লোহাগড়ায় হাতকড়াসহ ফসকে যায় ছাত্রলীগ কর্মী ॥ ১২ ঘণ্টা পর আত্মসমর্পন

নিউজ ডেস্ক॥ নড়াইলের লোহাগড়ায় গত বৃহস্পতিবার (২৩ আগষ্ট) রাত ৯টার দিকে এক প্রতিবাদী ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেফতার করে হাতকড়া পরায় পুলিশ। ঘটনাস্থলে থাকা স্থানীয় লোকজন গ্রেফতার বিষয়ে পুলিশের সাথে প্রতিবাদের প্রাক্কালে সে হাতকড়াসহ সটকে পড়েন। প্রায় ১২ ঘন্টার ব্যবধানে ওই যুবক সেচ্ছায় থানায় হাজির হয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের দক্ষীন পাংখারচর গ্রামের কেরামত (কুমি) মোল্যার ছেলে রোকি মোল্যা (২৮), গত ২৩ আগষ্ট ঈদের পরের দিন বাড়ির অদুরে মধূমতি নদী সংলগ্ন আদর্শ গ্রাম্য বাইপাস সড়কের কালভার্ট রেলিংয়ের ওপর বন্ধুদের সাথে আলাপ-চারিতা করছিলেন। এ সময় লোহাগড়া থানার এসআই শেখ আশরাফ আলী,সংগীয় এএসআই গৌতম কুমার বিশ্বাস, ঘটনাস্থলে পৌছে উপস্থিত সকলের কাছে নাম জিজ্ঞাসা করেন। জিজ্ঞাসার এক পর্যায় পুলিশের কাংখীত নামটি পাওয়ায় তাকে দু’হাত পেছনে রেখে হাতকড়া পরিয়ে চাবিটিও পুলিশ রাখেন হাতকড়ার সাথে। স্থানীয় লোকজন গ্রেফতার বিষয়ে প্রতিবাদ করলে যুবক হাতকড়া চাবীসহ নিয়ে কৌশলে সটকে পড়েন। সংবাদ পেয়ে লোহাগড়া থানার ওসির নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে আসামী পালাতে সন্দেহাতীত সহযোগীতার অপরাধে রোকির পিতা কেরামত মোল্যা ও স্থানীয় আইয়ুব আলী মোল্যা, জসিম মোল্যা ও পিয়াল শেখকে গ্রেফতার করেন। পুলিশের অব্যহত চাপ, গণ গ্রেফতার ও অভিযানের প্রেক্ষিতে ঘটনার প্রায় ১২ঘন্টা পর রোকি সেচ্ছায় থানায় হাজির হয়ে আত্মসমর্পন করেন।
স্থানীয় মঞ্জু বেগম,কমেলা , আফরোজা, রেহানা, শেফালী, সালমা, লিলি, পারভীন, হাজ্বী ইমারত, নাজমুল, বাহাদুর, আওলাদ, লুলু ও রফি শেখসহ প্রায় শতাধিক লোকজন জানায় রোকির নামে ইতোপূর্বে কোন মাদক মামলা নাই। সে কখনো মাদক বিক্রি বা সেবন করে না। সে লোহাগড়া উপজেলা ছাত্রলীগের একজন সক্রিয়কর্মী। সে বেশিরভাগ সময়ে নড়াইলে তার নিকট আত্মীয়ের ব্যাবসা দেখাশোনা ও দলীয় কাজে লোহাগড়া থাকেন। অনেক দিন পর ঈদ উপলক্ষে বাড়িতে এসেছে। সে একজন প্রতিবাদী যুবক, তার সাথে দক্ষীন পাংকার চরের নাকান্দা খেয়াঘাটের ইজারা নিয়ে পাংখারচর কাজীপাড়ার লিচু কাজী,আকিদুল ও দক্ষীন লংকারচর গ্রামের শাহেদ আলীর ছেলে অন্তত ৮-১০টি মাদক মামলার আসামী এলাকায় মাদক স¤্রাট নামে খ্যাত রুবেল সরদারের সাথে খেয়াঘাট ইজারা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দন্দ্ব চলে আসছিলো। ঘাটটি রোকির বংশানুক্রমে পিতা কেরামত,চাচা আইয়ুব আলী,তার পিতা ফুলমিয়া,ফুলমিয়ার পিতা গগন মোল্যা,তার পিতা সোনাউল্লাহ মোল্যা ঘাটটি ইতনা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ইজারা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। রুবেল মোল্যার মাদক ব্যাবসার নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহারের জন্য গত বছর আকিদুল ও লিচু কাজীর সহযোগীতায় ঘাটটি গোপালগঞ্জ জেলায় অবস্থান দেখিয়ে ফুকরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে ভূল বুঝিয়ে ইজারা নেয়। উক্ত অবৈধ ইজারার বিরুদ্ধে রোকি গোপালগঞ্জ জেলার প্রশাসন ও ফুকরা ইউপি চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের সাথে দীর্ঘ সংলাপ,সংগ্রাম ও প্রতিবাদ করে ঘাটটি পূনরুদ্ধার করেন। রোকির ওপর রুবেল মোল্যা, লিচু কাজী ও আকিদুল ফকিরেরচর এলাকার সবুজের কাছে কয়েকদিন আগে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রোকি মোল্যা নাকান্দা খেয়াঘাট অর্ধেক না দিলে পুলিশকে দিয়ে বিপদে ফেলবো।
নড়াইল জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ও লোহাগড়া পৌর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শেখ ছগীর উদ্দিন সনেট বলেন, রোকি মোল্যা একজন ছাত্রলীগের সক্রিয়কর্মী, সে কোন প্রকার অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত নয়।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ এসআই আশরাফ আলী জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওসির নির্দেশক্রমে রোকিকে গ্রেফতার করে হাতকড়া পরানো হয়। ঘটনাস্থল থেকে থানায় আসার সময় পথিমধ্যে লোকজন জড়ো হয়ে জটলা তৈরি করলে ধৃত আসামী হাতকড়া চাবীসহ পালিয়ে যায়। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ প্রবীর কুমার বিশ্বাস বলেন, মাদক বিকিকিনির সংবাদ পেয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে,তবে তার বিরুদ্ধ ইতিপূর্বে থানায় কোন মাদক মামলা নাই। ধৃত আসামীদের মধ্যে শুধু রোকিকে শনিবার আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
basic-bank

Be the first to comment on "লোহাগড়ায় হাতকড়াসহ ফসকে যায় ছাত্রলীগ কর্মী ॥ ১২ ঘণ্টা পর আত্মসমর্পন"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*