শিরোনাম

লোহাগড়া থানার ওসির বিরুদ্ধে গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগ

লোহাগড়া থানার ওসির বিরুদ্ধে গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগ

নিউজ ডেস্ক ॥ নড়াইলের লোহাগড়া থানার ওসি প্রবীর কুমার বিশ্বাস’র বিরুদ্ধে নিরাপরাধ মানুষকে হয়রাণীর মাধ্যমে গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। তার স্বেচ্ছাচারিতা ও অত্যাচারে রীতিমত দিশেহারা ও অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে লোহাগড়ার নিরাপরাধ মানুষ। একের পর এক ঘটছে গ্রেফতার বানিজ্যের ঘটনা। সরেজমিন তথ্যে বেরিয়ে আসে গ্রেফতার বাণিজ্যের ভয়াবহ চিত্র।

লোহাগড়া উপজেলার সাধারণ দিনমজুর থেকে শুরু করে যে কোন পেশার লোক এই অত্যাচারের শিকার হচ্ছে ওসি প্রবীর কুমার বিশ্বাসের কাছে। মোটা অংকের টাকা ছাড়া কোন অভিযোগ বা মামলা গ্রহণ করতে নারাজ তিনি। তার কাছে কোন কাজে গেলে, আগে টাকা, তারপর অভিযোগ বা মামলার এজাহার। আবার কোন কারণে কোন মানুষ পরামর্শ চাইতে গেলেও টাকা। টাকা আর টাকা, সকল কাজেই টাকা। যেন টাকার নেশায় তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ওসির নির্দেশে টাকার পেছনে থানার প্রায় সকলেই ছোটেন। কিন্তু তার বেলায় বিপরীত ভাবে ছোটা। কি বৈধ, কি অবৈধ, টাকা পেলেই হলো। টাকা দিয়ে বৈধ-অবৈধ যে কাজই করতে বলা হোক, তিনি রাজি। তাতে অবৈধ মাদক বা চোরাকারবারী ব্যবসায়ী হলেও সমস্যা নেই। পুলিশ জনগণের বন্ধু যেন শুধু কাগজ-কলম আর প্রবাদে সীমাবদ্ধ। বিপদে পড়ে পুলিশকে সংবাদ দেওয়া মানেই আরও বিপদ ডেকে আনা। এক সময় পুলিশের ওপর হয়তো সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়ে যাবে, তাতেও যায় আসেনা ওসি প্রবীর কুমার বিশ্বাসের।
নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ জসীম উদ্দিন (পিপিএম) এর নেতৃত্বে জেলা পুলিশ সর্বমহলে যখন প্রশংসিত, তখন লোহাগড়া থানার ওসির কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ও নির্যাতিত।
জানা গেছে, গত ১ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়নের মহিষাপাড়া গ্রামের মুন্না মোল্যার বাড়িতে একই ইউনিয়নের চর-মল্লিকপুর গ্রামের রমজান আলী তার বন্ধু লালচান, হিরন ও রহিম মিয়াকে সাথে নিয়ে তার স্ত্রী হীরা পারভীনকে আনতে যায় শশুর মুন্না মোল্যার বাড়িতে। রমজান আলীর সাথে তার শশুরবাড়ির লোকজনদের মধ্যে বণিবনা না থাকায় তারা ডাকাত বলে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন তাদের ধরে বেধড়ক মারপিট করে পুলিশকে খবর দেয়। সংবাদ পেয়ে লোহাগড়া থানার এসআই শাহীনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে তাদের গ্রেফতার করে থানা হাজতে রাখেন। ২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে ৮ হাজার টাকার বিনিময়ে থানা হাজত থেকে আব্দুর রহিম মিয়াকে ছেড়ে দেন ওসি প্রবীর কুমার বিশ্বাস। ওসির সহযোগীতায় মামলার বাদীর আত্মীয়ের রাজনৈতিক গ্রুপ প্রতিপক্ষ হিসেবে ৫হাজার টাকার বিনিময়ে চরমল্লিকপুর গ্রামের শেখ ফারুকুল ইসলামের ছেলে ছাত্রলীগ থেকে যুবলীগের রাজপথের সক্রিয়কর্মী শেখ পলাশ মাহমুদকে পলাতক আসামী করে ছেড়ে দেওয়া আসামী রহিমের স্থলাভিসিক্ত করেন। গ্রেফতারের ৪৪ঘন্টা অতিবাহিত হবার পর গত ৩ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪টার দিকে তাদের ৩জনকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়।
অপরদিকে উপজেলার নলদী ইউনিয়নের ব্রাম্মনডাঙ্গা গ্রামের জনৈক ব্যক্তির স্কুল পড়োয়া মেয়েকে পার্শ্ববর্তী বারইপাড়া গ্রামের মৃত আহম্মদ শেখ’র বখাটে ছেলে মামুন শেখ,ফুসলিয়ে গত ১সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে অপহরণ করে। অপহৃতের পিতা বাদী হয়ে ৪জনের নাম উল্লেখ ও ৪-৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে ওইদিনই লোহাগড়া থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। অপহৃতের ভাই সাব্বির হোসেনের সহযোগীতায় এজাহারে বর্ণীত আসামী সজিব শেখকে একই দিন ঢাকার রুপনগর থানা পুলিশ পল্লবী ক্লাবের সামনে থেকে আটক করেন। সজিবের স্বীকারোক্তিতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আতিকুজ্জামান, ২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে উপজেলার বারইপাড়া গ্রামের নূর মিয়াকে গ্রেফতার করেন। নূর মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে পুলিশকে জানায় অপহৃত মেয়েটি তার হেফাজতে রয়েছে। পরে ৩ সেপ্টেম্বর সকালে নুরমিয়ার ছেলে রাজু মিয়া অপহৃত স্কুল ছাত্রীকে থানায় হাজির করেন। ওই দিন দুপুরে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে মামলায় প্রধান অভিযুক্ত নুরমিয়াকে ছেড়ে দেন ওসি।
গত ২০ আগষ্ট রাত ১২টার দিকে ইতনা ইউনিয়নের রাধানগর এলাকায় ডাকাতির চেষ্টাকালে কোটাকোল ইউনিয়নের চর-কোটাকোল গ্রামের অজ্ঞাত নামের দুই যুবককে স্থানীয়রা আটক করে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনা স্থলে পৌছে দুই যুবককে গ্রেফতার করে থানা হাজতে রাখেন। পরে ২১ আগষ্ট গভীর রাতে ৪০হাজার টাকার বিনিময়ে মুক্তি মেলে দুই যুবকের।
গত ২৩ আগষ্ট রাত ৯টার দিকে উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের দক্ষীন পাংখারচর গ্রামের কেরামত মোল্যার ছেলে রোকি মোল্যা হাতকড়াসহ পালিয়ে যায়। সন্দেহাতীত সহযোগীতার অপরাধে কেরামত মোল্যা ও স্থানীয় আইয়ুব আলী মোল্যা, জসিম মোল্যা, পিয়াল শেখ ও একজন সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘটনার প্রায় ১২ ঘন্টা পর রোকি মোল্যা থানায় সেচ্ছায় হাজির হলে লক্ষাধিক টাকায় সেনা কর্মকর্তাসহ ওই পাঁচজন মুক্তি পান বলে নাম প্রকাশ ও বিষয়টি গোপন রাখার শর্তে ভূক্তভোগী পরিবারের লোকজন জানান।

