শিরোনাম

ফেসবুক থেকে প্রশ্ন নিয়ে পরীক্ষা দিলে ফল বাতিল

নিউজ ডেস্ক : ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে প্রশ্ন নিয়ে পাবলিক পরীক্ষা দেওয়ার প্রমাণ পেলে শিক্ষার্থীর ফল বাতিল করা হবে।
সচিবালয়ে বুধবার (২৯ মার্চ) আসন্ন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সুষ্ঠু ও নকলমুক্ত পরিবেশে নিতে গঠিত জাতীয় মনিটরিং কমিটির সভায় এ তথ্য জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন।
সভায় উপস্থিত ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) উপকমিশনার (ডিসি-উত্তর) শেখ নাজমুল আলমের উদ্দেশে সচিব বলেন, ‘(প্রশ্ন ফাঁসের ক্ষেত্রে) যারা ফেসবুক অ্যাডমিন বা যারা এর সঙ্গে লিঙ্কড আছেন যদি তিনি ছাত্র হন তার ইনফরমেশন আমাদের দরকার। আগামীতে যদি এমন কোনো প্রমাণ পাই যে, কোনো ছাত্র এভাবে পরীক্ষা্ দিয়েছে তার রেজাল্ট বাতিল করতে চাই।’
সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘এটা একট বিশাল বিষয়। জাতি গঠনে আগামী প্রজন্ম যদি এভাবে নষ্টের দিকে এগিয়ে যায়, আমরা যদি প্রতিরোধ করতে না পারি তবে এর দায়-দায়িত্ব আমরা কোনোমতেই এড়াতে পারব না।’
তিনি বলেন, ‘যারা প্রলুব্ধ হচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধেও যেতে হবে। অন্যায় যে করে ও যে সহায়তা করে উভয়েরই সমান শাস্তি। আমরা সে পর্যায়ে না যাই তবে আমাদের ছাত্রদের মধ্যে লোভ থেকে যাবে। আমরা সেটাও প্রতিরোধ করতে চাই।’
‘আগামী দিনে ফেসবুকে অ্যাড দেবে এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা, প্রশ্ন নেওয়ারে উদ্যোগ নেওয়া, সে বিষয়েও আমরা ব্যবস্থা নিতে চাই’ বলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব।
তখন নাজমুল আলম বলেন, ‘স্যার আপনি যখন বলেছেন সেই তথ্য আমারা দেব।’
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘আমরা সুনির্দিষ্ট হয়েই ব্যবস্থা নেব। তিনি ছাত্র হোন, টিচার হোন, অভিভাবক হলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। সংখ্যা যত বড় হোক, যত বড় অপারেশন করা দরকার, প্রয়োজনে অর্ধেক হাত কেটে ফেলতেও রাজি আছি। আর ক্যানসার বহন করতে পারছি না।’
পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘অভিভাবক, শিক্ষক সবাই মনে করত আমরা বাস্তবে কোনো অ্যাকশন নিচ্ছি না। আমরা বসে ছিলাম না কখনোই। অ্যাকশন চাইলে তো চিহ্নিত করে তাকে বের করে নিয়ে আসতে হবে। এটা চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতার করে সামনে নিয়ে এসেছে।’
গত ৩ তিন বছর ধরে বিজি প্রেস থেকে সরাসরি প্রশ্ন ফাঁসের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন নিয়ে যাওয়ার যাতায়াতের পক্ষেও আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি। এরপর যে জায়গা আমাদের শিক্ষক, তাদের হাতে দিলেই আমরা নিশ্চিত যে আমাদের দায়টা গেল। সেই শিক্ষকদের কাছে গিয়ে যখন আমরা এ রকম একটি পরিস্থিতিতে পড়ি যে তারা প্রশ্ন প্রচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যান। তারা শিক্ষক নামের কলঙ্ক। সন্তানের প্রশ্ন পাওয়ার ক্ষেত্রে অভিভাবক যুক্ত হয়ে যান। আমাদের আর যাওয়ার জায়গা থাকে না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এটা আমাদের সবার কাছে অবিশ্বাস্য বিষয় ছিল, এটা খুবই লজ্জার বিষয়। আমরা জানেপ্রাণে চেষ্টা করে এটা ঠেকাব। কোনো সুযোগ দেব না।’
