শিরোনাম

সীতাকুণ্ডে নিহত আরও দুই জঙ্গির পরিচয় মিলেছে

নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের জঙ্গি আস্তানায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত চারজনের মধ্যে আরো দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। এরা হলেন-রাজধানীর মিরপুর থেকে আট মাস আগে নিখোঁজ হওয়া দুই যু্বক আয়াত আল হাসান (১৯) ও রিফাত আল হাসান (১৭)। সম্পর্কে তারা দুজন খালাতো ভাই বলে পুলিশ জানায়।
সীতাকুণ্ড নামার বাজারে সাধনকুটিরে ১৫ মার্চের প্রথম অভিযানে গ্রেফতার হওয়া ‘জঙ্গি’ দম্পতি জহিরুল ও আর্জিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছায়ানীড়ে নিহত এ দুই জঙ্গির পরিচয়ের বিষয়টি জানতে পারে পুলিশ।
তবে দুজনের পরিচয় শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করবে পুলিশ। এ জন্য স্বজনদের ডিএনএ-ও সংগ্রহ করা হবে।এজন্য নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সীতাকুণ্ড যাওয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে খবর দেওয়া হয়েছে।ছায়ানীড়ে এক শিশুসহ নিহত ৫ জনের মধ্যে দুজনের পরিচয় অভিযানের পরদিনই জানা গিয়েছিল।
তারা হলো-সাধনকুটির থেকে গ্রেফতার জঙ্গি সদস্য জহিরুলের বোন জোবাইদা এবং ভগ্নিপতি মোহাম্মদ হাসান কামাল উদ্দিন (২৫)। এরা বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের বাসিন্দা। কামাল উদ্দিন নাইক্ষ্যংছড়ির উত্তর বাইশারী গ্রামের মোজাফফর আহমেদের ছেলে। আর জুবাইদা নূর আলমের মেয়ে।
নিহত জঙ্গি দম্পতির পরিচয় জানা গেলেও অপর দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হতে পারছিল না পুলিশ। শেষ পর্যন্ত তাদের পরিচয় মিলেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।
পুলিশের মতে, নিহতরা সবাই নব্য জেএমবির অঙ্গ সংগঠন দাওলাতুল ইসলামের সদস্য। এবং চট্টগ্রামের পটিয়া সাতকানিয়া লোহাগাড়া, সীতাকুণ্ড মীরসরাই এলাকাজুড়ে এ নব্য জেএমবি’র নেটওর্য়াক গড়ে তুলেছে।পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, নিহত ৪ জঙ্গির মধ্যে দুইজনের পরিচয় আমরা প্রথমেই পেয়েছিলাম। আত্মঘাতী হামলায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাওয়া অপর দুজনের পরিচয়ের ব্যাপারে আমরা ধোঁয়াশায় ছিলাম।পরে আমাদের কাছে থাকা ছবি দেখে জহিরুল ও আর্জিনা জানায়, আয়াত এবং রিফাত এই আস্তানায় ছিল। সাংগঠনিকভাবে তারা রাশেদ এবং হৃদয় নামেই পরিচিত।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৯ আগস্ট ঢাকার মিরপুরের বাসা থেকে বের হয়ে যায় আহমেদ রিফাত আল হাসান এবং তার খালাতো ভাই আয়াত আল হাসান। নিখোঁজের ঘটনায় আয়াতের মা মুনমুন আহমেদ মিরপুর থানায় একটি জিডিও করেন। যার নম্বর ৬৩৭।
জিডিতে তিনি এ দুই সহোদর বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় দুটি চিরকুট রেখে যায় বলেও উল্লেখ করেন।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা জানান, রিফাত ও আয়াত দুজন আপন খালাতো ভাই। রিফাত এ লেভেলের ছাত্র। আয়াত কিছুদিন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিল।
গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে তারা নিখোঁজ হয়। যাওয়ার সময় বাসায় চিঠি লিখে যায় “আমরা আমাদের পথ খুঁজে পেয়েছি, আমাদের চলে যাওয়ার জন্য আরেফিনকে দায়ী করো না।”
