মল কান্তি বিশ্বাসের ছেলে। সেখানে (ভারতে) তিনি তার নামে/বেনামে গড়ে তুলেছেন অঢ়েল সম্পত্তি। বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে অর্থ পাচারের মাধ্যমেই ভারতে সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। সর্বশেষ নড়াইলের রেল লাইনে অধিগ্রহনকৃত জমির অন্যান্য শরিকদের টাকা অবৈধভাবে উত্তোলন করে ভারতে পাচারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বাংলাদেশী স্থায়ী বাসিন্দাদের নায্য জমির টাকা যেন কোন ভাবেই ভারতে পাচার হতে না পারে সে জন্য নড়াইলের মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন ।
সূত্র জানায়, নগরিক হিসাবে তিনি সে দেশে জায়গা-জমি ক্রয়-বিক্রয় করেছেন। ভারতে দিলিপ বিশ্বাসের আধার কার্ড নং-২১২৯১৫৮৩৯৩৮৬, পিন নম্বর-৭৪৩২৩৬। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অতিরিক্ত জেলা হাবড়া অবর নিবন্ধক অফিসের মাধ্যমে তিনি একাধিক জমি ক্রয়-বিক্রয় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একই সাথে তিনি নড়াইল পৌরসভার দুর্গাপুর এলাকার মৃত নির্মল বিশ্বাসের ছেলে দিলীপ বিশ্বাস যার বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর-১৯৭৪৬৫২৭৬০৪১০৮২৮৫। নড়াইল সদর সাবরেজিষ্ট্রি অফিসের মাধ্যমে গত কয়েক বছরে অন্তত কোটি টাকার জমি বিক্রয় করে অবৈধ ভাবে ভারতে পাচার করেছেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সূত্র জানায়। এদিকে রেল লাইনে অধিগ্রহনে ৭৫ নং দূর্গাপুর-ডুমুরতলা মৌজায় ১২১১ ও ১২১২ দাগে জমি অধিগ্রহন হওয়ার প্রকৃত মালিকদের ফাঁকি দিয়ে কয়েক কোটি টাকা উত্তোলন করার জন্য পায়তারা চালাচ্ছেন। এই জমির টাকা দিলীপ বিশ্বসকে দিলে প্রকৃত জমির মালিকরা বঞ্চিত হবে। এতে নিঃস্ব হয়ে সর্বস্ব হারাবে কয়েকটি পরিবার। দিলীপ বিশ্বাসের আগ্রাসী থাবা থেকে নিজের বাপ-ঠাকুর দাদার জমির নায্য অধিকার পেতে আদালতের দারস্থ হয়েছেন জমির প্রকৃত মালিকরা। মামলা নং ০৫/২০ (মোকাম-নড়াইল বিজ্ঞ যুগ্ম-জেলা জজ ১ম আদালত) ভুক্ত ভোগিদের দাবী তারা আদালতের পার্টিশন মামলার রায় দেওয়া না পর্যন্ত যেন দিলীপ বিশ্বাসকে কোন টাকা না দেওয়া হয়। এজন্য ক্ষতিগ্রস্থরা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন। এদিকে দিলীপ বিশ্বাস মরিয়া হয়ে উঠেছে যে কোন বিনিময়ে টাকা উত্তোলোন করতে। অবৈধ ভাবে টাকা উত্তোলনের জন্য স্থানীয় কয়েকজন দালালের সাথে হাত মিলিয়েছেন ভারতীয় নাগরিক দিলীপ বিশ্বাস। স্থানীয় এ সব দালালদের সাথে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে মৌখিক চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন দিলীপ গং। দালালরাও দিলীপকে অধিগ্রহনের টাকা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও সূত্রের দাবি।
১২১২ দাগের জমির মালিক মৃত তারাপদ গাঙ্গুলীর ছেলে রতন গাঙ্গুলী জানান, তিনি এই দাগের কোন জমি কারো কাছে বিক্রয় বা, হস্তান্তর করেন নাই। দিলীপ বিশ্বাস ও আবুল ভূইয়ার ওয়ারেশ গণরা তাদের অংশের জমি নাম পত্তন করে টাকা উত্তোলনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন এই ভূক্তভোগী।
১২১১ ও ১২১২ জমির রেকর্ডীয় মালিক দুলাল শর্মার ছেলে স্বপন ওরফে মকরের অংশ থেকে জমি নেয়া দুর্গাপুর এলাকার ইদ্রিস খান জানান, উক্ত দাগে বাংলাদেশ ও ভারতীয় নাগরীক দিলীপ বিশ্বাস এবং দুর্গাপুর এলাকার মৃত আবুল হোসেন ভূইয়ার ওয়ারেশ গণরা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের ভূল বুঝাইয়া ৪টি নাম পত্তন করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে দিলীপ বিশ্বাস রেলের ভূমি অধিগ্রহনের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা উত্তোলনের জন্য পায়তারা চালাচ্ছেন। তারা ইতিমধ্যে ওই নাম পত্তনের বিরুদ্ধে পৌর ভূমি অফিসে ১৫০ ধারায় মামলা দায়ের করেছেন। এই টাকা দিলীপ বিশ্বাস উত্তোলন করতে পারলে ভারতে পাচার করবে বলে তাদের অভিযোগ।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, দিলীপ বিশ্বাস দির্ঘদিন ধরে নড়াইলের বিভিন্ন মৌজার জমি বিক্রয় করে অবৈধভাবে ভারতে টাকা পাচার করেছেন। রেল লাইনে টাকা উত্তোলন করতে পারলে সে টাকাও ভারতে পাচার করবে বলেও তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে জেলা পরিষদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান হিলু বলেন, অনেক কষ্ট করে জীবন বাজি রেখে এ দেশটাকে স্বাধীন করেছি দেশের অর্থ অবৈধভাবে বিদেশে পাচারের জন্য নয়। আমাদের ছোট্ট এই দেশের সিমিত সম্পদ যদি বিদেশে পাচার হয়ে যায় তাহলে আমরা দেশের মানুষ অর্থ নৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবো। যদি কোন ব্যাক্তি বাংলাদেশের টাকা ভারতে পাচার করে অথবা পাচার করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে তাহলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্থক্ষেপ করা জরুরী। বাংলাদেশের টাকা ভারতে পাচার করা এবং পাচার করতে সহযোগিতা করা দুইটাই রাষ্ট্র দ্রোহীতার সামিল বলে মনে করেন এই মুক্তিযোদ্ধা।
নড়াইল জর্জকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও আ’লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাভোকেট এস এম ফজলুর রহমান জিনাœহ বলেন, দেশটাকে স্বাধীন করেছি দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য। দেশের সম্পদ যদি এভাবে বিদেশে পাচার হয়ে যায় তাহলে দেশের মানুষের কিভাবে উন্নয়ন হবে। নড়াইলের টাকা যদি কেউ পাচার করার ষড়যন্ত্রের সাথে লিপ্ত থাকে তাহলে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ঠ সকলের হস্থক্ষেপ করা জরুরী।
অভিযুক্ত দিলীপ বিশ্বাস তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন, আমার ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য একটি মহল এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমার পূর্ব পুরুষ এখানে বসবাস করত আমরাও এখানে বসবাস করি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, কোন নাগরিক যদি দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে সঠিক তথ্য প্রমান পেলে আইগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দৈত্ব নাগরিককে রেল লাইলের অধিগ্রহনকৃত জমির ক্ষতিপুরন দেওয়া যাবে কিনা তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Be the first to comment on "সত্য প্রকাশে নড়াইল প্রতিদিনের নামে দৈত্ব নাগরিকের মিথ্যা মামলা"