নিউজ ডেস্ক ॥ দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে নড়াইলের লোহাগড়ায় কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে ছাত্র-জনতা। এসময় লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাঞ্চন কুমার রায়’র নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জন পুলিশ সদস্যের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের প্রায় দুই শতাধিক নেতা কর্মীরা দেশীয় অস্ত্র, রাম-দা, ছ্যান-দা, ধারালো ছোরা ও লাঠি-সোটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। এ সময় নিরস্ত্র ছাত্র-জনতা আতংকিত হয়ে দিক বিদিক ছুটে বিভিন্ন বাড়ি ও দোকানঘরে আশ্রয় নেয়। অস্ত্রধারী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নিরুৎসাহিত করতে পুলিশের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। পুলিশ অনেকটা ছাত্রলীগ-যুবলীগের ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিল। তবে বিবেকের তাড়নায় এএসআই আকিজ উদ্দিনকে দেখা যায় ধারালো ছ্যান-দা হাতে থাকা একজন যুবককে তাড়া করতে। গত ৪ আগষ্ট দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে পৌর শহরের কুন্দশী সিএন্ডবি চৌরাস্তায় এ ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নিরস্ত্র ছাত্র-জনতা কুন্দশী চৌরাস্তায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করছিলেন, এমন সময় লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মদিনাপাড়ার মৃত আব্দুল মালেক মুন্সির ছেলে মুন্সি আলাউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক ও জয়পুর গ্রামের মৃত সৈয়দ মোশাররফ হোসেনের ছেলে সৈয়দ মসিয়ুর রহমানের নেতৃত্বে লক্ষীপাশা চৌরাস্তা থেকে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের প্রায় দুই শতাধিক নেতা-কর্মী দেশীয় অস্ত্র রাম-দা, ছ্যান-দা, ছোরা ও লাঠি-সোটা নিয়ে কুন্দশী চৌরাস্তায় অবস্থিত কোটা সংস্কার সমাবেশে হামলা করে। এ সময় অধিকাংশ হামলা কারির হাতে মারাত্মক ধারালো অস্ত্র দেখা যায়। হামলা কারিদের মধ্যে ছিলেন, নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শিকদার আজাদ রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জুরুল করিম মুন, লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফয়জুল হক রোম, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুর আমীর লিটু, ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল লিয়ন, লক্ষীপাশা গ্রামের মৃত মহিউদ্দিনের ছেলে ও সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম, পৌর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শরিফুল ইসলাম সরু, লক্ষীপাশা আদর্শ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য শাহারিয়ার আলম শাহীন, শালনগর মডার্ণ একাডেমীর প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান আসাদ, গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার রাতইল আইডিয়াল কলেজের প্রভাষক রণজিত টিকাদার, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল খায়ের (অব:), গোপীনাথপুর গ্রামের মৃত আলতাফ শেখ’র ছেলে মো: ইদ্রিস শেখ, মৃত ইউনুচ শেখের ছেলে ছদরউদ্দিন শামীম ও ছগীরউদ্দিন সনেট, মৃত আজিমউদ্দিন শিকদারের ছেলে বাবু শিকদার, মৃত নিতাই বিশ্বাসের ছেলে নিরঞ্জন বিশ্বাস, শাহাদত খা’র ছেলে জাহিদ খাঁ, করফা গ্রামের আল হেলাল মিয়া, ইতনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আহাদুজ্জামান আহাদ, চাচই গ্রামের মহশীন মিয়া, জাহিদুর ইসলাম, বুড়িখালী গ্রামের মৃত আজিজার শিকদারের ছেলে মিজান শিকদার, লক্ষীপাশা ইউপি সদস্য জিরু কাজী, খলিশাখালী গ্রামের মৃত গোলাম মিয়ার ছেলে এম এম রাশেদ হাসান, তালবাড়িয়া গ্রামের শওকত খান’র ছেলে ফজল খান তানভীর, দিঘলিয়া নোয়াগ্রামের ওয়াদুদ মিয়ার ছেলে আবু সাঈদ মিয়া, ঈশানগাতী গ্রামের রেজাউল করিম’র ছেলে ইমাম হাসান, লোহাগড়া কলেজ পাড়ার রফিক খান, কামাল প্রতাপ গ্রামের জাহিদুল ইসলাম,পার-শালনগর গ্রামের লিটন মিয়া, নোয়াগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মুন্সি জোসেফ হোসেন, মল্লিকপুর ইউপি সদস্য আল-আমীন ঠাকুর, সাবেক সদস্য উজ্জল ঠাকুর, চাঁচই গ্রামের মৃত বাহাদুর শিকদারের ছেলে শিকদার শাহাবুদ্দিন সাবু, মঙ্গলহাটা গ্রামের বাবুল মুসল্লি, মো: নবীর হোসেন, লোহাগড়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও গোপীনাথপুর গ্রামের টুকু খা’র ছেলে মোজাম খা, লোহাগড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক সজিব মুসল্লী, শালনগর ইউপি সদস্য সাজ্জাদ হোসেনসহ প্রায় দুই শতাধিক নেতা-কর্মী।
ধারালো অস্ত্র ও লাঠি-সোটার সামনে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতা টিকতে না পেরে প্রাণভয়ে পালিয়ে যাওয়ায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটে নাই।
লোহাগড়া থানার দায়ীত্বপ্রাপ্ত ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ওই দিন তিনি অন্য ষ্টেশনে দায়ীত্ব পালন করেছেন, বিষয়টি তিনি জানেন না।
Be the first to comment on "লোহাগড়ায় কোটা সংস্কার আন্দেলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা"