শিরোনাম

কমিউনিস্ট পার্টির একাদশ কংগ্রেস শুরু আগামীকাল থেকে

নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির একাদশ কংগ্রেস কাল শুরু হচ্ছে। শুক্রবার দুপুর ২টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উদ্বোধনের মাধ্যমে কংগ্রেসের কার্যক্রম শুরু হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শ্রমিক কৃষক মেহনতি মানুষের ব্যাপক গণজমায়েতের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

মার্কসবাদী মতবাদভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি নিখিল ভারত কমিউনিস্ট পার্টির উত্তরাধিকারী সংগঠন। ১৯২৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর কানপুরে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে নিখিল ভারত কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয়।

জন্মলগ্ন থেকেই ভারতে ব্রিটিশ সরকারের দমন নীতির শিকার কমিউনিস্ট পার্টি বেশির ভাগ সময়েই গোপনে কাজ করেছে। ১৯৩৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টিকে প্রথম নিষিদ্ধ করা হয়, যা পরে ১৯৪২ এ প্রত্যাহার হয়। নিষিদ্ধ অবস্থাতেই পার্টি ১৯৩৯ সালে বোম্বাইতে সাফল্যের সঙ্গে যুদ্ধবিরোধী ধর্মঘট সংগঠিত করে। ওই ধর্মঘটে ৯০ হাজার শ্রমিক অংশ নেয়।

চল্লিশের দশকে পার্টি সমগ্র ভারতে শ্রমিক আন্দোলন সংগঠিত করে। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৬ পর্যন্ত পার্টির নেতৃত্বে  ভারতবর্ষজুড়ে সংগঠিত হয় তেভাগা,  নানকা,  টঙ্ক, তেলেঙ্গনা, কেরালায় পুন্নাপা ভায়ালা আন্দোলন ও কায়ুর আন্দোলনের মতো ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন।

ভারত ভাগের পর ১৯৪৭ এ ঢাকায় ৭ সদস্যের একটি আঞ্চলিক কমিটি গঠন করা হয়। পরের বছর কলকাতায় অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসে পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত কাউন্সিলররা ৬ মার্চ পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করেন। একই দিনে পূর্ববঙ্গের কাউন্সিলরগণ ১৯ সদস্যের পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক কমিটি গঠন করেন, যার সম্পাদক নির্বাচিত হন খোকা রায়।

১৯৪৯-৫০ সাল পর্যন্ত মুসলিম লীগ সরকার কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে অবিরাম দমনমূলক ব্যবস্থা চালাতে থাকে। ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের খাপড়া ওয়ার্ডে কমিউনিস্ট বন্দিদের উপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে ৭ জন নেতা নিহত এবং ৩১ জন গুরুতর আহত হন।

১৯৫০ সালে রমেন মিত্র ও ইলা মিত্রের নেতৃত্বে ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহ ও  নাচোল বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। ১৯৫১ সালে পাকিস্তান সরকার পশ্চিম পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে রাওয়ালপিন্ডি ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের এবং সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষনেতাদের কারাবন্দী করলে পশ্চিম পাকিস্তানে পার্টির কর্মকান্ড প্রায় অচল হয়ে পড়লেও পূর্ব পাকিস্তানে চলমান থাকে।

৫২-র ভাষা আন্দোলনে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি বিশেষ ভূমিকা রাখে। ’৫৪ সালের নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টি যুক্তফ্রন্টকে সমর্থন দেয়। প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে পার্টি মনোনীত ৭ প্রার্থীর মধ্যে ৪ জন নির্বাচিত হন।

একই বছর ৯২-ক ধারা জারি এবং প্রদেশে গভর্নরের শাসন চালু হলে কমিউনিস্ট পার্টি আবার নিষিদ্ধ হয়, পার্টির নেতাকর্মীরা চরম নির্যাতনের মুখে পড়েন।  ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে কমিউনিস্ট পার্টি সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। ১৯৭১ সালের গণজাগরণ ও অসহযোগ আন্দোলনেও পার্টির সক্রিয় ভূমিকা ছিল।

পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ও কর্মীরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। পার্টির নেতা কমরেড মণি সিংহ প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের সরাসরি পরিচালনায় একটি বিশেষ গেরিলা বাহিনী পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পার্টির নতুন নাম হয়- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।

১৯৭৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসে দলের একটি নতুন গঠনতন্ত্র গৃহীত হয়। কংগ্রেসে মণি সিংহকে সভাপতি ও মোহাম্মদ ফরহাদকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৬ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি নির্বাচিত হয়। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর প্রথম প্রকাশ্য প্রতিবাদ করে কমিউনিস্ট পার্টি। ওই সময় পার্টির নেতা-কর্মীরা সামরিক সরকারের কঠোর নিপীড়নের শিকার হন। পার্টির কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা গ্রেপ্তার হন। অনেকের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়। ১৯৭৭ সালের অক্টোবর মাসে কমিউনিস্ট পার্টি ফের নিষিদ্ধ হয়। পরের বছর সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও পার্টির নেতা-কর্মীদের মুক্তি দেয়া হয়।

সিপিবি ১৯৮৩ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গঠিত ১৫ দলীয় জোটে যোগ দেয়। ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টি ৫টি আসনে জয়লাভ করে। ১৯৯০ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বদানে সিপিবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিলোপবাদীরা পার্টি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ১৯৯৩ সালে পার্টির কংগ্রেসে শহীদুল্লাহ চৌধুরীকে সভাপতি এবং মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়। এরপর ১৯৯৫ সালের ৭-৮ এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের লক্ষ্যে ১৭-দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

১৯৯৯ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সপ্তম কংগ্রেস এবং ২০০৩ সালে অষ্টম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৮ সালের ৭-৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত নবম কংগ্রেসে পার্টির নতুন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়। মনজুরুল আহসান খান সভাপতি এবং মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

কমিউনিস্ট পার্টি ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে বরাবরই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এই সংগ্রামের লক্ষ্যে বাম-প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তির সমন্বয়ে সম্মিলিত আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য পার্টি কাজ করে যাচ্ছে।

২০১২ তে দশম কংগ্রেস হওয়ার পর এবার পার্টির একাদশ কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কংগ্রেসে যোগ দিতে বিদেশি অতিথিদের বেশিরভাগই ঢাকায় এসে পৌছেছেন। এবার ১০টি দেশ থেকে মোট ২৬ জন প্রতিনিধি কংগ্রেসে সংহতি জানাবেন।

শুক্রবার বেলা ২টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উদ্বোধনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সারাদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ লাল পতাকা নিয়ে সমাবেশে যোগ দেবেন। এরপর বর্ণাঢ্য র‌্যালি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেষ হবে। উদ্বোধনের পরদিন ২৯ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টায় গুলিস্তানের কাজী বশির মিলনায়তনে (মহানগর নাট্যমঞ্চ) রুদ্ধদ্বার সাংগঠনিক অধিবেশন শুরু হবে এবং চলবে ৩১ অক্টোবর বিকেল পর্যন্ত। এছাড়া ২৯ অক্টোবর, শনিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের (২য় তলা) কনফারেন্স কক্ষে ‘সাম্রাজ্যবাদ, নয়া উদারনীতিবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদ’ বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সেমিনারে কংগ্রেসে যোগদানকারী বিদেশি প্রতিনিধিরা আলোচনা করবেন।

 

Print Friendly, PDF & Email
basic-bank

Be the first to comment on "কমিউনিস্ট পার্টির একাদশ কংগ্রেস শুরু আগামীকাল থেকে"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*