নিউজ ডেস্ক ॥ নড়াইলের লোহাগড়ায় প্রাইভেট পড়ানোর অভিযোগে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সামনে তিন শিক্ষকের হাতে হাতকড়া পরিয়েছে পুলিশ। পরে মুচলেকায় মুক্তি পেয়েছেন ওই শিক্ষকরা।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৯মার্চ) সকাল ৭ টার দিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হামিদ ভুইয়ার নেতৃত্বে কাশিপুর এসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, লোহাগড়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এসএম হায়াতুজ্জামান, চাঁচই-ধানাইড় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদুজ্জামান ঠান্ডু, লাহুড়িয়া হাজ্বী মোফাজ্জেল স্বরণী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোরাদ হোসেন, লক্ষীপাশা আদর্শ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম, রাম নারায়ন পাবলিক লাইব্রেরীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক আখিদুল ইসলাম ও লোহাগড়া থানার এস আই জিয়াউর রহমানসহ সংগীয় পুলিশ অভিযান চালিয়ে লক্ষীপাশা বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক বিলাশ কুমার সাহা, চালিতাতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক উত্তম কুমার দাশ ও দিঘলিয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক কাজী ইকবাল হোসেনকে পৌর এলাকার লক্ষীপাশা, মদিনা পাড়া ও পোদ্দার পাড়ার পৃথক তিনটি স্থানে প্রাইভেট পড়ানোর অভিযোগে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুকুল কুমার মৈত্র মুচলেকা আদায় করে মুক্তি দেন ওই শিক্ষকদের।
এ দিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সামনে মানুষ গড়ার কারিগর বলে খ্যাত শিক্ষকদের হাতে হাতকড়া দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক শিক্ষার্থী জানান, করোনা ভাইরাসের কারনে বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। বিদ্যালয় খুললে এর প্রতিবাদে তারা আন্দোলন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পৌর এলাকার পোদ্দার পাড়া গ্রামের গনেশ রায় ও বিশ্বনাথ রায় বলেন, শিক্ষক উত্তম কুমার দাশ কোন প্রাইভেট পড়াচ্ছিলেন না। কোন শিক্ষার্থীও ছিলনা। ওই শিক্ষককে পুলিশ হাত কড়া পরিয়ে নিয়ে যায়। তবে তারা শুনেছেন অপর দু’টি স্থানে শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। তাদের সামনে পুলিশ শিক্ষকদের হাতকড়া পরিয়ে অসম্মানজনক ভাবে থানায় নিয়েছেন।
এ বিষয়ে কথা হয়, লোহাগড়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী বর্ন্যা খানম,রোল নম্বর-১ ও একই শ্রেণীর নাঈমা খানমের সাথে। তারা এই প্রতিবেদককে বলেন, আজ তাদের শিক্ষক উত্তম স্যার প্রাইভেট পড়ান নাই। করোনা ভাইরাসের কারনে প্রাইভেট পড়া বন্ধ বলে বাড়ির উঠান থেকে ছুটি দিয়েছেন। সরকার পরবর্তি নির্দেশ দিলে ফোনের মাধ্যমে তাদের তিনি জানিয়ে দিবেন।
লোহাগড়ার একাধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,সরকারের সিদ্ধান্ত কোন শিক্ষক অমান্য করলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেন। শিক্ষার্থীদের সামনে শিক্ষকের হাতে হাতকড়া পরিয়ে থানায় নিয়ে গোটা শিক্ষক সমাজকে অপমানীত করেছে। কতিপয় স্বার্থান্বেষী শিক্ষক পুলিশের সহায়তা এমন জঘন্য কাজ করেছে । ওই সকল শিক্ষক তাদের হীন মানষিকতা চরিতার্থ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লোহাগড়া থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন,তারা শিক্ষকদের হাতে হাতকড়া পরাতে ইচ্ছুক ছিলেন না। তাদের সাথে থাকা অপর শিক্ষকদের অনুরোধে হাতকড়া পরিয়েছেন। তবে অভিযানের অংশ হিসেবে অন্য শিক্ষকদের সাথে থানায় হাজির হলেও পোদ্দার পাড়ার অভিযানে একটু দুরে ছিলেন, লোহাগড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম হায়াতুজ্জামান।
এ ঘটনায় শিক্ষক উত্তম কুমার দাশ হাতকড়া পরানোর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, প্রশাসন চাইলে অনেক কিছুই করতে পারেন। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি তার পোদ্দার পাড়াস্থ নিজ বাড়িতে ছিলেন। তিনি প্রাইভেট পড়ান নাই। করোনা ভাইরাসে প্রাইভেট বন্ধে সরকারের দেওয়া সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের জানানোর জন্য ছিলেন। এখানে কোন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি পায় নাই। কোন শিক্ষার্থী ভুল করে প্রাইভেট পড়তে এলে তাকে জানানোর জন্য তিনি ছিলেন। তবে বিলাশ কুমার সাহা ও কাজী ইকবাল হোসেনকে ফোনে পাওয়া যায় নাই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুকুল কুমার মৈত্র বলেন , সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার অংশ হিসেবে আমাদের দেশেও করোনা ভাইরাসে সংক্রমন করায় সরকার সমস্ত স্কুল কলেজ বন্ধ এবং কোচিং ও প্রাইভেট পড়ানো বন্ধসহ বিভিন্ন নির্দেশনার ঘোষনা দিয়েছেন। তার অংশ হিসেবে এ অভিযান। তবে তিনিও একজন শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষকের হাতে হাতকড়া পরানোর বিষয়টি দুঃখ জনক। বিষয়টি তিনি জানেন না।
Be the first to comment on "লোহাগড়ায় শিক্ষার্থীর সামনে শিক্ষকদের হাতকড়া ॥ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ"