নিউজ ডেস্ক: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু ঘণ্টায় ৬২ কিলেমিটার গতির ঝড়ো হাওয়ার শক্তি নিয়ে সামান্য উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে সরে এসে মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে একপ্রকার স্থির হয়ে আছে।
শুক্রবার সকালে বিশেষ বুলেটিনে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, রোয়ানু আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় আগের রাতে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোর জন্য জারি করা ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সঙ্কেতই বহাল রেখেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রোয়ানুর প্রভাবে ভারতের ওড়িশা ও অন্ধ্র উপকূলে প্রবল বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। বৃষ্টির কারণে ব্যাপক ভূমিধস ও পাহাড়ি ঢলের খবর পাওয়া গেছে শ্রীলঙ্কা থেকে।
আবওয়া বিষয়ক বাণিজ্যিক পোর্টল রোয়ানুর সম্ভাব্য যে গতিপথ দেখিয়েছে, তাতে এই ঘূর্ণিঝড় আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে এগিয়ে এসে শনিবার সকাল নাগাদ চট্টগ্রামের কাছ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ওই সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৯৭ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ১২১ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ওই শক্তির ঘূর্ণিঝড়কে দ্বিতীয় ক্যাটাগরির সাইক্লোন বলা হয়। ঝড়োহাওয়ার গতিবেগ ঘণ্টায় ১১১ থেকে ১৩০ কিলোমিটার হলে তাকে ধরা হয় তৃতীয় ক্যাটাগরির সাইক্লোন হিসেবে।
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল যে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল, সেই ঝড়ে বাতাসের ছিল ঘণ্টায় প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। পঞ্চম ক্যাটাগরির ওই সাইক্লোনকে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ওয়েদার ডটকম জানিয়েছে, রোয়ানু হয়তো প্রলয়ঙ্করী হয়ে ওঠার মতো শক্তি সঞ্চয় করতে পারবে না, তবে প্রচুর বৃষ্টি ঝড়িয়ে ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে পাহাড়ি ঢল, আকষ্মিক বন্যা ও ভূমিধসের কারণ ঘটাতে পারে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে,শুক্রবার ভোর ৬টায় ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর অবস্থান ছিল চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১ হাজার ২০৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিম, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিম এবং মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে।
সে সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝড়োহাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
গভীর নিম্নচাপ থেকে বুধবার গভীররাতে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে, যাতে তারা স্বল্প সময়ের নির্দেশে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে।
সেইসঙ্গে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেতের মানে হচ্ছে- বন্দর ঘূর্ণিঝড় কবলিত। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১ থেকে ৬১ কিলোমিটার। তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো তেমন বিপজ্জনক সময় এখনও আসেনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি ঊপকূলে আঘাত হানার শঙ্কা যেমন রয়েছে, তেমন প্রচুর বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। এ নিয়ে চূড়ান্ত পূর্বাভাসের আগে আরও কিছু সময় পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বাগেরহাটসহ উপকূলীয় এলাকায় থেমে থেমে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। মাঝে মধ্যে বইছে দমকা হাওয়া। উত্তাল হয়ে উঠেছে সাগর।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বাগেরহাট জেলা প্রশাসন এবং মংলা বন্দরের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, চার নম্বর হুঁশিয়ারি সঙ্কেত জারির পর বন্দরে সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বন্দরে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বন্দরের সব নৌযান নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। বন্দরে সব ধরনের জাহাজে মালামাল উঠানামা বন্ধ রাখা হয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশ দিয়েছে বাগেরহাট জেলা প্রশাসন।
দুর্যোগকালীন সময়ে যাতে মানুষ আশ্রয় নিতে পারে এজন্য জেলায় ২৩৫টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি খোলা হয়েছে ১৬টি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।

Be the first to comment on "প্রবল বৃষ্টি নিয়ে’ আসছে রোয়ানু"