নড়াইল প্রতিনিধি॥ নড়াইল আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ঘুষ দুর্ণীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে। অনেকটা প্রকাশ্যেই চলে ঘুষ দুর্ণীতির কারবার। ঘুষ কার্যক্রম নির্বিগ্মে করতে সহকারী পরিচালক অরুপ রতন চাকী গড়ে তুলেছেন দালাল চক্র। তিনি যোগদানের পর হতে অফিসে চরম দুর্ণীতি অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্য শুরু হয়েছে। তিনি কাউকে তোয়াক্কা করেন না। পাসপোর্ট প্রত্যাশী কোন লোক সরাসরি আবেদন জমা দিতে গেলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। নানা রকম প্রশ্ন ও আপত্তিকর কথা বলে নাজেহাল করেন। এমনকি নানা অজুহাতে আবেদন ফরম জমা না নিয়ে ফিরিয়ে দেন। এ অফিসে ঘুষ দুর্ণীতি অনেকটা ওপেন সিক্রেট ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। বেশির ভাগ ঘুষ তিনি দালালের মাধ্যমে নেন। অনেক সময় অফিসের কর্মচারী ভুষণ’র মাধ্যমেও লেনদেন করে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে প্রতিটি পাসপোর্ট হতে দেড় থেকে দু’ হাজার টাকা ঘুষ নেয়া হয়। পরিস্থিতি ও সুযোগ বুঝে আরোও বেশি টাকা নেয়ার অভিযোগও রয়েছে। কোন জনপ্রতিনিধি বা ঘুষ নিতে পারবেন না এমন লোক দেখলেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। ঘুষের লেনদেনে সহযোগিতা না করায় তিনি দু’জন কর্মচারীর সাথে অসৌজন্যমূলক আচরন করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজ হাতে ফরম জমা নেন। অফিসে যাওয়া মাত্রই পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের সুকৌশলে দালালের কাছে পাঠান। আবেদন ফরম জমা দিতে গেলে নানা রকম ভুল ধরে ফিরিয়ে দেন। ওই আবেদন ফরম দালালের মাধ্যমে ঘুষ দিয়ে জমা দিলে জমা নেন। টাকা না দিলে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের নানাভাবে হয়রানী করা হয়। এমনকি অশোভন আচরন করেন। এ পর্যন্ত তার অফিসে গিয়ে সাংবাদিক, এ্যাডভোকেট, জন প্রতিনিধি, সরকারি চাকুরীজীবী সহ অনেক সম্মানীয় লোক অসম্মানিত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার (২৯ মার্চ) নড়াইল পৌরসভার ভওয়াখালী গ্রামের ফিরোজা বেগমের পাসপোর্ট আনতে যান তার ছেলে শামীম। তাকে বলা হয় পাসপোর্টের মালিক ছাড়া অন্য কারও হাতে পাসপোর্ট দেওয়া হবে না। এসময় শামীম জানায় তার মা মরাত্মক অসুস্থ। খুলনা আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি। একথা বলে সে অনেক কাকুতি মিনতি করলে তার নিকট পাসপোর্ট দেওয়া বাবদ ঘুষ দাবী করেন সহকারী পরিচালক অরুপ রতন চাকী। শামীম টাকা অস্বীকৃতি জানালে তাকে পাসপোর্ট ন দিয়ে রুম থেকে বের করে দেন। ঘটনাটি শামীম তার আত্মীয় নড়াইল পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর বিশ্বাসকে জানান। মেয়র জাহাঙ্গীর বিশ্বাস তাৎক্ষনিক পাসপোর্ট অফিসে যান। তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে সহকারী সহকারী পরিচালক অরুপ রতন চাকীকে পাসপোর্টটি দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। মেয়রকে বসতে না দিয়েই তাঁর মুখের উপর ঔদ্ধত্যের সাথে বলেন “মেয়র ফেয়র কারো কথায় কিছু হবে না, অফিস চলবে আমার ইচ্ছায়।” মেয়রের সাথে থাকা অন্যরা কথা বলতে গেলে তাদেরকেও ধমক দেন। এমনকি নড়াইল পৌরসভার বার বার নির্বাচিত জনপ্রিয় কাউন্সিলর শরফুল আলম লিটু’র সাথেও অশোভন আচরন করেন। এ বিষয়ে জানার জন্য মেয়রের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, প্রায়ই বিভিন্ন লোকজন এসে পাসপোর্ট অফিসে হয়রানি ও ঘুষ দূর্ণীতির কথা বলেন। শামীম আমার নিকট আত্মীয় হওয়ায় তার মায়ের পাসপোর্টটি শামীমের কাছে দেয়ার সুপারিশ করতে গিয়ে তার স্বরূপ বুঝতে পারলাম। প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারীর এহেন আচরন অত্যন্ত দুঃখজনক। পাসপোর্ট অফিস একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। সেখানে সাধারণ মানুষের হয়রানি কারো কাম্য নয়। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, এ্যাডভোকেট উত্তম কুমার ঘোষ পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাজে গিয়ে তার নিকট চরমভাবে হয়রানি ও হেনস্তা হয়েছেন। একই অভিযোগ জেলা পরিষদের সদস্য নাজনীন সুলতানা রোজীর। তিনি পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাজে গিয়ে চরমভাবে অসম্মানিত হয়েছেন। একইভাবে দৈনিক বনিক বার্তা’র নড়াইল জেলা প্রতিনিধি ইমরান হোসেন ঐ অফিসে আত্মীয়ের পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাজে গিয়ে অপদস্ত হয়েছেন। কলেজ শিক্ষক শেখ আকিদুল ইসলাম জানান, তার একাধিক আত্মীয় পাসপোর্ট করতে গিয়ে চরমভাবে হয়রানি হয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ অফিসের দু’জন কর্মচারী জানান, প্রতি মাসে স্থানীয় প্রশাসনের দু’জন পদস্থ কর্মকর্তাকে অনারিয়ামের নামে দুটি খামে ১০ হাজার করে টাকা দেন। ঐ দুই কর্মকর্তার সাথে আর্থিক লেনদেন থাকায় তিনি কাউকেই তোয়াক্কা করেন না। এদিকে সহকারী পরিচালক অরুপ রতন চাকী’র এহেন আপত্তিকর আচরণে বিচার দাবী করেছেন নড়াইল পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলরবৃন্দ।সচেতনমহল ঘুষখোর এ কর্মকর্তার প্রত্যাহার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। সহকারী পরিচালক অরুপ রতন চাকী’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। পরে সেটা ঠিক হয়ে গেছে।
Be the first to comment on "নড়াইল পাসপোর্ট অফিসের পরিচালকের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ"