নিজস্ব প্রতিবেদক: আদালতের বিচারে আদালত অবমাননা করেছেন দুই মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও আ ক ম মোজাম্মেল হক। এ অপরাধের দায়ে ৫০ হাজার টাকা করে তাদের জরিমানাও করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে জরিমানা না দিলে কারাভোগ করতে হবে তাদের।
আদালত অবমাননার দায়ে দুই মন্ত্রীর এ সাজা হওয়ার পর এখন প্রশ্ন উঠেছে কামরুল ইসলাম ও আ ক ম মোজাম্মেল হক আর মন্ত্রী পদে বহাল থাকতে পারেন কি না। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইনি কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার অবশ্য দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদের উপর। তার দৃষ্টিতে বিষয়টি নৈতিকতার সঙ্গে জড়িত।
জামায়াত নেতা যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর আপিলের সম্ভাব্য রায় নিয়ে প্রধান বিচারপতিকে জড়িয়ে দুই মন্ত্রী বিতর্কিত বক্তব্য দেয়ার পর দেখা যায় রায়ে কাসেমের ফাঁসি বহাল থাকে। এরপর অবশ্য দুই মন্ত্রী নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছিলেন। তবে সে আবেদন মঞ্জুর করেননি আদালত। মাহবুবে আলম জানিয়েছেন, আদালত সংক্ষিপ্ত আদেশে বলেছেন- অপরাধের (দুই মন্ত্রীর) গুরুত্ব এতটা বেশি যে, ক্ষমা প্রার্থনা করে তারা যে দরখাস্ত দিয়েছেন, তা গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়েছে।
আদালতের দৃষ্টিতে মন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মোজাম্মেল হকের অপরাধের গুরুত্ব স্পষ্টত অনেক বেশি হলেও এমন অপরাধ করার পর দুই মন্ত্রী স্বপদে বহাল থাকা-না থাকা নিয়ে সংবিধানে স্পষ্ট করে কিছু বলা আছে কি না, সে বিষয়ে জানা নেই বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
দেশের বিশিষ্ট আইনজীবীরাও বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি।
এর আগে দেশে কোনো মন্ত্রীর সাজা হয়েছিল কি না- সাংবাদিকেদর এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, ‘আমার মনে হয় একজন মন্ত্রীর ব্যাপারে ঘটেছিল, হাবিবুল্লাহ খান। খুব সম্ভবত এরশাদের সময়।’ আদালতের রায়ের পর তার মন্ত্রিত্ব ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মনে হয় না।’
রায় ঘোষণার পর বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক উল হক। একই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন কামরুল ইসলামের আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন মনে করেন, তাদের মন্ত্রী পদে বহাল থাকা মোটেও উচিৎ নয়।
কামরুল ইসলাম ও মোজাম্মেল হকের গাড়িতে পতাকা থাকলে দেশের মানুষ লজ্জা পাবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবীর মত, শপথ ভঙ্গের অপরাধে সর্বোচ্চ আদালত দোষী সাব্যস্ত করে দুই মন্ত্রীকে সাজা দিয়েছেন। নৈতিকতার বিষয় থাকায় তাদের অবিলম্বের মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করা উচিৎ। যদি তারা পদত্যাগ না করেন তবে প্রধানমন্ত্রীর উচিৎ তাদের মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে নেয়া।
সাজা হওয়ার পর দুই মন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিৎ বলে মনে করেন বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। ৫০ হাজার টাকা করে তাদের যে জরিমানা করা হয়েছে তা লঘু দণ্ড হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানিকে আদালত অবমাননরা দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে দণ্ড দেয়া হয়েছিল। তাতে তার প্রধানমন্ত্রীত্বের পদ চলে যায়।
আদালত অবমাননায় দুই মন্ত্রীর এ সাজাকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করেছে বিএনপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল এ বিষয়ে বলেছেন, আদালতের এ রায়ের পর ওই দুই মন্ত্রীর মন্ত্রিত্বে থাকার আর প্রশ্নই আসে না। এখন তাদের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে, নিজ থেকেই মন্ত্রিসভা থেকে সরে যাওয়া। অন্যথায় প্রধানমন্ত্রীর নৈতিক দায়িত্ব হবে, মন্ত্রিসভা থেকে ওই দুই মন্ত্রীকে সরিয়ে দেয়া।
পুরো বিষয়টাকে একটা বার্তা হিসেবে দেখছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা। তিনি বলছেন, জাতি জানুক আদালত কতো কঠোর হতে পারে।
মিডিয়ার কারণে মন্ত্রীদের এই অবস্থা
নৈতিক দায়িত্ব থেকে দুই মন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিৎ- অনেকের কথায় ঘুরেফিরে এ বিষয়টা এলেও ভিন্নমত দিয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। তিনি বলেছেন, সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তাদের মন্ত্রিত্ব থাকতে বাধা নেই।
আর পুরো পরিস্থিতির জন্য সাবেক এই মন্ত্রী গণমাধ্যমকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, মিডিয়ার কারণে মন্ত্রীদের এই অবস্থা হয়েছে। মিডিয়াকে আগে বুঝতে হবে কোনটা প্রকাশ করবে, আর কোনটা করবে না।
বেফাঁস মন্তব্যের কারণে এরআগে মন্ত্রিত্ব হারাতে হয়েছে এই সরকারেরই সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে। মন্ত্রিপরিষদ থেকে অপসারণের পাশপাশি দলীয় পদও হারান তিনি। কারাভোগের পর সংসদ সদস্যের পদও ছেড়ে এখন রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েছেন তিনি।
Be the first to comment on "দুই মন্ত্রীর স্বপদে বহাল থাকা নিয়ে প্রশ্ন"