কখনো সরকারকে বিভ্রান্ত করতে ফেসবুকে মিথ্যা প্রশ্ন দেওয়া হয় জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘সত্যি সত্যি কিছু প্রশ্নও দেওয়া হয়। সেগুলো আমরা সঙ্গে সঙ্গে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। সেটা মুছে দেওয়া হয়।’
‘আগামী এইচএসসিতে এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমরা আরও বড় প্রস্তুতি নিয়েছি। অতীতে যে পদ্ধতিতে তারা এ কাজগুলো করেছে তা যাতে করতে না পারে। সে বিষয়গুলো আমাদের আরও সতর্ক হওয়ার বিষয় আছে। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ’ বলেন নুরুল ইসলাম নাহিদ।
মন্ত্রী বলেন, ‘কেউ রেহাই পাবে না। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত সর্বোচ্চ যে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘সবার কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি যার যার ক্ষেত্রে সতর্ক হয়ে সঠিক ন্যায্য কাজ করেন। ওই ধরনের শিক্ষক যারা অবশ্যই কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর দয়া করে মান-ইজ্জত থাকতে থাকতে এখনই নিজেরা স্বেচ্ছায় সরে যান, আপনাদের জন্য শিক্ষকতা পেশা নয়। শিক্ষকতা পেশা নিবেদিত প্রাণ জনগণের জন্য, দেশের জন্য, ভবিষ্যতের জন্য যারা করবেন তারা সম্মনের সঙ্গে এগিয়ে যাবেন।’
ডিবির উপকমিশনার (ডিসি-উত্তর) শেখ নাজমুল আলম বলেন, ‘এ বছর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে গুজবের প্রেক্ষাপটে গত ২ মাসে মোট ২৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ৩টি। এর মধ্যে শিক্ষক, ছাত্র, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাডমিন রয়েছেন। এদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে একটি রিপোর্ট দেব। স্কুল, কলেজ ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা মন্ত্রণালয় নেবে।’
মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে ফেসবুকে এইচএসসি প্রশ্ন বিক্রির একটি গ্রুপের সন্ধান পাওয়া গেছে জানিয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এদের চিহ্নিত করেছি। এ দুজন অ্যাডমিনের নেতৃত্বে এ গ্রুপে সদস্য আছে ২৫ হাজার। আশা করছি আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে এ চক্রকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হব। এটা করতে পারলে ২ এপ্রিলের পরীক্ষার ওপর ভালো প্রভাব পড়বে।’
নাজমুল আলম আরও বলেন, ‘শিক্ষকদের কাছ থেকে জাতির প্রতি এত বড় প্রতারণা আমরা মোটেই আশা করতে পারি না। এটা যারা করেছে, নরমাল যে শাস্তি এই শাস্তিতে হবে না। আইনে একেবারেই কম শাস্তি, অলরেডি কয়েকজন জামিনে বের হয়েও গেছে। আইন কড়াকড়ি করা যায় কি না সে বিষয়ে আপনারা বিবেচনা করবেন।’
বিশিষ্টজন ও শিক্ষাবিদদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা দয়া করে শিক্ষকদের বলুন শিক্ষক হয়ে শিক্ষকের মর্যাদা নষ্ট করবেন না। অভিভাবকরা এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে আপনার সন্তানের জীবন নষ্ট করবে না। আপনারা বলুন এমন কথা কোনো সম্মানজনক ব্যক্তি কখনো বলেছেন? কেউ বলেন না। তারা বললে বেশি কার্যকর হয়।’
সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আলমগীর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামানসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email
basic-bank

Be the first to comment on "ফেসবুক থেকে প্রশ্ন নিয়ে পরীক্ষা দিলে ফল বাতিল"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*