নিউজ ডেস্ক : শততম টেস্টের প্রথম দিনে মুশফিকদের শরীরী ভাষায় একটা অন্য রকম রোমাঞ্চ যদি খুঁজে পান, তাহলে রোমাঞ্চ কিংবা উত্তেজনার কিছুই আপনারা দেখেননি। সেটি ছড়িয়েছে আসলে পি সারার ক্লাব প্যাভিলিয়নে এবং সেটির জন্ম বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসানের মুখে।
মাহমুদউল্লাহকে টেস্ট দল থেকে বাদ দেওয়া এবং তাঁর ঢাকায় ফিরে যাওয়া না-যাওয়া নিয়ে যা ঘটেছে, সেটি জানতে বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা গিয়েছিলেন নাজমুল হাসানের কাছে। তিনি তাঁর অননুকরণীয় বাচনভঙ্গিতে পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, মাহমুদউল্লাহকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটি তিনিই নিয়েছিলেন। জানতে চাওয়া হয়েছিল এর পেছনে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের কোনো ভূমিকা আছে কি না। এখানে কোনো অস্পষ্টতাই রাখেননি তিনি, ‘হাথুরুর কোনো ভূমিকা নেই। প্রতিটা সিদ্ধান্ত আমার। এখানে হাথুরুর কথা কেন আসে, বুঝি না। এই যে মাহমুদউল্লাহ টেস্টে খেলবে না, এটা তো আমার ডিসিশন।’
বিসিবির সভাপতি বাংলাদেশের দল নির্বাচনী প্রক্রিয়াটা এখন কেমন, সেটিও পরিষ্কার করে দিয়েছেন, ‘আমার কাছে তালিকা যা পাঠায়, নির্বাচকেরা পাঠায়। হাথুরু কিছু পাঠায় না। আমার কাছে খেলোয়াড় তালিকা এলে সেটি যদি আমি অনুমোদন না করি, তাহলে কে কী তালিকা পাঠাল, তাতে কী!’ টেস্ট সিরিজের মাঝপথে মাহমুদউল্লাহর মতো একজন সিনিয়র খেলোয়াড়কে কেন বাদ পড়তে হবে? নাজমুল হাসান এই প্রশ্নেরও উত্তর দিয়েছেন কোনো রাখঢাক না রেখে, যেখানে কলম্বো টু ঢাকা ‘নাটকে’র মূল চিত্রনাট্যটা বুঝে নেওয়া যায়, ‘ওর বাদ পড়ার কারণটা হচ্ছে, এই টেস্টটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাহমুদউল্লাহ, তামিম, সাকিব, মুশফিক এই চারজনের অবদান নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই। ওদের আমরা কত পছন্দ করি, তা মাহমুদউল্লাহকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন। কিন্তু একজনকে পছন্দ করি আগে ভালো খেলছিল দেখে, আর এখন তার ফর্ম নাই, তাকেও খেলাতে হবে? এখানে টিম যদি ভালো পারফর্ম করত, তা-ও একটা কথা। টিমই নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। আমাদের পক্ষে তো বসে থাকা সম্ভব নয়। দলে বদল আমাদের আনতেই হতো।’
উইকেটকিপার লিটন দাস চোটে পড়ে শেষ মুহূর্তে বাদ পড়েছেন। তা না হলে নাজমুল হাসানের কথা অনুযায়ী আরও বড় রকম কিছু দেখা যেত, ‘সত্যি করে বললে এখানে আরও বড় বদল আসত। লিটন ইনজুরিতে পড়েছে বলে সেটি লাগেনি। না হলে আরেকজনও বাদ পড়ত। আমি বলছি বড় একটি বদলের কথা।’ এ কথায় ক্লাবের দোতলার ঘরটায় যেন একটা বোমাই ফাটল। বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা এ ওর মুখের দিকে তাকাচ্ছেন, তাহলে কি অধিনায়ক মুশফিককেও বাদ দিতেন, এমন ইঙ্গিতই দিলেন নাজমুল? আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক বলেছিলেন, মাহমুদউল্লাহর জন্য তাঁদের একটু মন খারাপ হচ্ছে, কিন্তু কিছু তো করার নেই! তাহলে ওই মন খারাপের সূত্র ধরেই বড় বদলের দিকে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রধান? ‘মন খারাপ’ নিয়ে বিসিবির সভাপতি পরে বলেছেন, ‘যে কেউ যেকোনো ম্যাচে বাদ পড়তে পারে। তা নিয়ে খানিকের জন্য কারও মন খারাপ হতেই পারে, কিন্তু সেটি দলের ওপর প্রভাব ফেলবে? কাউকে যদি একটা ম্যাচে বাদ দেওয়া হয়, আর যদি তা দলে প্রভাব ফেলে, তাহলে এমন খেলোয়াড় আমাদের দরকার নেই।’
মাহমুদউল্লাহর ঢাকায় যাওয়া-আসা নিয়ে এই বিভ্রান্তি কেন হলো? বিসিবির সভাপতি বললেন, ‘ওকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তুমি থাকতে চাও, না চলে আসতে চাও। ওর প্রথম প্রতিক্রিয়া, আমি চলে আসতে চাই, আমি আমার বাচ্চার সঙ্গে দুই দিন থাকতে চাই। তারপর ও আমার কাছে অনুরোধ করে ছুটি চেয়েছে। এটা কিন্তু একেবারেই ন্যাচারাল প্রসেস। ও এখনো যেতে চেয়েছিল। কালকেও বলেছিল। আমরা কিন্তু কিছুই বলিনি ওকে।’
মাঠের উত্তেজনার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বিসিবির সভাপতি মাহমুদউল্লাহ প্রসঙ্গে উত্তেজনা ছড়ালেন। আর মাহমুদউল্লাহ শততম টেস্টের প্রথম সকাল নীরবে কাটালেন নিজের হোটেলকক্ষে। নাকি সামনের মহাসমুদ্রের তীরে গিয়ে একটু হাওয়ায় জুড়িয়ে নিয়েছেন তাঁর অন্তর্গত বেদনা! সেটিও হয়তো পরে জানা যাবে বিসিবি সভাপতির মুখে। কোনো কিছু নিয়ে বলতেই তাঁর আপত্তি নেই!
Be the first to comment on "মাহমুদউল্লাহকে বাদ দিয়েছেন পাপন"