নিউজ ডেস্ক: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বিদ্যমান জনবল দিয়ে বর্তমানের চেয়ে তিনগুণ বেশি রোগীকে সুচিকিৎসা দেয়া সম্ভব। তবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল থাকলেও অবকাঠামো সংকটে হাসপাতালে ভর্তি রেখে অতিরিক্ত রোগীকেও চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। জাগো নিউজের এ সংবাদদাতার সঙ্গে একান্ত আলাপকালে বিএসএমএমইউ’র ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান এসব কথা বলেন।
ভিসি হিসেবে দায়িত্বপালনে অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খানের এক বছর পূর্তি হচ্ছে আজ (বৃহস্পতিবার)। গত বছরের ২৪ মার্চ বিএসএমএমইউ’র ভিসি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।
গত এক বছর ভিসির দায়িত্বপালনকালে হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে রোগীদের সন্তুষ্টি নিয়ে বাড়ি ফেরাকে সেরা সাফল্য হিসেবে মনে করেন। অপরদিকে ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালে এখনও পূর্ণাঙ্গ জরুরি বিভাগ চালু করতে না পারায় তাকে খুবই পীড়া দেয় বলে জানান।
অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন আউটডোরে পাঁচ থেকে সাত হাজার রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। আউটডোর ছাড়াও দেড় হাজার বেডের এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের প্রায় সকলেই চিকিৎসা শেষে পূর্ণ সন্তুষ্টি নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় থেকে শুরু করে চিকিৎসা সেবার সঙ্গে জড়িত সকলেই আন্তরিকতার সঙ্গে রোগীদের সেবা প্রদান করছেন।
অধ্যাপকরা সন্ধ্যার পর নিয়মিত রাউন্ড দেন, নার্সরা রোগীদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলেন। এমনকি নিজ হাতে ওষুধ খাইয়ে দেন। প্রায় প্রতিদিনই হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড রাউন্ডের সময় ব্যক্তিগতভাবে রোগীদের সঙ্গে কথা বলে এ অনুভূতির কথা জানতে পারেন বলে জানান তিনি।
সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর জাতির পিতার নামে দেশের একমাত্র এ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণার উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে প্রথমেই হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা প্রদানের পরিবেশ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, নির্ধারিত সময়ে অফিসে আসা, শিক্ষক ও ছাত্রের সম্পর্কন্নোয়ন, নার্সদের হাসিমুখে রোগীদের সেবা প্রদানের বিষয়ে অধিক নজর দেয়া হয়।
তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক মান্নোয়নে শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে একাধিকবার পৃথকভাবে বৈঠক করে সমস্যা চিহ্নিত ও তা সমাধানে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না রেখে বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে বিভাগের সার্বিক উন্নয়নে কী কী করা সম্ভব সে সম্পর্কে পরিকল্পনা এবং সেই মোতাবেক বাস্তাবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
প্রশাসনিক উদ্যোগ
ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান জানান, চিকিৎসা সেবার মান্নোয়নে গত এক বছরে ডীন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা কর্মচারী ও নার্সদের সঙ্গে একাধিক বার মতবিনিময়ের মাধ্যমে চির্কিৎসা সেবায় গুণগত পরিবর্তন এসেছে। নার্সরা এখন নিজ হাতে ওষুধ খাওয়ানোসহ যত্নের সঙ্গে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা সেবার তথ্যসমূহ সাধারণ রোগীরা যাতে সহজেই পেতে পারেন সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালের প্রবেশ দ্বারগুলোতে (গেটসমূহে) তথ্য ও অভ্যর্থনা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম প্রত্যক্ষভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য বন্ধের দিনসহ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত রাউন্ড দেয়া হয়। এমনিক অফিস সময় বেলা ২টা ৩০মিনিট পর্যন্ত হলেও অধিকাংশ দিন রাত ৮টা পর্যন্ত অফিসে থাকেন তিনি।
রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত ও সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখতে সকল শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কার্মচারীদের অফিস সময় সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটার পরও সেবা কার্যক্রম ২৪ ঘণ্টা নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া নার্সদের সেবার মান ও দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও অ্যান্টিবায়োটিকের যথাযথ ব্যবহার উৎসাহিত করার লক্ষ্যে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গাইডলাইনের দেশে প্রথম অনলাইন ভারশন উদ্বোধন করা হয়।