তারা দুজনই মিরপুরের পূর্ব মণিপুরের বাসিন্দা। আরেফিন তাদের মামাতো ভাই। তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।
পুলিশ সুপার আরও জানান, অনুসন্ধানে জানতে পেরেছি রিফাত ও আয়াত দুজনই ছদ্মনাম ব্যবহার করে নব্য জেএমবি হয়ে কাজ করছিল। তাদের সাংগঠনিক নাম ছিল আকাশ ও হৃদয়।
সীতাকুণ্ডের ঘটনার দুজন চট্টগ্রামের পটিয়ার একটি বাড়িতে চার মাস ছিল। মীরসরাইয়ে অভিযানের দিন পুলিশের একটি টিম পটিয়ার সে আস্তানায় অভিযান চালালে তার আগেই টের পেয়ে তারা আস্তানা পাল্টিয়ে এক সপ্তাহ আগে সীতাকুণ্ডের ছায়ানীড় বাড়িতে উঠে।
এদিকে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহতদের ময়নাতদন্ত শেষে চারজনেরই লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মর্গে রাখা হয়েছে।
আর গ্রেফতারকৃত জঙ্গি দম্পতি জহিরুল ও আর্জিনাকে ১২ দিনের রিমাণ্ডে নিয়ে পুলিশের পাঁচটি টিম টানা জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
জঙ্গি আস্তানায় নিহত দুই দম্পতির স্বজনরা (পিতা মাতা ও ভাই) রবিবার (১৯ মার্চ) নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে সীতাকুণ্ড থানায় এসেছে। মূলত পুলিশ তাদেরকে লাশ বুঝে নেয়ার কথা বলে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। সীতাকুণ্ড থানায় রাখা এসব স্বজনদের সাথে সাংবাদিকদের কথা বলতে দেয়নি বলে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানায়।
উল্লেখ্য, বুধবার (১৫ মার্চ) দুপুরে সীতাকুণ্ড পৌর সদরের লামারবাজার আমিরাবাদ গ্রামের সাধন কুটির নামে একটি বাড়ি থেকে বাড়ির মালিক ও স্বজনরা জঙ্গি সন্দেহে এক নারীসহ দুইজনকে আটক করে। পরে পুলিশকে খবর দিলে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ বাড়িটি ঘেরাও করে দুজনকে আটক করে সে বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ গ্রেনেড ও বিস্ফোরক উদ্ধার করে।
আটক দুজনের দেয়া তথ্যমতে প্রায় এক কিলোমিটার পুর্বে সীতাকুণ্ড ডিগ্রি কলেজের পিছনে প্রেমতলা চৌধুরী পাড়ার “ছায়ানীড়” নামে অপর একটি ভবনের অভিযান চালাতে গেলে ভবনের ভেতর থেকে পুলিশের উপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে সীতাকুণ্ড থানার ওসি(তদন্ত)সহ ২ পুলিশ আহত হয়। এরপর পুলিশ তল্লাশি বন্ধ করে ভবনটি ঘেরাও করে রাখে।
টানা ২০ ঘন্টা ঘেরাও করে রাখার পর দিন বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) সকাল ৬টায় পুলিশ, সোয়াত ও র‌্যাবসহ কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সমন্বয়ে যৌথ বাহিনীর ‘অপারেশন অ্যাসল্ট-১৬’ পরিচালনা করে। এতে ভবনটির ২১ বাসিন্দাকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়।
অভিযানে যৌথবাহিনীর গুলিতে এবং আত্মঘাতী বোমা হামলায় এক শিশুসহ ৫ জন মারা যায়। এরপর থেকে গত কয়েকদিন ছায়ানীড় ভবনের দফায় দফায় তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ বিপুল পরিমাণ গ্রেনেড, বিস্ফোরক ও শক্তিশালী বোমা তৈরির উপকরণ জব্দ করে।

Print Friendly, PDF & Email
basic-bank

Be the first to comment on "সীতাকুণ্ডে নিহত আরও দুই জঙ্গির পরিচয় মিলেছে"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*