এছাড়াও প্রতি রাতে অভিযান চালিয়ে নিয়মিত মামলা, জিআর ও সিআর মামলার গ্রেফতারী পরোয়ানা ও মাদক ব্যবসায়ীসহ অসংখ্য আসামীকে গ্রেফতার করে সূর্য্য ওঠার আগে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ওসি প্রবীর কুমার বিশ্বাস’র বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায় হওয়ার সুবাদে সব কিছুর নিয়ন্ত্রন করেন সাতক্ষীরা জেলার দুই উপ-পরিদর্শক।

শুধু তাই নয়, গত ১জুলাই ওসি প্রবীর কুমার বিশ্বাস, থানায় যোগদানের পর থেকে কেউ নির্যাতিত হয়ে থানায় মামলা করতে গেলেও তাকে টাকা দিয়ে মামলা করতে হয়। টাকা দিয়ে মামলা করার পর আবার ওসির মাধ্যমেই থানার ভিতরে সমাধান করতে হবে,আবারও টাকা দিয়ে। না হলে আসামী হিসেবে অর্ন্তভূক্ত করে চুড়ান্ত প্রতিবেদন (চার্জশীট) দেওয়ার হুমকী দেন তিনি। হত্যা মামলাসহ কোন দাগী আসামী গ্রেফতার হলেও টাকার বিনিময়ে মামলার নথি গোপন রেখে জমি-জমা বিরোধ বিষয়ক (২৬) অথবা সন্দেহ জনক (৫৪ ধারায়) গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরন করেন বলে জানা গেছে।
ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নড়াইল পুলিশ সুপারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার ও লোহাগড়ার সচেতন মহল। এসব অভিযোগের বিষয়ে ওসি প্রবীর কুমার বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন।

Print Friendly, PDF & Email
basic-bank

Be the first to comment on "লোহাগড়া থানার ওসির বিরুদ্ধে গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগ"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*