নিউজ ডেস্ক॥ ‘নতুন সিলেট’ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো শপথ নিলেন সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে শপথ বাক্য পাঠ করান। আর এই শপথ বাক্য পাঠের মধ্য দিয়ে সাবেক মেয়র কামরানকে ছুঁলেন আরিফ। এর আগে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। আরিফও এই মাইলফলক স্পর্শ করে কৃতিত্বের দাবিদার হলেন। এবার আরিফের স্লোগান হচ্ছে- নতুন সিলেট গড়া।
এই স্লোগানকে সামনে রেখে তিনি ৩০শে জুলাইয়ের নির্বাচনে বাজিমাত করেন। আর আরিফুল হক চৌধুরীর বিজয়ে সিলেটে উজ্জীবিত বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
এই বিজয় বদলে দিয়েছে সিলেট বিএনপিকে। জনগণের শক্তি ও সাহস ফিরেছে নেতা-কর্মীদের মধ্যে। সিটি নির্বাচনের পরপরই জাতীয় নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। সিলেটের মেয়র হিসেবে আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম নির্বাচিত হন ২০১৩ সালে। প্রতিপক্ষ ছিলেন সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগের মহানগর সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। ওই নির্বাচনে প্রায় ৩৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে তিনি পরাজিত করেন কামরানকে। নির্বাচনে জয়লাভের পর আরিফুল হক চৌধুরী প্রায় ২৭ মাস দুই দফা কারান্তরীণ ছিলেন। কারান্তরীণ থাকলেও সিলেটের উন্নয়ন ধারা অব্যাহত থাকে। এরপর মুক্তি পেয়ে আরিফুল হক বেরিয়ে এসে ফের উন্নয়ন কাজে মনোনিবেশ করেন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে নতুন সিলেট গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে ৩০শে জুলাইয়ের ভোটে অংশ নেন আরিফ। এবার প্রতীক ছিল ধানের শীষ। দলীয় প্রতীকেও আরিফুল হক চৌধুরী জয় ঘরে তুলে নেন। আরিফুল হক চৌধুরী গতকাল গণভবনে গিয়ে শপথ নিলেও তিনি এখনই দায়িত্ব পাচ্ছেন না। আগামী মাসের শেষদিকে তিনি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। আরিফুল হক চৌধুরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন, আগের পরিষদের মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি ক্ষমতা পাবেন। এবার সিলেটের মানুষের প্রত্যাশা পূরণে তিনি কাজ করতে চান বলে জানান। এজন্য তিনি সরকারসহ সব মহলের সহযোগিতাও কামনা করেন।
এদিকে আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে গণভবনে গিয়ে শপথ গ্রহণ করেছেন সিলেটের নির্বাচিত ২৭ পুরুষ ও ৯ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা। শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে মঙ্গলবারই সবাই ঢাকায় যান। বুধবার সকালে গণভবনে শপথে অংশ নেন। এদিকে- শপথ অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও উপস্থিত ছিলেন। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ১৩ দফা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এই প্রতিশ্রুতির মধ্য ছিল- হকারদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে অপরিকল্পিত ও ঝুঁকিপূর্ণ পুরনো লালদিঘী মার্কেট ভেঙে নতুন সুপরিসরে মার্কেট নির্মাণ করে হকারদের পুনর্বাসন করা, নগরীর সর্বত্রই ওয়াইফাই চালু এবং ইন্টারনেট সুবিধা বাড়ানো, তথ্য প্রযুক্তি ভবন গড়ে তোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা, রাস্তা প্রশস্তকরণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, কদমতলী বাস টার্মিনালকে আন্তর্জাতিক মানে রূপান্তরিত করা, তরল বর্জ্য, ক্লিনিক্যাল বর্জ্য আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ডাম্পিং অটোক্যাপ পদ্ধতি চালু করা, নগরীর ৫টি স্থানে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার সেন্টার স্থাপন করা, ১৮টি স্যানেটারি কক্ষ নির্মাণ পর্যায়ক্রমে নগরীর প্রতিটি বস্তিতে বাস্তবায়ন করা, বস্তিবাসীর জন্য বিশেষ অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা করা, মোবাইল ট্রেনিং সেন্টার চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা, শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্যে স্কুলের সংখ্যা ও আওতা বৃদ্ধি করা, নগরীতে ২৫ শয্যাবিশিষ্ট কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু করা, নারীদের জন্য আলাদা একটি ট্রেনিং ইন্সটিটিউট করার উদ্যোগ গ্রহণ করা, যোগ্যতার ভিত্তিতে সিটি করপোরেশনে চাকরির সুযোগ করে দেয়া।
এছাড়া আরিফুল হক চৌধুরী ২৫, ২৬, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যা নিরসনে মনোযোগ দেয়া ছাড়াও ছড়া-খাল উদ্ধারের পাশাপাশি প্রধান প্রধান সড়কে ডিভাইডার স্থাপনের প্রতিশ্রুত দেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রতিশ্রুত কাজ সমাপ্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে জানান সিলেটে দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচিত মেয়র আরিফ।
Be the first to comment on "‘নতুন সিলেট’ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে দ্বিতীয় দফা মেয়র হিসেবে আরিফের শপথ"