নিউজ ডেস্ক ॥ উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের সাহাপাড়ার পরিবেশ-পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। সেখানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ভাংচুর হওয়া মন্দির ও পোড়া ঘর মেরামত করা হয়েছে। প্রাণ ফিরে পেয়েছে দিঘলিয়া বাজারটি। এলাকায় পুলিশ নিয়মিত টহল দিচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা পরিদর্শনে যাচ্ছেন। নিজেদের স্বাভাবিক যোগাযোগ ও কর্মচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে নারী-পুরুষেরা,পাড়ার শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে শুরু করেছে।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) কে কটূক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার একটি অভিযোগকে কেন্দ্র করে গত ১৫ জুলাই সন্ধ্যার পর দিঘলিয়া বাজার ও সাহাপাড়ার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর ও দোকানপাট ও মন্দিরে হামলা হয়। এ সময় ভাংচুর করা হয় দু’টি মন্দির, ছয়টি দোকান, একটি বসতঘর এবং একটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
বুধবার (২৭ জুলাই) দুপুরে সাহাপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, পাড়ার নারী-পুরুষেরা স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরেছে। তারা একে অন্যের বাড়িতে যাচ্ছেন। খোঁজ-খবর নিচ্ছে পাড়া-প্রতিবেশীদের। আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ দিপালী সাহার বাড়ির ঘরটি সরকারী ভাবে নতুন টিন দিয়ে মেরামত করা হয়েছে। মেরামত করা হয়েছে ভাংচুর হওয়া মন্দির দু’টি। ঘটনার পর দিঘলিয়া বাজারের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। দু’তিন দিন পর ফের দোকানপাট খুলতে শুরু করে। বর্তমানে বাজারটি প্রাণ ফিরে পেয়েছে। বাজারে আগত ক্রেতা-বিক্রেতারা আগের মতোই কেনা-বেচা করছেন।
সাহাপাড়ার বাসিন্দা দিপালী সাহার (৬০) বাড়িতে দেয়ালঘেরা টিনের চালার দুটি বসতঘর। দিপালী সাহার ছেলে গোবিন্দ সাহা দিঘলিয়া বাজারের ফুটপাতে পান বিক্রেতা। হামলার দিন দরিদ্র ওই পরিবারের একটি ঘরের মালামাল ও টিনের চালা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ঘরটি নতুন টিন দিয়ে সরকারি ভাবে মেরামত করা হয়েছে।
দিপালী সাহা বলেন, ‘ঘরটির চালা নতুন হয়েছে, কিন্তু ঘরের মালামাল তো সব পুড়ে গেছে সেদিন। তবে এখন ভয় লাগছে না। সব কিছু স্বাভাবিক হয়েছে।
একই পাড়ার ডলি সাহা বলেন, ‘আমরা দান চাই না। ভালোভাবে থাকতে চাই। আগের মতো মিলেমিশে শান্তিতে বসবাস করতে চাই। যা ঘটার ঘটেছে। এখন সবাই যেন ভালো ভাবে থাকতে পারি, আগের মতো চলাফেরা করতে পারি, শুধু এটুকুই চাওয়া’।
তিনি আরও বলেন, ‘পাড়ার নারী-পুরুষ সবাই বাড়িতে ফিরেছে। প্রতিদিনই বড় বড় লোকজন এখানে আসছেন। পুলিশ ও প্রশাসন টহল দিচ্ছে। এখন সমস্যা মনে হচ্ছে না।
সাহাপাড়ার রাধাগোবিন্দ মন্দিরের সভাপতি শিবনাথ সাহা গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ি, মন্দির ও দোকানের তালিকা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন ও সরকারের তরফ থেকে তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। দিঘলিয়া বাজারটি আগের মতো স্বাভাবিক হয়েছে। পুলিশ দিনরাত টহল দিচ্ছে। পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আজগর আলী প্রতিদিনই এলাকায় আসছেন এবং খোজ-খবর নিচ্ছেন’।
এদিকে গত ২৪ জুলাই রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত ব্র্যাক সেন্টার ইনে এক সভায় শিবনাথ সাহার ছেলে হ্যামলেট সাহা ওই রাতের নির্মমতার কথা তুলে ধরেন। এ সময় তিনি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে পাড়ার সব ঘরে ঘরে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন। হ্যামলেট বলেন, ‘আমরা যখন অশোক সাহাকে পুলিশের কাছে দিলাম, যখন তাকে নিয়ে পুলিশ চলে যাচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে ৫ থেকে ৬’শ মানুষ, যাদের অনেককে চিনি, অনেককে চিনি না। এ পাড়ায় আমরা ১০৮ ঘর সাহা থাকি। তারা আমাদের পাড়ার ভেতরে প্রতিটি বাড়িতে ১০-১২ জন করে ঢুকে গেল। প্রতিটি বাড়ির দরজায় তারা কড়া নেড়ে বলেছে, “টাকা দে, না হলে ঘরবাড়ি ভেঙ্গে দেব, পুড়িয়ে ফেলব, তোদের মেরে ফেলব।” যাদের কাছে টাকা ছিল, তারা টাকা দিতে পেরেছেন। তাদের ঘরবাড়ি ভাঙ্গেনি। আর যে বাড়ির লোকজন আগে থেকে পালিয়ে গেছে, সেসব বাড়ি ভেঙ্গেচুরে এবং একটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।’
তবে এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন হ্যামলেটের পিতা রাধাগোবিন্দ মন্দিরের সভাপতি শিবনাথ সাহা। তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘বাড়িতে বাড়িতে যে চাঁদাবাজির কথা শোনা যাচ্ছে, তার কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। হামলা হয়নি আমার বাড়িতে। ঘটনার দিন বিকেলে ১’শ ৫০ থেকে ২’শ বিক্ষুব্ধ মানুষ আমার বাড়িতে এসে অভিযুক্ত আকাশ সাহার বিচার দাবি করে। আমি বিচার দিতে চাইলে তারা তখন ফিরে যায়। তারা আমার সঙ্গে কোন প্রকার খারাপ ব্যবহার বা চাঁদা দাবী করেনি’।
এ ব্যাপারে লোহাগড়া উপজেলা পুজা উদযাপন পর্ষদের সভাপতি প্রবীর কুমার কুন্ডু মদন বলেন,‘ক্ষতিগ্রস্থ সাহাপাড়ার মানুষজন ভীতি কাটিয়ে স্বাভাবিক হয়েছে। সরকারী উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ মন্দির ও বাড়ি মেরামত করা হয়েছে। তারা স্বাভাবিক চলাফেরা শুরু করেছে।
Be the first to comment on "লোহাগড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলা’স্বাভাবিক জীবনে বাসিন্দারা"