নিউজ ডেস্ক॥ রাজধানীতে আয়োজিত কর্মী সমাবেশ থেকে সরকারবিরোধী যেকোনো ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার ডাক দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের নেতারা। নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবে অক্টোবরে দেশের তিন বিভাগীয় শহর ও এক জেলায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এছাড়া অক্টোবরে ঢাকায় সমাবেশ করবে ১৪ দলীয় জোট। গতকাল মহানগর নাট্যমঞ্চে ১৪ দল আয়োজিত কর্মিসভায় এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম। নির্বাচন সামনে রেখে সরকারবিরোধী নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক রাখতে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত মাঠ দখলে রাখার ঘোষণা দেন জোটের নেতারা। বেলা পৌনে চারটার দিকে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে এ সমাবেশ শুরু হয়। বেলা ২টা থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে জোটের নেতাকর্মীরা স্লোগান নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। কর্মিসভার প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, আন্দোলনের নামে রেললাইন তুলে ফেলার চেষ্টা করবে, পাহারা দিতে হবে যেন তারা তা করতে না পারে। আন্দোলনের নামে তারা রাস্তা-ঘাট বন্ধ করতে পারে, পাহারা দিতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে। সন্ত্রাসী কার্যকলাপ যারা করবে তাদেরকে ধরিয়ে দিতে হবে, প্রতিহত করতে হবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমস্ত ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এ দেশে গণতান্ত্রিক সরকার কায়েম হবে। তাই ১৪ দলের নেতাকর্মীদের শপথ নিয়ে আগামীতে প্রস্তুতি নিতে হবে। আন্দোলনের ক্ষমতা তাদের নেই। আন্দোলন তারা করবে না। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তারা যদি প্রমাণ করতে পারতো যে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না, তাহলে আজকে তাদের কথায় যুক্তি থাকতো। তারা কোনো সংগ্রাম করে না, তারা পরাজয় মেনে নিয়েছে। তিনি বলেন, কোনো মানুষ যদি নদীতে পড়ে যায় সে বাঁচার জন্য খড়-কুটা যা পায় তা ধরে বাঁচতে চায়। খালেদা জিয়ার ২০ দল ডুবে যাচ্ছে, ওই খড়-কুটা ধরে আজকে তারা যুক্তফ্রন্ট করতে চায়, তারা আজকে অনেক বড় জোট করতে চায়। কিন্তু কোনো জোটে কাজ হবে না। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরে আমির হোসেন আমু বলেন, সবচেয়ে বড় জোট, মানুষের জোট। সেই জোট শেখ হাসিনার সঙ্গে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। ১৬ কোটি মানুষ আজকে যে উন্নয়ন পেয়েছে, পদ্মা সেতু, পায়রা বন্দর, মেট্রোরেল বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। মানুষ এটা দেখতে চায়। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্ব মানুষ দেখতে চায়। বিশ্ব নেতারা শেখ হাসিনার মঙ্গল কামনা করছেন। তিনি আবার জয়যুক্ত হয়ে ফিরে আসুন- এটাই তারা কামনা করছেন। শেখ হাসিনা আজকে জাতীয় নেতা নন, বিশ্ব নেতৃত্বের অন্যতম নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, চক্রান্তকারীরা চক্রান্ত শুরু করেছে। এখন ঘরে বসে থাকার সময় নয়। সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি বলেন, এই মহানগর নাট্যমঞ্চে ড. কামাল হোসেন আর ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি জোট হয়েছে। ওই জোট হচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীদের জোট। আমরা তার জবাব দেয়ার জন্য এখানে সমাবেশ ডেকেছি। তিনি বলেন, তারা সমাবেশ ভণ্ডুল করতে আজকে কর্মসূচি দিয়েছিল। তখন বলেছিলাম, দুনিয়ার কোনো শক্তি নেই আমাদের সমাবেশ বন্ধ করার। আমরা হলাম বাঘের বাচ্চা। আওয়ামী লীগ, ১৪ দলের কর্মীরা বাঘের বাচ্চা। যত বাধা দিবে আমরা তত বেশি অগ্রসর হবো। আজকে