নিউজ ডেস্ক: মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর ইন্টারন্যশনাল এয়ারপোর্ট(কেএলএআইএ)-তে মাত্র ১৩শ` রিঙ্গিত মাসিক বেতনে বছরখানেক ধরে কাজ করছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তারিকুল ইমলাম (২৮)। এখনো নিজের পাসপোর্ট হাতে পায়নি। বাড়ির জমি বিক্রি করে প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ করে রঙিন স্বপ্ন বুনে বিদেশে এসেও ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পারছেন না তিনি।
তরিকুল বলেন, “আসার আগে বলেছিল থাকা খাওয়া ছাড়াও মাসে ৩০ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারবো। ভালো থাকার আশায় এসে দেখি সে আশায় গুড়েবালি। কারওয়ান বাজারে তরকারি দোকান ছিল আমার। প্রতিমাসে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা উপার্জন করতাম। এখানে মেলে না কোনো ছুটি। ১২ ঘণ্টা টানা কাজ করতে হয়। নিজের শরীরের অবস্থাও খারাপ হচ্ছে দিন দিনি।”
শুধু তারিকুল ইসলাম নয়, লাখ লাখ টাকা খরচ করে মালয়েশিয়ায় এসে এরকম হতাশার বাণি হাজারো প্রবাসীর মুখে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মূলত কোম্পানিগুলো ভালো বেতন দিলেও বেতনের বেশিরভাগ অংশ চলে যায় আউটসোর্সিংয়ের দালালদের পকেটে। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তারা মূলত শ্রমিকদের জিম্মি রাখে। কেউ যদি দেশে ফিরে যাওয়ার কথা বলে তার পাসপোর্ট আটকে রাখা হয়। এমনকি পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার ভয়ও দেখায় তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, তরিকুলেন মতো অনেকের মনেই রয়েছে বিদেশে কাজ করার ক্ষোভ। একদিকে, এ যন্ত্রণা সইতেও পারছে না, অন্যদিকে আবার ছেড়ে চলেও যেতে পারছে না। প্রবাসে আসার আগে নির্মাণ শ্রমিক বা ভালো কাজের কথা বলা হলেও এখানে দেয়া হয় ক্লিনারের কাজ। এমনকি হোটেলগুলোতেও কাজ করতে হচ্ছে বাংলাদেশি অনেক শ্রমিককে। কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ থাকলেও ছুটি মিলে না। তাদের এই কষ্ট দূর করতে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
মালয়েশিয়া বিমানবন্দরে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় আরেক প্রবাসী জয়নুলের (২৭) সঙ্গে। তিনি বলেন, “কেন যে মানুষ বিদেশে কাজ করতে আসে, এখানে না আসলে বোঝা হতো না। মালয়েশিয়াতে কাজ করার চেয়ে ঝাড়ুর বাড়ি খেয়ে মরে যাওয়াও ভালো। এত কষ্ট আর শরীরে সয় না। দেশের সব কিছু বিক্রি করে এবং লোন নিয়ে এখানে এসেছি। চাইলেও দেশে ফিরে যেতে পারছি না। কেউ যেন কখনো বিদেশে কাজ করতে না আসে।”
বাংলাদেশি শ্রমিকরা এসব সমস্যার সমাধান চান তারা। খুব বেশি উপার্জন না হলেও দেশে যেন মোটামোটি টাকা পাঠানো যায় এবং নিজেও যেন খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে পারে এতটুকু নিশ্চয়তা চায় প্রবাসী শ্রমিকরা। সরকারের সুদৃষ্টি পাওয়ার জন্য নিজেদের দুঃখের কথা দেশবাসীকে জানাতে বলেন।
শ্রমিকদের এ সমস্যার ব্যাপারে কথা হয় কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রথম সচিব এম.এস.কে. শাহীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, “শ্রমিকদের মালয়েশিয়া কাজ করতে আসার আগে চুক্তিনামা ভালো করে পড়া উচিত। নিজে না বুঝলেও যে বোঝে তার সাহায্য নেয়া উচিত। কাজের ধরণ, কত ঘণ্টা কাজ করতে হবে, কত টাকা উপার্জন করা যাবে -এসব বিষয় নিশ্চিত হয়ে আসলে এ ধরনের সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।”
তিনি আরো বলেন, “এর পরেও যদি কোনো সমস্যা হয় বাংলাদেশ দূতাবাসে অভিযোগ করার সুযোগ রয়েছে। আমরা অবশ্যই এই সমস্যা সমাধানে শ্রমিকদের সহযোগিতা করতে চেষ্টা করবো।”
সূত্র: জাগো নিউজ

Be the first to comment on "বৈধ শ্রমিকদের অর্ধেক বেতন খেয়ে ফেলে আউটসোর্সিংয়ের দালালরা"