শিরোনাম

মানবতার কোমরে দড়ি

মানবতার কোমরে দড়ি

নিউজ ডেস্ক ॥ ২১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও। এরইমধ্যে হাজার হাজার বার শেয়ার হয়েছে। মা-মেয়ের কোমরে দড়ি। তাদের ঘুরানো হচ্ছে এলাকায়। আশপাশে শ’ শ’ উৎসুক মানুষ। একপর্যায়ে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় চেয়ারম্যান অফিসে। নিষ্ঠুর, অমানবিক এক দৃশ্য।
প্রখ্যাত সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ বহু আগে লিখেছিলেন, সত্য বাবু মারা গেছেন। সেসময় বা তার আগে পরে মানবতাও যে মারা গেছে তা একেবারেই স্পষ্ট।
অথচ সংবিধানে, আইনে কত সুন্দর সুন্দর কথাই না লেখা আছে। কাউকে নিষ্ঠুর, অমানবিক সাজা দেয়া যাবে না। এটা বলে নেয়া ভালো, মা-মেয়েসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গরু চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। আইনের শাসনের দাবি হচ্ছে, আইন আইনের গতিতে চলবে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে, বিচার হবে। এতেতো নিশ্চয়ই কারো আপত্তি থাকার কথা নয়।

কিন্তু বহুক্ষেত্রে আমরা দেখছি, পাবলিক কোর্টে নানা রকম অমানবিক দণ্ড দেয়া হচ্ছে মানুষকে। এটা এদেশে চলে আসছে বহুকাল। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষ সভ্যতার পথে হাঁটছে না। বরং তাদের একটি অংশ দিনকে দিন হয়ে উঠছে আরো অমানবিক, নিষ্ঠুর। স্কুলে সন্তানের ভর্তির খবর নিতে যাওয়া মা’কেও কী অবলীলায় তারা পিটিয়ে মেরে ফেলেন। সন্তানেরা যে সারা জীবন তার মাকে আর খুঁজে পাবে না সে কথাটা একবারও হত্যাকারী মানুষগুলো বা অমানুষগুলোর মনে আসে না। এটি একমাত্র বা শেষ ঘটনা নয়।

ট্র্যাজেডি হচ্ছে এই অমানবিক এবং নিষ্ঠুরতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয় সাধারণ আমজনতার ক্ষেত্রে। যারা হাজার কোটি টাকা চুরি করেন তাদের ক্ষেত্রে আপনি এমনটা ঘটতে দেখবেন না। তাই বলে তাদের ক্ষেত্রেও আইনের কোনো অমানবিক প্রয়োগ সমর্থন যোগ্য নয়। প্রতিটি এবং প্রত্যেকটা মানুষের ওপর আইনের সমপ্রয়োগই কেবল পারে পরিস্থিতি পাল্টাতে। না হয় ক্রসফায়ারে আপনি হয়তো হাততালি দিবেন, মিষ্টি বিতরণ করবেন, কিন্তু পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হবে না। বরং সন্ত্রাসীদের ক্রসফায়ার দিতে গিয়ে আপনি কখনো কখনো আইনকেও ক্রসফায়ারে ফেলে দিতে পারেন। হত্যার শিকার হতে পারেন নিরীহ, নিরাপরাধ মানুষও। ইনসাফের অনুপস্থিতি মানুষকে ক্রমশ অমানবিক করে তোলো।

আশার কথা হচ্ছে মা-মেয়েকে কোমরে দড়ি বেঁধে নির্যাতনের ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। এই নিষ্ঠুরতায় জড়িতরা আইনের আওতায় আসুক সে দাবি ওঠেছে সর্বত্র। আওয়াজ ওঠেছে অমানবিকতার বিরুদ্ধে। এ আওয়াজ তোলার গুরুত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ভারতের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী প্রশান্ত ভূষণ। অবমাননার অভিযোগে হয়তো আদালতের দণ্ড অপেক্ষা করছে তার জন্য। কিন্তু কী সাহসিকতার সঙ্গেই না তিনি উচ্চারণ করেছেন, কাল বাঁচতে হলে আজ সরব হতেই হবে।

Print Friendly, PDF & Email
basic-bank

Be the first to comment on "মানবতার কোমরে দড়ি"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*