নিউজ ডেস্ক : নড়াইলের লোহাগড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপি’র সমাবেশের ওপর আওয়ামীলীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের হামলা,মারপিট ও ভাংচুরের ঘটনায় নড়াইলের বিজ্ঞ সিনিয়র স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল আদালতের নির্দেশে ৪টি এবং থানায় একটি মামলা হয়েছে। বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন নেতা-কর্মী এবং নড়াইল জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক বাদী হয়ে মোট ৭’শ ৪৯ জনের নাম উল্লেখ ও ১ হাজার ৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে লোহাগড়া থানায় পৃথকভাবে এই মামলা দায়ের করেন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২৪ শের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে নড়াইলের লোহাগড়ায় গত ৪ আগস্ট পৌর শহরের কুন্দসী চৌরাস্তায় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ চলাকালে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় বিএনপি কর্মী শহিদুল মল্লিক বাদী হয়ে ১০২ জনের নাম উল্লেখ ও ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে নড়াইলের বিজ্ঞ সিনিয়র স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে গত ১৬ সেপ্টেম্বর লোহাগড়া থানা পুলিশ মামলাটি রেকর্ডভূক্ত করেন। যার মামলা নং ১১/২২৩। একই ঘটনা ও আদালতের নির্দেশে লোহাগড়া পৌর শ্রমিক দলের যুগ্ন আহবায়ক জাহিদুল আলম বাদী হয়ে গত ১৩ নভেম্বর ১৩৫ জনের নাম উল্লেখ ও ৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে লোহাগড়া থানায় মামলা করেন। যার মামলা নং ০৪। অনুরুপ ঘটনায় নড়াইল জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক ইয়াজুর রহমান বাবু, বাদী হয়ে গত ৯ ডিসেম্বর ২৯৫ জনের নাম উল্লেখ ও ৩৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে লোহাগড়া থানায় একটি মামলা করেন। যার মামলা নং ১১/২৯৬।
অপরদিকে ২০২৩ সনের ১লা সেপ্টেম্বর লোহাগড়া মধুমতি আর্মি ক্যাম্পের সামনে বিএনপির সমাবেশে হামলা ও ভাংচুর ঘটনায় উপজেলার শালনগর ইউনিয়ন বিএনপি কর্মী শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ১লা সেপ্টেম্বর নড়াইলের তৎকালিন পুলিশ সুপার সাদিরা খাতুন ও লোহাগড়া থানার ওসি মো: নাসির উদ্দিনসহ ৬ পুলিশ কর্মকর্তার নাম উল্লেখসহ ৩২ জনের নামে আদালতে মামলা করেন। পুলিশ সুত্রে জানা যায়, মামলায় উল্লেখিত বিএনপির পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশস্থলে লোহাগড়া থানা পুলিশের ২টি মোবাইল টিম দায়ীত্বে ছিলেন। যার একটিতে ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন। অপরটিতে ছিলেন ইন্সপেক্টর (অপারেশন) মো: মিজানুর রহমান। একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে লোহাগড়া পৌর বিএনপি নেতা মো: ওহিদ ভূইয়া বাদী হয়ে ১৮৫ জনের নাম উল্লেখ ও ৫’শ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে গত ২৯ ডিসেম্বর ফের নড়াইলের বিজ্ঞ সিনিয়র স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে দুটি মামলা যশোর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছেন। একাধিক সূত্রে আরও জানা যায়, উভয় ঘটনায় বিএনপির আন্তত এক ডজন নেতা-কর্মী অতি উৎসাহী হয়ে আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতা-কর্মী বলেন অর্থের বিনিময়ে নতুন মামলায় আসামীর নাম অর্ন্তভূক্ত না করা, দায়েরকৃত মামলায় বাদী কর্তৃক আদালতকে পাশ কাটিয়ে শুধুমাত্র এ্যাডভোকেটের মাধ্যমে এফিডেভিট করে আসামীর নাম পুলিশের চুড়ান্ত প্রতিবেদন (চার্জশীট) থেকে অব্যহতির সুপারিশে গ্রেফতার হইতে পরিত্রাণ পাওয়া, অভিযুক্ত ও নিরাপরাধ ব্যাক্তিরা মামলা হইতে রক্ষার জন্য বিএনপি নেতাদের দারস্থ হওয়াসহ সর্ব ক্ষেত্রে চলছে রমরমা বাণিজ্য। তারা আরও জানান, দায়েরকৃত মামলায় উল্লেখিত ও অজ্ঞাত আসামীরা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে গ্রেফতার এড়াতে ইউনিয়ন বিট পুলিশের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। বিট পুলিশ তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ আদায় করছেন। আদায়কৃত অর্থ তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে একটি অংশ ওসি, একটি বিট পুলিশ এবং অপরটি সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পেয়ে থাকেন বলেও জানান তারা। এহেন মামলা, বিএনপির নেতা-কর্মী ও পুলিশের হয়রানীতে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের সাধারণ নেতা-কর্মী, সমর্থক ও তাদের পরিবার অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছেন। তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। ২৪ শের নতুন বাংলাদেশে সুশীল সমাজ ও বিএনপির কিছু পরিচ্ছন্ন নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশা, বন্ধ হোক সকল ক্ষেত্রে নিপীড়ন, নির্যাতন ও হয়রানী। গড়ে উঠুক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। তারা এ সব হয়রানী বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: আশিকুর রহমান পুলিশের আর্থিক লেন-দেনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এহেন অনিয়মের বিষয়ে পুলিশ সুপারের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। কোন পুলিশ সদস্য বা, কোন নেতা-কর্মী কোন নিরাপরাধ ব্যাক্তিকে হয়রানী বা ভয়ভীতির মাধ্যমে আর্থিক লেন-দেনসহ হয়রানী করে থাকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Be the first to comment on "লোহাগড়ায় আদালতের নির্দেশে একই ঘটনায় একাধিক মামলা, বাদী-পুলিশ ও নেতাদের রমরমা বাণিজ্য"