নিউজ ডেস্ক : হাওর এলাকায় সৃষ্ট ভয়াবহ আকস্মিক বন্যার প্রায় তিন সপ্তাহ অতিবাহিত হবার পরও এখনো এলাকার হাজার হাজার কৃষক পানির গভীরে তলিয়ে যাওয়া আধা পাকা ধান উদ্ধারে প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এপ্রিলের প্রথম দিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও প্রবল বর্ষণের ফলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে হাওর প্লাবিত হয়ে এলাকার উঠতি বোরো ধান তলিয়ে যায়।
সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়ক দিয়ে যাবার পথে যেকোনো লোকের চোখে পড়বে হাওরের বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে শত শত ছোট নৌকা। দূর থেকে এগুলোকে মাছ ধরা নৌকা মনে হলেও আসলে এ সব মাছ ধরার নৌকা নয়। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পানিতে তলিয়ে যাওয়া আধা পাকা ধান পানির গভীর থেকে সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে। এ সকল লোক এখন বেঁচে থাকার তাগিদে পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া ধান সংগ্রহের চেষ্টা করছে। এ সব লোকের এখন প্রয়োজন তাৎক্ষণিক কাজ এবং খাদ্য।
একজন সিএনজি চালক বললেন, এ সকল নৌকা কোনো মাছ ধরার নৌকা নয়, হাওরের পানিতে তলিয়ে যাওয়া এলাকার একমাত্র কৃষি ফসল ধান উদ্ধারে ব্যবহৃত নৌকা। কৃষকদের বেঁচে থাকার শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে এখন তারা দিশেহারা। তাদের বাঁচার আর কোনো বিকল্প নেই। স্থানীয় লোকরা বাঁশ দিয়ে তৈরি এক ধরনের বিশেষ যন্ত্র নৌকা থেকে পানিতে ছুড়ে মারছে এবং পানির নিচে গলিত আধাপাকা ধান গাছ টেনে তুলছে। এভাবে তারা সারা দিন প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে হয়ত-বা জমির ২০ ভাগ ধান তুলে আনতে পারছেন।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে নিচু অঞ্চলের ৭টি জেলা নিয়ে এই হাওর এলাকা। জেলাগুলো হচ্ছে সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
সরকারি সূত্র জানায়, হাওর অঞ্চলের লোকেরা প্রায় প্রতিবছর কমবেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়। তবে এ বছরের দুর্যোগ ছিল অতীতের স্মরণকালের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভয়াবহ। এ বছর অঞ্চলের সাতটি জেলার ৬২টি উপজেলার প্রায় ৮,৫০,০৮৮টি পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যেই দুই সপ্তাহের ব্যবধানে হাওর এলাকায় দুই দফা পরিদর্শনে গিয়েছেন। এ সময় তিনি ত্রাণ ও নগদ অর্থ বিতরণ করেছেন। স্থানীয় জনগণ বলেন, ধান চাষিরা বিশেষ করে মধ্যবিত্ত চাষিদের জন্য সরকারের বিশেষ ও পরিকল্পিত সহায়তা প্রয়োজন।
মধ্যবিত্ত শ্রেণির একাধিক লোক বলেছে, তারা হাওরের কৃষির মেরুদণ্ডস্বরূপ এবং তাদের সামাজিক মর্যাদা রয়েছে। এ জন্য যেকোনো ধরনের ত্রাণ গ্রহণে তাদের অনীহা রয়েছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, হাওর এলাকায় শস্য আবাদের ধরন বদলাতে হবে এবং অবশ্যই উচ্চ ফলনশীল বোরো ২৮, ২৯ চাষে নিরুৎসাহিত করতে হবে। আকস্মিক বন্যায় এ ধান আবাদ গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর বিকল্প হিসাবে স্থানীয় জাতের প্রচলিত ধান আবাদ করতে হবে পাশাপাশি আউশ ও আমনের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
সূত্র : বাসস
Be the first to comment on "হাওরে পানির নিচ থেকে ধান তুলে আনতে প্রাণান্তকর চেষ্টা কৃষকের"