নিউজ ডেস্ক : শিগগিরই সব শ্রমিকদের জন্য আসছে প্রভিডেন্ট ফান্ডের ঘোষণা। এতে অপ্রাতিষ্ঠানিক সব শ্রমিকরাই পাবেন সুবিধা। এক্ষেত্রে কোনো শ্রমিক ১শ’ টাকা জমা রাখলে সরকার দেবে আরও ১শ’ টাকা।
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিলেই আগামী ১ মে শ্রমিকদের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ডের ঘোষণা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে সব অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক উদাহরণস্বরুপ বলা যায়- কৃষি শ্রমিক, যে কিনা কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত নন, তিনিও এ সুবিধা পাবেন। এটা হবে ১০ বছর ও ১৫ বছর মেয়াদি।
পোস্ট অফিসে নিবন্ধনের মাধ্যমে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে কোনো অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক এ সুবিধা পাবেন। তিনি অ্যাকাউন্ট খোলার সঙ্গে সঙ্গেই সরকার তা জানতে পারবে। শ্রমিক যদি ১শ’ টাকা রাখেন সরকার আরও ১শ’ টাকা সেই অ্যাকাউন্টে জমা দেবে। ২শ’ টাকা রাখলে সরকারও ২শ’ টাকা জমা দেবে। আবার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই যদি কোনো ব্যক্তি মারা যান তাকে আরও ২ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ড স্কিম’।
কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত কারণে আহত ও নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ বিষয়ে জাতীয় মানদণ্ড’ শীর্ষক মতবিনিময় সভাটি যৌথভাবে আয়োজন করে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) ও বাংলাদেশ ইস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস)।
মুজিবুল হক বলেন, কোনো অযৌক্তিক দাবি জানালে হবে না। বৃটেনে গণতন্ত্র চালু হয়েছে ১২০০ সালে। আর আমাদের গণতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে ৯০ সালের পর থেকে। ইউরোপ-আমেরিকার যে সক্ষমতা, তাদের স্ট্যান্ডার্ড চাইলে কোনো লাভ নেই। আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত দাবি জানাতে হবে। ৪০-৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি অযৌক্তিক।
তিনি বলেন, শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের জন্য একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া ক্ষতিপূরণের জন্য একটি আলাদা তহবিল গঠন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে শ্রমিকের বেতন থেকে একটি অংশ, মালিক দেবে একটি অংশ, আর সরকার দেবে কিছু অংশ। অনেকেই দাবি করেন, সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে। কিন্তু জনগণ কোনো বেসরকারি কর্মচারী বা শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ট্যাক্স দেয় না। এটা পৃথিবীর কোনো সরকারও দিতে পারে না।
এছাড়া শ্রমিকের চেয়ে জনগণই বেশি মারা যায়, তাদের ক্ষতিপূরণ কে দেয়? তাই সবাই সমন্বিতভাবে একটি সমাধানে পৌঁছতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, মামলা করে মালিকদের কাছ থেকে তেমন কিছু আদায় করা যায় না। আবার এতে সময়ও লাগে প্রচুর। তাই যা করার যৌক্তিক উপায়ে আলোচনার মাধ্যমেই করতে হবে।
বিলস’র ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর আলীর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- বিলস’র নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ, উপদেষ্টা রায় রমেশ চন্দ্র, শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের যুগ্ম-সমন্বয়কারী চৌধুরী আশিকুল আলম, গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের যুগ্ম-সমন্বয়কারী কামরুল আহসান, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, অ্যাডভোকেট তাপস কান্তি বল, ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ’র মহাসচিব কুতুব উদ্দিন আহমদ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, কম্বোডিয়ার অর্থনীতির আকার বাংলাদেশের চেয়ে কম। কিন্তু তারা শ্রমিকের বেতনের ০.৮ শতাংশ নিয়ে একটি তহবিল করে, চীন ০.৯ শতাংশ নেয় এবং জার্মানি ০.৫ শতাংশ নিয়ে একটি তহবিল গঠন করে। যেখান থেকে শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ দেয়। কাজেই বাংলাদেশেও শ্রমিকের বেতনের একটি নির্দিষ্ট অংশের সঙ্গে মালিক ও সরকারের সহায়তা একটি তহবিল গঠন করা যেতে পারে। যেখান থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাবে।
ক্ষতিপূরণের জন্য আলাদা তহবিল দরকার। কেননা, ওয়েলফেয়ার ফান্ড আর ক্ষতিপূরণ তহবিল এক নয়। বক্তারা শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের জন্য ইন্স্যুরেন্স করার পদক্ষেপ নেওয়ারও দাবি জানান। তবে অনেক মালিক গ্রুপ বিমা সুবিধা দেন। কিন্তু এ গ্রুপ বিমা আসলে সব শ্রমিক পান না। ২০-২৫ জনকেই কেবল দেওয়া হয়। অর্থাৎ এ সুবিধাটা হচ্ছে শুভঙ্করের ফাঁকি। তারা ন্যূনতম ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান।
Be the first to comment on "শ্রমিকদের জন্য আসছে প্রভিডেন্ড ফান্ড সুবিধা"