কয়েকজনের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন,অন্যরা হতাশ-মুক্তিযোদ্ধার এহেন আচরনে হতবাক জেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারগন।
নিউজ ডেস্ক॥ আসসালামু আলাইকুম,ভাই আমি হারিস শেখ
-কই আপনি ? আমি নড়াইলে-
আপনি আমাদের কমান্ড কাউন্সিলে চলে আসেন,রূপগঞ্জ তুলোপট্টি-
ওতো বললি সবাই চিনেই দেবেনে। তা ভাই আমিতো সব টাকা আনতি পারিনি-পচিশ দিছি আর কি একলাখ পচাত্তর দিলি কিহবেনে।
আরে হবেনে,আগে আসেন তো।
ভাই আপনি তো কমিটিতে নাই তা কিভাবে আমারে বানাবেন
অপর প্রান্তে অট্টহাসি।
ভাই আমার ছেলে,বেটার বৌ এরা তো কেউ সায় দেচ্ছে না,সবাই বাধা দেচ্ছে।
আরে ভাই আগে আসেন তো, সব রেডি,দেখেন না কি করি..
আচ্ছা আসতিছি। নড়াইল সদরের মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই চলাকালীন ১৭ ফেব্রুয়ারী জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের দপ্তর সম্পাদকের সাথে অনলাইনে আবেদন বঞ্চিত কালিয়া উপজেলার একজন মুক্তিযোদ্ধার কথপোকথন এটি।
সরকারীভাবে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই বন্ধ হবার আগে গত কয়েকদিনে নড়াইল সদরের অনলাইনে নাম অন্তভ’ক্তি ও মুক্তিযোদ্ধা বানাতে অন্ততঃ ২০-২৫ জনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন নড়াইল জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের দপ্তর সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান। এর আগে এমন অভিযোগের প্রমান পাওয়া গেলে ও যাচাই বাছাই বন্ধ হয়ে যাবার পরে ঘুষের টাকা ফেরত দেবার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বেশ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ নুরুজ্জামানের মুক্তিযোদ্ধা থাকার ব্যাপারটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন,অনেকে প্রকাশ্যে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার জন্য তার শাস্তি দাবী করেছেন।
নড়াইল সদর উপজেলায় ১১ ফেব্রুয়ারী থেকে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই শুরু হলেও কমিটি নিয়ে আপত্তির কারনে তা পিছিয়ে যায়। পরবর্তী ঘোষনা অনুযায়ী ২৩ ফেব্রুয়ারী থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত সদরের ১৩ ইউনিয়ন এবং এক পৌরসভার মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অর্ন্তভূক্তির জন্য অনলাইনে আবেদনকৃত ৩৯৬ জন মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার গ্রহনের কথা ।এই ঘোষনার পর থেকেই রূপগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ে বসে তিনি নানা ধরনের জালিয়াতি করতে থাকেন। এসময় অন্ততঃ ২৫ জনের কাছ থেকে তিনি ২৫ থেকে দেড় লক্ষ টাকা গ্রহন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহে কালিয়া উপজেলার বড়দিয়া চোরখালী গ্রামের জনৈক শেখ হারিচউদ্দীন কে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর জন্য ২ লক্ষ টাকায় রফা করেন নড়াইল জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের এই নেতা।এর মধ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারী তারিখে ২৫ হাজার টাকাও প্রদান করেন হারিচউদ্দিন। এই টাকা দিয়ে কাজ হবে কিনা এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হারিচউদ্দিন ১৭ ফেব্রুয়ারী নুরুজ্জামানের সাথে তার ভয়ের কথা বলতে ফোন করেন। এই ফোনালাপ সাংবাদিকদের কাছে এসে যাওয়ায় উল্টো নুরুজ্জামান হারিস শেখ কে মানহানির মামলার ভয় দেখিয়েছেন বলে হারিস শেখ জানিয়েছেন।
নড়াইল সদরের ভদ্রবিলা ইউনিয়নের পলইডাঙ্গা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মৃত কাজী আশরাফ এর মুক্তিযোদ্ধা সনদের জন্য অনলাইনের খরচ বাবদ ১৫ হাজার,জামুকা সনদের জন্য ১০ হাজার এবং মুক্তিযোদ্ধা সনদের জন্য ২ লক্ষ টাকা চুক্তিতে স্থানীয় একজন কমান্ডারের মাধ্যমে ২৫ হাজার টাকা অগ্রিম গ্রহন করেন। যাচাই বন্ধ হয়ে যাবার পরে ১০ মার্চ ঐ কমান্ডারের কাছে ১৫ হাজার টাকা ফেরত দিতে চাইলে তিনি নিতে অস্বীকৃতি জানালে ১১ মার্চ ২৫ হাজার টাকাই ফেরত প্রদান করেন।
একই রকম ভাবে নড়াইল কোর্টচত্ত্বরে একজন ব্যাসায়ীর কাছ থেকে দুই লক্ষ ২৫ হাজার টাকার চুক্তিতে ২৫ হাজার টাকা নেয়া হয় অনলাইন আর জামুকা সনদের জন্য। তিনি নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন,যাচাই বাছাই বন্ধ হবার পরে কয়েকদিন ঘোরাঘুরি করে নুরুজ্জামান ভাই আমার টাকা ফেরত দিয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধকালীন (বি এল এফ)ক্যাম্প কমান্ডার সাইফুর রহমান হিলু বলেন,তিনি (নুরুজ্জামান)নানা জায়গা থেকে টাকা গ্রহন করেছেন এটা সত্য। সে একা না,তার সাথে আরো লোক যুক্ত আছেন। অনেকের টাকা ফেরত দিচ্ছে এটা শুনেছি,সে যখন হুমায়ুন শরীফের (যুদ্ধকালীন কমান্ডার) কাছ থেকে টাকা নিতে পারে তাহলে কাউকেই বাদ দেয়নি। এরা নব্য রাজাকার এদের এসব কর্মকান্ডকে অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনবেন জেলা কমান্ড কাউন্সিল।
মুক্তিযুদ্ধকালীন (বি এল এফ ) নড়াইল সদর মহাকুমা কমান্ডার ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শরীফ হুমায়ুন কবীর বলেন,নড়াইল সদরের মুক্তিযোদ্ধা বাছাইয়ে অনেক অনিয়মনের খবর পেয়েছি।আমার সামনে পলইডাঙ্গা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মৃত কাজী আশরাফ এর সনদের ২৫ হাজার টাকা গ্রহন করে পরে তা ফেরত দিয়েছে নুরুজ্জামান।মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এগুলো একেবারেই গ্রহনযোগ্য নয়।
অভিযোগ বিষয়ে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের দপ্তর সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান বলেন,্এ হোল সবই মিথ্যা কথা,আমার ইমেজ নষ্ট করা জন্য করা হচ্ছে। আমিতো ফরম ও বিনা পয়সায় পুরন করে দিচ্ছি। টাকা চাওয়ার কথপোকথনের ভয়েস রেকর্ড রয়েছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সেটি ও অস্বীকার করে বলেন,ও ভয়েস আমার না।
এ ব্যাপারে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এম এম গোলাম কবীর বলেন, আমি এ বিষয়গুলো জানিনা।আমি লোহাগড়ার বিষয় নিয়ে ব্যস্ত আছি। নড়াইল সদরের ব্যাপারে যারা কমিটিতে আছে তারাই ভালো জানেন।
Be the first to comment on "নড়াইলে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা করতে গিয়ে বিপাকে দপ্তর সম্পাদক"