কর্মিসভা নয়, জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, চক্রান্ত শুরু হয়েছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে, বাংলার জনগণের বিরুদ্ধে। বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, এটা ২০১৪ সাল নয়, ১৮ সাল। তোমাদের মরণকাল এ বছরই হবে। বিএনপি-জামায়াত লোক ভাড়া করছে। পরিত্যক্ত, পলায়নকারীদের ভাড়া করছো। যাদের নীতি নাই, ঠিকানা নাই। পলায়ন করতে অভ্যস্ত, ওই নেতাদের ভাড়া করছে। খেলার মাঠে খেলোয়াড় ভাড়া করা যায়। রাজনীতি মাঠে নেতা ভাড়া করা হয় এটা প্রথম দেখলাম। ভাড়াটিয়া দিয়ে জয় করতে পারবে না। ভাড়াটিয়া দিয়ে কাজ হয় না। একজন বিদেশে বসে আর দুইজন দেশে বসে চক্রান্ত করছে। জোটের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা সাবধান থাকবেন। সতর্ক থাকবেন। শেখ হাসিনা ও আমরা যখন ডাক দিব তখন কেউ ঘরে বসে থাকবেন না, ঘর থেকে বেরিয়ে আসবেন। ১৪ সালে জ্বালাও-পোড়াও করছে এবার হবে না। আমাদের ঐক্য দরকার। মাত্র কয়দিনের নোটিশে আপনারা আজকে এখানে এসেছেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের বিকল্প হচ্ছে গণতন্ত্র। কোনো অবৈধ সরকারকে ক্ষমতায় আনার চক্রান্ত করছেন, যারা চক্রান্ত করছেন তাদের কালো হাত ভেঙে দেয়া হবে। বিএনপি-জামায়াতকে কোনো ছাড় দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে, নির্বাচনের ফলাফল যা হবে আমরা মেনে নিবো। আগামী নির্বাচনে কোনো ভুল করবেন না। ভুল করলে এদেশে আবার হাওয়া ভবনের রাজত্ব তৈরি হবে। সমাবেশে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবির সময়, ওয়ান-ইলেভেনের সময় ড. কামাল হোসেনকে পাওয়া যায়নি। নির্বাচনের আগে উনাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। আর এখন উনি এসেছেন গণতন্ত্র্ত্র উদ্ধার করতে। বদরুদ্দোজা চৌধুরী রেললাইন ধরে পালিয়েছিলেন তারেক রহমানের ধাওয়া খেয়ে। দুই পলায়নপর নেতা আর একজন পলাতক নেতা মিলে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি কায়েম করতে চায়। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আমরা পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করি না, করবো না। যারা ৯ বছরে ৯ মিনিট রাস্তায় নামতে পারে না তাদের সঙ্গে ১৪ দলীয় জোট বা আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টির কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, নির্বাচন হচ্ছে, নির্বাচন হবে। বিএনপি-জামায়াত যদি আবারো আগুন সন্ত্রাস করে, শিশু হত্যা করে, আমাদের ভাইকে হত্যা করে তাহলে এবার জনগণ আর আপনাদের মাফ করবে না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাবো। জাতীয় পার্টি জেপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, নির্বাচনের আগে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু হয়। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে সেসব মোকাবিলা করতে হবে। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। প্রয়োজনে আমরা আবার দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো। কর্মী সমাবেশটি সঞ্চালন করেন ঢাকা মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক শাহে আলম মুরাদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাসদ (একাংশ) সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জেপি মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাৎ হোসেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান প্রমুখ। সমাবেশ থেকে আগামী ৯ই অক্টোবর রাজশাহী, ১০ই অক্টোবর নাটোরে এবং ১৩ই অক্টোবর খুলনায় সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়া হয়।
Be the first to comment on "১৪ দলের কর্মী সমাবেশ॥ বিএনপির সকল ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়ানোর ডাক"