চিকিৎসা সেবা উন্নয়নে পদক্ষেপ
ভিসি জানান, সার্বিক ব্যবস্থাপনা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায় থেকে সার্বক্ষণিক নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ, কেবিন ব্লকে রোগীদের সুবিধার্থে জরুরি বিভাগের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন, প্রবীণদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে জেরিয়াট্রিক মেডিসিন উইং চালু, মুমূর্ষু রোগীদের জন্য কেবিন ব্লকে ৩৭ শয্যাবিশিষ্ট আইসিইউ ও এইচডিইউ, নবজাতকদের জন্য ৩১ শয্যাবিশিষ্ট অত্যাধুনিক এনআইসিইউ চালু করা হয়।
এছাড়া বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের ল্যাব পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা, চর্মরোগ বিষয়ক ওটির উদ্বোধন, শিশু কিডনী বিভাগে অত্যাধুনিক আলট্রাসনোগ্রাফী ও রেনাল বায়োপসি মেশিন উদ্বোধন করা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সুচিকিৎসার জন্য মুক্তিযোদ্ধা সেল গঠন, পুরাতন টিনশেড আউটডোরে ১৮ শয্যাবিশিষ্ট রিহ্যাবিলিটেশন মেডিসিন ওয়ার্ড চালু করা হয়।
রোগীদের সুবিধার্থে বহির্বিভাগ ২নং ভবনে প্রথমবারের মতো ডে কেয়ার ওটির উদ্বোধন, বিশ্ব দৃষ্টি দিবস উপলক্ষে শতাধিক রোগীর বিনামূল্যে চোখের দৃষ্টি পরীক্ষা ও চশমার পাওয়ার নির্ধারণ, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধীনে রোগীদের সুবিধার্থে জরুরি মেডিসিন শাখা চালুর উদ্যোগ নেয়া, বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে র্যা লি, রোগীদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন, এইডস আক্রান্ত মা ও শিশুদের সেবায় বিএসএমএমইউ’র পিএমটিসিটি প্রকল্পের সফল কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়াও রিউমাটোলজি স্পেশালাইজড ক্লিনিক, দিনব্যাপী ফ্রি গ্লুকোমা স্ক্রিনিং ক্যাম্প ও দিনবাপী শিশুদের কিডনী রোগ নির্ণয়ে ফ্রি স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম উদ্বোধন করা হয়।
চিকিৎসা শিক্ষায় উদ্যোগ
অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান জানান, দায়িত্ব গ্রহণ করার পর চিকিৎসা শিক্ষার অংশ হিসেবে রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম ফেইজ এ-এর ভর্তি পরীক্ষা কোনো ধরণের অভিযোগ ছাড়াই অত্যন্ত সুষ্ঠু, সুন্দর ও স্বচ্ছভাবে যথাযথ নিয়মে সম্পন্ন ও দ্রুততার সঙ্গে ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
প্যাডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি, প্যালিয়েটিভ মেডিসিন চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডলসেন্ট মেন্টাল হেলথ এবং ও প্যাডিয়াট্রিক নিউরোলজি অ্যান্ড নিউরো-ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক এমডি রেসিডেন্সিসহ বর্তমানে ৮৯টি পোস্ট গ্রাজুয়েট বিষয় (এমডি-৩৪টি, এমএস-২২টি, এমপিএইচ-৮টি, এমফিল-১১টি, ডিপ্লোমা-১৪টি) চালু রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, ইন্সটিটিউশনের সংখ্যা ৩৮টি।
নিয়মিত মাসিক সেমিনারের আয়োজন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অ্যাপলিকেশন অফ অ্যাডভান্সড টেকনোলজি ইন বায়োমেডিকেল রিসার্স’ বিষয়ক সেমিনার, ‘সাইবার নিরাপত্তা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক সেমিনার, বিশ্ব হেড-নেক ক্যান্সার দিবস-২০১৫ উপলক্ষে সিম্পোজিয়াম, কার্ডিয়াক সার্জারি বিষয়ক সেমিনার, ইলেকট্রনিক মেডিকেল রেকর্ড কিপিং : টুওয়ার্ডস এ পেপারলেস হসপিটাল শীর্ষক কনফারেন্স, বিশ্ব ক্যান্সার দিবস উদযাপন করা হয়েছে।
গবেষণামূলক কার্যক্রম
অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা, শিক্ষা জনস্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষণামূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর গবেষণা কার্যক্রমকে উৎসাহিত ও জোরদার করার উদ্যোগ নিয়েছে। তন্মধ্যে অ্যাডভান্স রিসার্চ প্রোগ্রামের আওতায় ২৭ জন শিক্ষককে গবেষণা মঞ্জুরি প্রদান, বিভিন্ন অনুষদের থিসিস পার্টে অধ্যয়নরত ১১৭ জন শিক্ষার্থীর মাঝে থিসিস গ্রান্ট বিতরণ, কানাডার নভেল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, নন কমিউনিকেবল ডিজিসেস-এর বিষয়ে সহায়তার জন্য জাপানের নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও অস্ট্রেলিয়ার নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটির মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর (প্রক্রিয়াধীন)।
এছাড়া নবজাতকদের চিকিৎসা সেবায় সহায়তা নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিসেফ-এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে।
সূত্র: জাগো নিউজ
Be the first to comment on "বিএসএমএমইউয়ে আরো তিনগুণ রোগীকে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব"