নিউজ ডেস্ক ॥ ভারতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা এই প্রথমবারের মতো ঘোষণা করেছেন যে, আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা বা এনআরসি থেকে যাদের নাম বাদ পড়বে তাদের বাংলাদেশেই ‘ডিপোর্ট’ করা হবে। বিজেপির প্রভাবশালী সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে এনআরসি বিষয়ক এক আলোচনাসভায় তাদের এই নীতির কথা ঘোষণা করেছেন। সেখানে তিনি বলেন, তাদের পরিকল্পনা হল তিনটে ডি – ডিটেক্ট, ডিলিট ও ডিপোর্ট।”প্রথম ধাপে অবৈধ বিদেশি কারা, তাদের শনাক্ত করা হবে (ডিটেক্ট) – যেটা এখন চলছে,” তিনি বলেন। “তারপর ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়া ও বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার প্রক্রিয়া শুরু হবে (ডিলিট)। আর তারপর আমরা তাদের বাংলাদেশে ডিপোর্ট করবো।”এর আগে বিজেপির শীর্ষ স্তরের কোনও নেতাই এত স্পষ্টভাবে এনআরসি থেকে বাদ-পড়া লোকজনকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলেননি। ওই একই আলোচনাসভায় হাজির ছিলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালও। তিনি মন্তব্য করেন, ‘অবৈধ’ বিদেশিদের খুঁজতে আসামের পর এবার সারা ভারতেই এনআরসি প্রক্রিয়া চালু করা উচিত। দিল্লি নিশ্চুপ, তবে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বাংলাদেশে ডিপোর্ট করার কথা পরিষ্কার করে বললেও ভারত সরকার এখনই এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাইছে না। দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার এ বিষয়ে বিবিসির এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আমরা এনআরসি প্রক্রিয়া নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলছি। “ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পরিচালিত এই প্রক্রিয়া যে এখনও শেষ হয়নি এবং খসড়ায় যাদের নাম বাদ পড়েছে তারা যে নিজেদের ভারতীয় নাগরিক প্রমাণ করার আরও অনেক সুযোগ পাবেন সেটাও বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে।”এই মুহুর্তে এর চেয়ে বেশি কিছু আমাদের বলার নেই”, জানাচ্ছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।
বিজেপিতে চিন্তা-ভাবনা, রাম মাধব ‘অবৈধ বিদেশি’দের যেভাবে বাংলাদেশে ডিপোর্ট করার পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেছেন, তাতে পরিষ্কার বিজেপির মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেক ভাবনাচিন্তা হয়েছে। মি: মাধব যখন ডিপোর্ট করার কথা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী সোনোওয়াল-সমেত সভায় উপস্থিত বিজেপির শীর্ষ নেতারা টেবিল চাপড়ে ও তুমুল করতালিতে সেই মন্তব্যকে স্বাগত জানান।
“অনেকে হয়তো প্রশ্ন তুলবেন, বাংলাদেশ আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ, সেখানে কীভাবে আপনি এই লোকগুলোকে ডিপোর্ট করবেন?” মি: মাধব বলেন। ”আরে, বন্ধু তো আপনাদের সবাই – তাই বলে কি তাদের যে সব লোকজন অবৈধভাবে এখানে আছেন তাদের কি ফেরত পাঠানো যাবে না?” তিনি প্রশ্ন করেন।
বাংলাদেশের ‘না’ মি: মাধব আসামের ‘অবৈধদের’ সাথে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা বা সৌদি আরবে অবৈধদের তুলনা করেন। “বাংলাদেশ নিজেরাই তো লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে সে দেশের সঙ্গে সক্রিয় আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছে,” তিনি বলেন। ”সৌদি আরবও সে দেশে থাকা অবৈধ পাকিস্তানি, বাংলাদেশী বা ভারতীয়দের মাঝ মাঝেই ফেরত পাঠায়। কাজেই ডিপোর্ট করার মধ্যে অন্যায় কিছু নেই,” তিনি বলেন। ভারত সরকার বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বিষয়টি ঠিকই ‘কূটনৈতিক দক্ষতায় ম্যানেজ করে নিতে পারবে’ বলেও তিনি দাবি করেন। তবে বাংলাদেশ সরকার অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছে তারা এদের বাংলাদেশী নাগরিক বলে মনে করে না, আর তাই তাদের ফিরিয়ে নেওয়ারও কোনও প্রশ্ন নেই। রাম মাধবের গুরুত্ব, রাম মাধব বিজেপির নিছক একজন সাধারণ সম্পাদক মাত্র নন – দলের কাশ্মীর নীতি থেকে শুরু করে উত্তর-পূর্ব ভারতের নীতি, সবই তিনি দেখাশুনো করেন। ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদের প্রবর্তক রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএসের সঙ্গে বিজেপির প্রধান সেতুও তিনি। বিজেপির পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রেও দলের বাংলাদেশ বিষয়ক নীতি ও কর্মকান্ডও পরিচালিত হয় রাম মাধবের নির্দেশে। এই কারণেই রাম মাধব যখন এনআরসি থেকে বাদ পড়া লোকজনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলেন, সেটাকে আলাদা গুরুত্ব দিতে হয়। বস্তুত এটা যে তার কোনও ব্যক্তিগত দাবি নয়, বরং বিজেপির ‘সুচিন্তিত মতামত’, সেটাও তিনি সোমবার সভার পর একান্ত আলোচনায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন। ভারতে জুলাই মাসের শেষে আসামের জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি)-র যে দ্বিতীয় খসড়া প্রকাশিতহ হয়েছে, তা থেকে রাজ্যের প্রায় ৪০ লক্ষ বাসিন্দার নাম বাদ পড়েছে। সরকার যদিও বলছে, এরা সবাই আবার আপিল করার বা নথিপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ পাবেন। তারপরেও যদি এনআরসি-তে তাদের নাম না-ওঠে, তাহলেও তাদের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে বা শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টে যাওয়ার অবকাশ থাকবে। কিন্তু এই সব প্রক্রিয়ার শেষেও আসামের বেশ কয়েক লক্ষ লোক অবৈধ বিদেশি হিসেবেই চিহ্নিত হবেন বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। সূত্রঃ বিবিসি।
Be the first to comment on "আসামের ‘অবৈধদের’ বাংলাদেশে পাঠানোর হুমকি"