নিউজ ডেস্ক : দিনাজপুরে পীরসহ জোড়া খুনের ঘটনায় ৫ জন সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় এবং অন্য একজন খুনিদের সহযোগিতা করে বলে জানিয়েছেন দিনাজপুরের পুলিশ সুপার হামিদুল আলম।
তিনি বলেন, ‘আটক দুই জনের জবানবন্দি অনুযায়ী মনস্তাত্মিক দ্বন্দ্ব থেকেই কুড়িগ্রামের পীর এসহাক আলীর পরিকল্পনা মোতাবেক খুন করা হয় বোচগঞ্জের পীর ফরহাদ হাসান চৌধুরী ও তার পালিত মেয়ে রুপালী বেগমকে। এই খুনে অংশগ্রহণ করে মোট ৫ জন। আর এদের সহযোগিতা করেন কাদরিয়া মোহাম্মদিয়া দরবার শরিফের খাদেম সাইদুর রহমান। ’
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় দিনাজপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, ‘ফরহাদ হাসানের দরবার শরিফের মুরিদদের নামাজ পড়তে হবে এবং দিন দিন সেখানে মুরিদদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় কুড়িগ্রামের পীর এসহাক আলীর হিংসার জন্ম হয়। এছাড়াও ফরহাদ হাসান চৌধুরী এসহাক আলীর কাছ থেকে অর্থ পাওনাদার ছিলেন। একই সঙ্গে এসহাক আলীকে ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে নিষেধ করেছিলেন ফরহাদ হাসান চৌধুরী। এসব দ্বন্দ্বের কারণে এসহাক আলীর সঙ্গে ফরহাদ হাসান চৌধুরীর মনস্তাত্মিক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় এবং ফরহাদ হাসান চৌধুরীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন এসহাক আলী। হত্যার এই পরিকল্পনা হয় ১২ মার্চ এসহাক আলীর নিজ বাড়িতে। সেখানে ওরছ শেষে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় ও পরের দিন এর বাস্তবায়ন করা হয়। ’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে ২টি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলো পিস্তলে ব্যবহার করা হয়েছিল। হত্যার ঘটনায় যে ৫ খুনি অংশগ্রহণ করে তারা সবাই দিনাজপুর জেলা ও আশেপাশের। এদের মধ্যে একজনের নামে মামলাও রয়েছে। যারা হত্যায় অংশগ্রহণ করেছিল তাদের মধ্যে কোনও জঙ্গি সম্পৃক্ততা নেই বলে প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে। ’
এদিকে নিহতদের ময়নাতদন্তে বলা হয়েছে গুলিবিদ্ধ হয়ে তারা নিহত হয়েছেন। তবে যে দু’জন জবানবন্দি দিয়েছেন তারা জানিয়েছে, প্রথমে ৫ জনের একটি দল সেই দরবার শরিফে প্রবেশ করে। সেখানে সহযোগিতা করে দরবার শরিফের খাদেম সাইদুর রহমান। এসময় রুপালী বেগমকে মুখ চেপে ধরে একটি ঘরে রাখা হয়। পরে তারা ফরহাদ চৌধুরীর ঘরে প্রবেশ করে বালিশ চাপা দেন। এসময় ফরহাদ চৌধুরী নিস্তেজ হয়ে পড়লে গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়। পরে তারা বেরিয়ে এসে রুপালী বেগমকেও গুলি করে হত্যা করে।
সংবাদ সম্মেলনে দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মাহফুজ জামান আশরাফ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মিজানুর রহমান, কাহারোল সার্কেল এসপি রুহুল আমিন উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১৩ মার্চ দিনগত রাত ৮টার দিকে বোচাগঞ্জ উপজেলার দৌলা এলাকায় কথিত পীর ফরহাদ হাসান চৌধুরী ও তার পালিত মেয়ে রুপালী বেগম গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ফরহাদ হোসেন চৌধুরী দিনাজপুর পৌর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি। তিনি ছিলেন দিনাজপুর জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। পরে ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচিত হন।
স্থানীয় ও স্বজনেরা জানান, ২০০৬ সালের দিকে ফরহাদ হাসান চৌধুরী রাজনীতি ছেড়ে দেন। এ সময় তার সঙ্গে পরিচয় কুড়িগ্রামের পীর দাবি করা এসহাক আলীর। তিনি পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানীর (রহ:) অনুসারী ছিলেন। তার সঙ্গে বেশ কিছুদিন চলাফেরার পর ২০১০ সালের দিকে বোচাগঞ্জ উপজেলার দৌলা গ্রামে কাদেরিয়া মোহাম্মদিয়া দরবার শরীফ নির্মাণ করেন ফরহাদ চৌধুরী। এর আগে থেকেই তার বেশ কিছু মুরিদ ও অনুসারী ছিল। দরবার শরীফ নির্মাণ করার পর তার মুরিদ ও অনুসারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এখন পর্যন্ত প্রায় সাত শতাধিক মুরিদ ও অনুসারী রয়েছে। প্রত্যেক সোমবার ও বৃহস্পতিবার রাতভর জিকির চলে। এছাড়াও বৈশাখ মাসে বড় অনুষ্ঠান (ওরস) হয় যেখানে হাজার লোকের সমাগম ঘটে।
জানা যায়, এই দরবার শরীফে মাঝেমধ্যেই আসতেন ‘পীর’ এসহাক আলী। তবে ২-৩ বছর আগে এসহাক আলীর সঙ্গে ফরহাদ চৌধুরীর মতবিরোধ দেখা দেয়। এরপর থেকে তিনি আর দরবার শরীফে আসতেন না, তবে ওই এলাকায় তার কয়েক মুরিদের বাড়িতে যাওয়া আসা করতেন। প্রায় দুই সপ্তাহ আগেও তিনি এই গ্রামে বেড়াতে এসেছিলেন।
Be the first to comment on "দিনাজপুরে জোড়া খুন: কিলিং মিশনে অংশ নেয় ৫ জন"